"বিএনপিও বুঝতে পেরেছে, শেখ হাসিনাকে সরানো তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়, সেজন্য দেখেন না বেলুন ফুলানোর পর আস্তে আস্তে বাতাস কমে যাচ্ছে।”
Published : 17 Aug 2023, 10:53 PM
বিএনপির আন্দোলনের ‘বেলুনে’ বাতাস ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এলজিইডি মিলনায়তনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, "বিএনপির সাথে এখন আর কোনো বিদেশি শক্তি নেই। তারা মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল, অর্থাৎ আন্দোলনের বেলুনটা ফুলিয়েছিল। পরের দিন আবার ঢাকার প্রবেশমুখ অবরোধ দিয়েছিল, এরপর দেখা গেল বিএনপির আন্দোলনের যে বেলুন ফুলেছিল পরের দিনই তা ফুটে গেছে।
"বিএনপিও বুঝতে পেরেছে, শেখ হাসিনাকে সরানো তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়, সেজন্য দেখেন না বেলুন ফুলানোর পর আস্তে আস্তে বাতাস কমে যাচ্ছে। বিএনপি আন্দোলনের বেলুন আর ফুলাতে পারছে না।"
সে কারণে বিএনপি এখন 'কয়দিন হাঁটা কর্মসূচি, কয়দিন বসা কর্মসূচি, আবার কয়দিন দৌড়ানো কর্মসূচি দিয়ে' তাদের কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "বিএনপির কর্মীরাও জেনে গেছে, বিদেশিদের পদলেহন এখন করে তাদের কোনো লাভ হয় নাই। বিদেশিরাও তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তথাকথিত নিরপেক্ষ সরকার, এগুলোর প্রতি কোনো সমর্থন জানায় নাই।"
তারেক রহমান বিএনপিকে তার একটি 'লাঠিয়াল বাহিনী' হিসেবে ব্যবহার করতে চায় মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, "তাদের নেতাদের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতে চান না তিনি। আগামী নির্বাচনের পর বুঝতে পারবে, এই লাঠিয়াল বাহিনী ছোটো হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নীতি হচ্ছে, যতদিন তিনি ইলেকশন করতে পারবেন না ততদিন বিএনপির কেউ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদেও নির্বাচন করতে পারবেন না।
"বিএনপি এখন আবার ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছেন, নির্বাচনে গেলে তাদের কোনো সম্ভাবনা নাই, এজন্য নির্বাচন বানচাল করার পথ বেছে নিয়েছেন তারা।"
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, "আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব বুঝতে পারবে, তারা নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপির নেতারা অনেকেই নির্বাচন বর্জন করবেন না। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণই হচ্ছে মুখ্য, নির্বাচনে যদি মানুষ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে সেখানে কোন দল অংশগ্রহণ করলো সেটি মুখ্য নয়।
"সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করেছিল, তাদের কোনো নেতাকে ইলেকশন করতে দেয় নাই, এরপরও অনেকে করেছে এবং ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। আমাদের এখানে নির্বাচন বিরোধিতা এবং এত অপপ্রচারের পরও ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।"
জনগণ অংশগ্রহণ করছে কিনা– আগামী নির্বাচনে সেটিই মুখ্য হবে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, "সেখানে বিএনপি নেতারা কিংবা বিএনপি অংশগ্রহণ করল কিনা সেটি মুখ্য বিষয় নয়। কেউ নির্বাচনে আসুক বা না আসুক জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও অবাধ সুন্দর আগামী নির্বাচন হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা পরপর চারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন এই দেশে।”
'জিয়া-মোশতাক অন্যতম কুশীলব'
তথ্যমন্ত্রী বলেন, "জিয়াউর রহমান ও খোন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কুশীলব। আজকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, কিন্তু কুশীলবদের বিচার হয়নি। কারা এই ষড়যন্ত্রের পটভূমি রচনা করেছেন, কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সেগুলো উন্মোচিত হয়নি।
"ইতিহাসের স্বার্থে ভবিষ্যৎ পাঁচশ’ বছর পরের প্রজন্ম যেন জানে কারা বাঙালি জাতির মহানায়ক, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তার হত্যাকাণ্ডের কুশীলব কারা ছিল, সেটি উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন একটি কমিশন হবে, কমিশনের মাধ্যমে কুশীলবদের মুখোশ উম্মোচন করা হবে।"
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মোশতাক বিশ্বস্ত জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন।
“বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক ও রশিদ ১৯৭৬ সালে লন্ডনে এক টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বলেছিল, জিয়াউর রহমানের কাছে তারা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। তখন জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, তোমরা জুনিয়র অফিসাররা এগিয়ে যাও। শপথ অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের দায়িত্ব ছিল, এই ধরনের একটি ষড়যন্ত্র যে হচ্ছে, তা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা। সেটি না করা মানে তিনি ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন।"
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, বিদেশি ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষও জড়িত ছিল। সে কারণে হত্যাকাণ্ডের পর তার রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ উল্লাস প্রকাশ করেছিল এবং তারা হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছিল।
"বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার যুক্তি হিসেবে খুনিরা বলেছিল, তিনি এত জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন, তিনি মানুষকে এত উজ্জীবিত করতে পারেন, তাকে হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না।"
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। উত্তর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, অধ্যাপক মঈনুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বক্তব্য দেন।