“এখন ঈদের মৌসুম, প্রতিদিন আমাদের শহরে যাতায়াত করতে হয় মালামাল আনার জন্য; কিন্তু ফেরির জ্যামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে,” বলেন এক ব্যবসায়ী।
Published : 29 Mar 2024, 11:29 PM
কক্সবাজারের পথে রেল চালুর জন্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ অগাস্ট; বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবর থেকে ফের যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। তবে আট মাস পেরোলেও এখনো সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।
সেতুর বিকল্প হিসেবে চালু হওয়া তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি ইতোমধ্যে বিকল হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে কেবল একটি ফেরিতে পারাপার চলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বোয়ালখালী উপজেলার হাজারো মানুষ।
কর্ণফুলীর ওপারের বোয়ালখালীর অনেকেই প্রতিদিন নদী পার হয়ে শহরে আসেন চাকরি বা পেশাগত কারণে। শহর থেকেও অনেকে বোয়ালখালীতে যান নানা কাজে।
একটি ফেরির কারণে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির জট সৃষ্টি হচ্ছে দুই পাড়েই। ফেরিতে ওঠার জন্য আগে যেখানে ৫/১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হত, এখন সেই সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা।
শুক্রবার দুপুরে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন টেম্পো চালক মোরশেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে ফেরি পার হয়ে শহরে গেছিলাম। ফিরে আসার সময় প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে বসে বিকাল ৩টার দিকে পার হয়েছি।
“আবার কয়েক ঘণ্টা জ্যামে বসে রাত ৮টায় পার হয়ে শহরে গেছি। সেদিক থেকে পার হয়েছি রাত সোয়া ১টার দিকে।”
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে।
সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই দুটি ফেরিকে উভয়মুখী চলাচলের জন্য রাখা হয়েছিল, একটিকে রাখা হয়েছিল ‘স্ট্যান্ডবাই’। মাস খানেক আগে থেকেই একটি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ার পর দুইটি ফেরি দিয়ে পারাপার চলছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকল হয়ে যায় আরেকটি ফেরি।
টেম্পো চালক মোরশেদ বলেন, “ফেরি চালু হওয়ার পর গত ছয়/সাত মাসে আমাদের ট্রিপ কমে গেছে। তার ওপর বৃহস্পতিবার থেকে একটি ফেরি চলাচল করছে। সারাদিনে মিলে ট্রিপ (বোয়ালখালী থেকে শহরে আসা-যাওয়া) মারতে পেরেছি দুটি।
“ফেরিতে জ্যাম থাকায় আমাদের রোজগার কমে গেছে। যাত্রীরা ফেরি ঘাটে নেমে পায়ে হেঁটে এসে ফেরি কিংবা নৌকায় পার হয়ে যায়। কিন্তু আমাদেরতো অপেক্ষা করতে হয়। কখন ফেরি পার হব।”
সিফাত নামে আরেক টেম্পো চালক বলেন, “কানুনগোপাড়া থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত আমরা যাতায়াত করি। যাত্রীরা ফেরিতে জ্যাম থাকলেই নেমে যায়। এতে আমাদের মালিকের দৈনিক ভাড়া তোলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।”
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানাচ্ছেন অন্য পেশার মানুষও।
বোয়ালখালী উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, “এখন ঈদের মৌসুম। প্রতিদিন আমাদের শহরে যাতায়াত করতে হয় মালামাল আনার জন্য।
“কিন্তু ফেরির জ্যামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে শহরে গিয়ে ফিরতে ফিরতে বেজে গেছে রাত ১১টা।”
মালামাল না থাকলে নৌকাতেই কর্ণফুলী পার হওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু মালামাল নিয়ে শাহ আমানত সেতু হয়ে আসাটা আমাদের জন্য অনেক খরচের।
“তার ওপর ওদিকে মহাসড়ক, তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আবার গাড়ির রুট পরিবর্তন করলে পুলিশি ঝামেলায়ও পড়তে হয়।”
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি আগে থেকে বিকল ছিল। অপর একটি ফেরির ইঞ্জিনের সার্কিট পুড়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে বন্ধ রয়েছে।
“যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে আমরা চন্দ্রঘোনা থেকে একটি ফেরি সাময়িকভাবে কালুরঘাটে নিয়ে আসছি। আজকের (শুক্রবার) মধ্যেই ফেরিটি পৌঁছাবে বলে আশা করছি। দুইটি ফেরি চলাচল করলে ভোগান্তি কিছুটা কমবে।”
পুরানো খবর: