গত ২২ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে তিনটি গাড়িতে আগুনের প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয় সকালে।
Published : 28 Apr 2024, 10:25 PM
যাত্রীদের দিনভর ভুগিয়ে চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। তবে গাড়িতে আবার হামলা হলে ফের ধর্মঘট শুরুর হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র নিহতের জেরে তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার এই ধর্মঘট ডাকা হয় রোববার।
বিকালে চট্টগ্রামের ডিসির সঙ্গে বৈঠকের পর মালিক-শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন।
বৈঠকে ডিসি পরিবহন মালিক শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা গাড়ি চালান। চুয়েটের সামনে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ পাহারা থাকবে। আপনাদের নিরাপত্তা আমরা দেব। প্রয়োজনে সামনে পেছনে এসকর্ট দিয়ে গাড়িগুলো চুয়েট এলাকা পার করানো হবে।”
বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু পুড়িয়ে দেওয়া তিনটি বাসের ক্ষতিপূরণ, কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত, সড়কে অটো রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।
ডিসি পুড়িয়ে দেয়া গাড়িগুলো জেলা পুলিশকে হেফাজতে নেওয়ার কথা বলে বিআরটিএর সহকারী পরিচালককে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর আশ্বাস দেন।
পরে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন ঐক্য পরিষদ নেতা মঞ্জু।
গত ২২ এপ্রিল বিকালে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজের কাছে ‘শাহ আমানত' পরিবহনের একটি বাস একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়।
এতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন নিহত হন। গুরুতর আহত হন একজন।
এ ঘটনায় চুয়েট শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ঘটনার রাতে একটি এবং পরে আরও দুইটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ এপ্রিল চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে অবশ্য হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার চার দফা দাবিতে চট্টগ্রামসহ ছয় জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
তীব্র গরমে গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অ্যাম্বুলেন্সে করেও যাত্রীরা গন্তব্যে গেছেন। তাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি টাকা লেগেছে।
ডিসির সঙ্গে বৈঠকে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা মঞ্জু বলেন, “ওই সড়কে যদি সোমবার কোনো যানবাহনে পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটে তাহলে আবার ধর্মঘটে যাব আমরা।”
বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি। জবাবে ডিসি বলেন, “আইন আইনের গতিতে চলবে। আপনারা শিক্ষার্থীদের ইমোশনের বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন। আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক।”
চাঁদাবাজির অভিযোগে নানা সময় আটক পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ডিসি বলেন, “সংগঠনের চাঁদা নিতে হলে অফিসে নেন। সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নেয়া যাবে না। প্রয়োজনে লাইনম্যানদের তালিকা দেন।
“তালিকাভুক্ত লাইনম্যানের বাইরে কেউ টাকা আদায় করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, “মামলার যদি কোনো ভিত্তি না থাকে তাহলে অবশ্যই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে আপনারা যেখানে সেখানে টাকা তুলতে পারবেন না।”
বৈঠকে ডিসি বলেন, চুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির তিনটি ছাড়া সাতটি দাবিই বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট।
তিনটি দাবির মধ্যে কাপ্তাই সড়ক প্রশস্ত করার কাজ এক মাসের মধ্যেই শুরু হবে। এখন সড়কটি যথেষ্ট চওড়া না হওয়ায় সেখানে বিভাজক বসানো সম্ভব নয়।
বাসের রুট পারমিট বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, “রুট পারমিট দেয় আরটিএর জেলা কমিটি। এ কমিটি স্থানীয়দের সুবিধা বিবেচনায় রুট পারমিট দিয়ে থাকে।”
শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের দাবিটি পূরণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সড়কে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালু থাকবে বলেও বাস মালিকদের বলেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান মেহবুব, বিআরটি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম-সিলেট অঞ্চলের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অলি আহম্মেদ, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা, দক্ষিণাঞ্চলের সদস্য সচিব মো. মহিউদ্দিনও বৈঠকে অংশ নেন।