বিপিএলের বাইরে শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার পথে একটি বাধার কথা জানিয়ে নাজমুল হাসান বললেন, ‘এটা করলে হলে বিসিবিকেই করতে হবে।’
Published : 06 May 2024, 09:00 PM
ভারতের আছে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি, পাকিস্তানের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার আছে সিএসএ প্রভিশনাল টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশের কোনটি? আপাতত উত্তর, ‘কোনোটিই নয়।’ নানা দেশেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের বাইরে ২০ ওভারের ক্রিকেটে আরেকটি আসর থাকে স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। বাংলাদেশে এমন টুর্নামেন্ট আয়োজনে একটি বাধার কথা বললেন বিসিবি সভাপকি নাজমুল হাসান।
বাংলাদেশের একমাত্র ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এখন বিপিএল। এখানে প্রতি দলের একাদশে বিদেশি ক্রিকেটার থাকে চারজন করে। এছাড়াও খেলে থাকেন দেশের সব বড় তারকা। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোও তারাই পালন করে থাকেন। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জন্য নতুন প্রতিভা উঠে আসার সুযোগ তাই বিপিএলে খুব একটা থাকে না। যারা বিপিএলে সুযোগ পান না, পুরো বছরে এই সংস্করণে একটুও খেলার সুযোগ তাদের নেই। তাই আলাদা একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আলোচনা দেশের ক্রিকেটে অনেক দিনের।
আলাদা টুর্নামেন্ট যে একেবারেই হয়নি, তা নয়। কখনও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে, কখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র সংস্করণের খেলা। কিন্তু কোনোটিই স্থায়ী হয়নি।
টি-টোয়েন্টিতে স্থানীয় ক্রিকেটারদের উন্নতির জন্য ২০ ওভারের ক্রিকেটের আরেকটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের তাগিদ নানা সময়ে কোচ, ক্রিকেটাররা অনেকবারই জানিয়েছেন। প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে-পরে আরও প্রকট হয়ে সামনে আসে এর প্রয়োজনীয়তা।
বিসিবির পক্ষ থেকে কয়েকবার জোর দিয়েই বলা হয়েছে, আরেকটি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজনের চেষ্টা করা হবে। কিন্তু বাম্তবে রূপ পায়নি তা।
আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে, এই সংস্করণের উপযোগী ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য আবার সামনে এলো ভিন্ন একটি টুর্নামেন্টের প্রসঙ্গ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে শিরোপা প্রদান অনুষ্ঠানে এসে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি জানালেন, ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এটিতে আগ্রহী নয়।
“এটা (আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট) করতে হলে বিসিবিকে করতে হবে। কারণ ক্লাবগুলো আগ্রহী হবে বলে মনে হয় না। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিও আগ্রহ দেখাবে মনে হয় না। একটা জিনিস সিম্পল, আমি বলে রাখি। আমাদের দেশে এখনও এই জিনিসটা আছে, জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা না থাকলে, ওই খেলায় তারা আকর্ষণ বা আগ্রহ পায় না। ক্লাবগুলোও না, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলাও না।”
ভারতের আইপিএলের নিলামের ঠিক আগে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি হয়ে থাকে। এছাড়াও তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ, কর্ণাটক প্রিমিয়ার লিগসহ রাজ্যভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোও বেশ মানসম্পন্ন। এই আসরে যারা দারুণ পারফর্ম করেন, আইপিএলের নিলামে তাদের ঘিরেও থাকে অনেক আগ্রহ।
তবে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতা মেলানো যাবে না, বললেন বিসিবি সভাপতি।
“অন্যান্য দেশে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা না থাকলেও কিছু হয় না। আমাদের এখানে যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি বা ক্লাব, তারা আবার জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছাড়া করতে চায় না। আগ্রহ পায় না। তারা মনে করে যে, এটা উপযুক্ত নয়।”
আলাদা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের দাবি মূলত জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের জন্যই। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বিপিএলের বাইরেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি খেলেন নিয়মিত। কিন্তু স্থানীয় অন্য ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতি নিতে হয় জেলা ও বিভাগের নানান অস্বীকৃত টুর্নামেন্ট খেলে। যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এছাড়া তিন সংস্করণে জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচির ব্যস্ততায় এখন আরেকটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাওয়া অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে। নাজমুল হাসানও বললেন সে কথা। তবে আলাদা লিগ করা গেলে তা যে উপকারই হবে, সেটি মানেন বিসিবি সভাপতি।
“ক্রিকেটারদের জন্য আরেকটা আলাদা টি-টোয়েন্টি লিগ করা যেতে পারে। সেটা তো অবশ্যই ভালো হবে। খারাপ কী! কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলার কোনো সুযোগ নেই। এখন ওদের যে সূচি, এটা অসম্ভব। আমি মনে করি, এখনই তাদের ওপর দিয়ে অনেক চাপ যাচ্ছে।”