আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানের মুখে র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করার কথা মঙ্গলবারই জানিয়েছিল সিডিএ।
Published : 03 Apr 2024, 10:28 PM
চট্টগ্রামের টাইগারপাস-সিআরবি অংশে পাহাড়ি সড়ক নষ্ট করে এবং গাছ কেটে কোনো র্যাম্প না করতে সিডিএকে নির্দেশ দিয়েছেন দুই মন্ত্রী।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বুধবার টেলিফোনে চট্টগ্রাম উন্নয়ক কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলীকে এই নির্দেশনা দেন।
আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানের মুখে মঙ্গলবার বিকেলেই মত বিনিময় সভা শেষে র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করার কথা জানিয়েছিল সিডিএ।
এরপর বুধবারই দুই মন্ত্রী টেলিফোন করে সিডিএকে ওই পরিকল্পনা বাদ দিতে বলেন।
নির্দেশনার বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ক্লিয়ার মেসেজ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাহাড় কেটে ও পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো র্যাম্প নামানো যাবে না। গাছ কাটা পড়লে র্যাম্প নির্মাণ না করতে বলেছেন তিনি।
“পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ও আমাকে ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, গাছ কেটে এবং দ্বিতল সড়ক নষ্ট হয়, এমন কোন কিছু করা যাবে না। দুই মন্ত্রীই বলেছেন দ্বিতল সড়কের সৌন্দর্য্য নষ্ট করা যাবে না।”
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “সিআরবি এলাকায় যত শতবর্ষী গাছ আছে একসাথে এত শতবর্ষী গাছ বাংলাদেশের কোথাও নেই। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনের সময় আমিই প্রথম সিডিএ’র পক্ষে বলেছিলাম, আমরা শতবর্ষী গাছ কেটে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেব না।
“এখানকার এই অনন্য পরিবেশ নষ্ট করতে দেব না। আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। সেটা পরে সবার সাথে বসে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।”
এরআগে রোববার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে টাইগারপাস-সিআরবি অংশে দ্বিতল সড়কের মাঝের ঢালে পিয়ার বসিয়ে এবং শতবর্ষীসহ ৪৪টি গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণে সিডিএ’র পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হয়।
এরপর সোমবার সকাল থেকে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনসহ চট্টগ্রামের সব শ্রেণিপেশার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সিডিএ’র পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে পেরে।
মঙ্গলবার দুপুরে সিডিএ’র বোর্ড সদস্য এবং প্রকল্প পরিচালক ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার বিকেলে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সাথে মত বিনিময় সভায় বসেন আন্দোলনকারীরা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়ে বলেন, টাইগারপাস-সিআরবি সড়কে দ্বিতল সড়ক নষ্ট করে এবং গাছ কেটে কোনো র্যাম্প চট্টগ্রামের মানুষ চায় না। সেটা করতে দেয়া হবে না।
পরে সিডিএ চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা জানান, র্যাম্পের জন্য নতুন করে নকশা প্রস্তাব তৈরি করে ঈদের পর তারা নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই পর্যন্ত র্যাম্প নির্মাণের কাজ স্থগিত থাকবে।
জানতে চাইলে বুধবার সিডিএ’র বোর্ড মেম্বার স্থপতি আশিক ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে সিডিএ’র উচিত পাবলিক হিয়ারিং করে সবার সাথে আলোচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করা। তাহলে অনেক সমাধানের পথ বের হয়ে আসে। শেষ মুহূর্তে জানালে এরকম সমস্যা হয়।
“এর আগে সিডিএ’র আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার করা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। লিংক রোড করার সময় পাহাড় কাটা হয়েছে। এই সড়ক বা ফ্লাইওভারের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু করার আগে সবার পরামর্শ নিলে পরিবেশের ক্ষতি বা অন্য সংকট হয়ত হত না।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রেও একারণেই সংকট হচ্ছে জানিয়ে আশিক ইমরান বলেন, “চলতি মাসে এটি চালুর কথা। টাইগারপাসের এই র্যাম্পটি ছাড়াই সেটি চালু হওয়া ভালো হবে। পরে ট্রাফিক কনজেশনসহ পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
“শহরে এখন ৬০ লাখ মানুষের বাস। ১২-১৫ বছরের মধ্যে তা ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। সব বিষয় মাথায় রেখেই সড়ক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।”
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা চট্টগ্রামের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাম্প থাকছে ১৪টি। এর মধ্যে নিউ মার্কেট-কদমতলি এলাকা থেকে যেসব যানবহান উঠবে সেগুলোর জন্য টাইগারপাস-সিআরবির দ্বিতল সড়কে একটি নির্মাণ করার প্রস্তাব করেছিল সিডিএ।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টি অ্যান্ড কনসালটেশন।
সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, টাইগারপাস থেকে আগ্রাবাদমুখী সড়কে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ থেকে ৪ হাজার যানবাহন চলে করে। একই সময়ে লালখানবাজার থেকে টাইগারপাসমুখী যানবাহন চলাচল করে আড়াই হাজার।
বাকি দেড় হাজার যানবাহন নিউ মার্কেট থেকে টাইগারপাস, আমবাগান থেকে টাইগারপাস, ডিটি রোড থেকে দেওয়ান হাট, কদমতলী থেকে দেওয়ানহাট, কদমতলী থেকে আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড় ও এক্সেস রোড থেকে আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড় হয়ে চলে।
নিউ মার্কেট থেকে টাইগারপাসমুখী গাড়ির একাংশ যাতায়াত করে লালখানবাজার ও আমবাগানমুখী। বাকিগুলো যায় আগ্রাবাদের দিকে। এরমধ্যে অধিকাংশ গণপরিবহন।
সমীক্ষা অনুসারে, এই সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৫০০টি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ গাড়ি হয়ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে। সে হিসেবে ওই সংখ্যা ঘণ্টায় ১০০টির বেশি হওয়ার কথা নয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য টোলের বিনিময়ে গাড়ি চলে। সেখানে এত বেশি সংখ্যায় র্যাম্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপরে এবং নিচের সড়কে যানজটের কারণ হবে।
তারা বলেছেন, জিইসি মোড় ও আগ্রাবাদে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার র্যাম্প আছে। নগরীর নিউ মার্কেট-কোতোয়ালি-কদমতলী অংশে যানবাহন বিকল্প হিসেবে এসব র্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে।
চট্টগ্রামের ‘আইকনিক’ সড়কে শতবর্ষী গাছ কেটে র্যাম্প নামাতে চায় সিডিএ