“মাত্র কয়েক মাসের ভোট। বিএনপি ভোটে নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে ফাইট করার মত অন্য প্রার্থী নেই। এই ভোট নিয়ে অত আগ্রহ নেই,” বললেন একজন ভোটার।
Published : 24 Jul 2023, 09:39 AM
জাতীয় নির্বাচনের পাঁচ মাস বাকি থাকতে চট্টগ্রাম-১০ আসনে যে উপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই হবে মূল ভাবনার বিষয়।
আর এক সপ্তাহ পর আগামী ৩০ জুলাই পৌনে ৫ লাখ ভোটারের এ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
এর আগে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনও ইভিএমে হয়েছিল। তাতে ভোট পড়েছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে উপ নির্বাচন, বিএনপির ভোটে না থাকা এবং গত কয়েক মাসে হওয়া উপ নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনের ভোটের হারের তথ্য মিলিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনেও একই চিত্র দেখা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যান। তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে নগর আওয়ামী লীগ সদস্য ও নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু হয়েছেন নৌকার প্রার্থী।
তার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে আছেন জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) মো. শামসুল আলম, তৃণমূল বিএনপির (সোনালী আঁশ) দীপক কুমার পালিত, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া (ছড়ি) এবং স্বতন্ত্র মনজুরুল ইসলাম ভুঁইয়া (রকেট)।
তাদের মধ্যে সামশুল আলম ও মনজুরুল ইসলাম ভুঁইয়া চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের বাসিন্দা। দীপক কুমার পালিত নগরীর কোতোয়ালির এবং রশিদ মিয়া সুনামগঞ্জ জেলা দিরাই থানা এলাকার ভোটার।
স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর পরিচিতি এবং অনুসারী থাকলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তেমন পরিচিতি নেই।
সবশেষ ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আলী আরাফাত। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম (হিরো আলম) পান ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।
ওই উপনির্বাচনে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন ভোটারের মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৭ জন ভোট দেন। ভোটার উপস্থিতি ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।
তার আগে ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরী ও বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আলম মাহমুদ।
৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন ভোটারের এই আসনে পাঁচ প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৩০৫টি। ভোটের হার ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
জুনে হওয়া সিটি নির্বাচনগুলোর মধ্যে গাজীপুরে ৪৮.৭৬%, বরিশালে ৫১%, খুলনায় ৪৮.১৭ %, সিলেটে ৪৬.৭১ % এবং রাজশাহীতে ৫৬.২০ % ভোট পড়ে। অতীতে এসব সিটিতে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ভোটও পড়েছে।
বিএনপিবিহীন চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই যে মূল বিষয়, সেটা আওয়ামী লীগ নেতারাও স্বীকার করছেন।
৮ জুলাই মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “শুধু কেন্দ্রে জটলা পাকালে হবে না। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে হবে। যদি ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট করতে পারেন, সেটা অনেক ইতিবাচক হবে।
“আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মী সমর্থক। কিন্তু উপ নির্বাচনে দেখা যায়, ভোটের টার্নআউট কম। এটা সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, অবহেলা।”
ওই অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “এ উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে, এটা বাস্তবতা। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি যদি কম হয়, তাহলে সেটার সমালোচনা হবে। বিরোধীরা বলবে ভোটে মানুষের আস্থা নেই। দেশে ৩০০ আসনের মধ্যে দলের সবচেয়ে খারাপ আসনেও ৩০-৩৫% ভোটার আছে। তাহলে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে না কেন।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনী আসন।
মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন।
তাদের মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৮ জন পুরুষ, ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৭ জন নারী এবং ২৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।
ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৬টি। ভোটগ্রহণকক্ষ ১ হাজার ২৫১টি।
১২ জুলাই বিকেল থেকে প্রচার চালিয়ে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে কতটা আশাবাদী হতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু?
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রচারে গিয়ে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এলাকার মানুষ আমাকে অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে গ্রহণ করেছে।
“মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ নিয়ে আমার প্রচারে অংশ নিয়েছে। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে আমি নিবেদন জানিয়েছি, তারা যেন কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ইভিএম সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমার প্রচারে মানুষের অংশগ্রহণের যে ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে, তা বিরল। আশা করি সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি পাব।”
নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৪ দল এবং বিভিন্ন পেশাজীবীরাও প্রচার চালাচ্ছেন। আছে পোস্টার, ব্যানার; চলছে মাইকিং।
অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারের ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি সংসদীয় আসনের নির্বাচনে মাত্র ৫-১০ শতাংশ ভোট হলে তো সমস্যা। ঢাকায় মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। মাত্র ২৪ হাজার ভোট নিয়ে একজন এমপি হয়েছেন। এর দায় কেউ এড়াতে পারে না।
“ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে চাইলেও তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কাজ করে। কেন্দ্র থেকে তাদের কেউ বের করে দেবে কিনা, বা সংঘাত হবে কিনা…। তাই ভোটের দিন ও ভোটের আগের দিন নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে।”
চট্টগ্রাম-১০ আসনের অধীন শুলকবহর, হালিশহর, ডবলমুরিং ও কাট্টলী এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপে বোঝা গেল, ভোট নিয়ে তাদেরও আগ্রহ কম।
সরাইপাড়া এলাকার ভোটার শফিকুল আলম বললেন, “মাত্র কয়েক মাসের ভোট। বিএনপিও ভোটে নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে ফাইট করার মত অন্য প্রার্থী নেই। এই ভোট নিয়ে অত আগ্রহ নেই।”
পাহাড়তলি এলাকার ভোটার মো. রফিক উদ্দিন বলেন, “নৌকার প্রার্থীর লোকজন এসে ভোট চেয়েছে। অন্য কারা ভোটে দাঁড়িয়েছে সেটা জানি না।”
ভোটারদের এই অনাগ্রহের বিষয়টি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিতও খেয়াল করেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ইতিমধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডে প্রচার শেষ করেছি। ইতোমধ্যে এক লাখ ভোটারের কাছে গেছি। ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব আছে। তাই কেন্দ্রে আসার বিষয়ে আগ্রহ কম।
“আওয়ামী লীগের তো ৩৫-৪০ শতাংশ ভোটার আছে। তাদের ভোটাররাও কেন্দ্রে আসে না। আমি ভোটারদের বলছি, আপনারা কেন্দ্রে আসুন। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।”
দীপক বলেন, “এখন পর্যন্ত যতটুকু সাড়া পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশের বেশি ভোটার আসবে না। আমরা চাই ভোট সুষ্ঠু হোক। মানুষ কেন্দ্রে আসুক এবং নির্বাচন অর্থবহ হোক।”
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আমরা সবসময় আশাবাদী। আমরা চাই সব ভোটার কেন্দ্রে আসুক। ভোটের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হচ্ছে।
“আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। ইভিএম নিয়ে ভোটগ্রহণে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। এরপর ভোটারদের ইভিএম বিষয়ে জানাতে প্রচারণা চলবে।”
পুরনো খবর
চট্টগ্রাম-১০: কেন্দ্রে ৫০ শতাংশ ভোটার আনার লক্ষ্য আওয়ামী লীগের
ভোটের হার ১১.৫%: আরাফাত ২৮৮১৬, হিরো আলম ৫৬০৯
চট্টগ্রাম-৮: ভোটের হার ১৪%, বিজয়ী নোমান