প্রতিপক্ষের মামলা নেওয়ায় মোবাইলে তিনি ওসিকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
Published : 25 Dec 2023, 09:54 PM
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের আচরণ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।
বাঁশখালী থানার ওসিকে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দেওয়ার ঘটনায় রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে, যার কপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দেখার সুযোগ হয়েছে।
ওসিকে ‘হুমকির’ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় পুলিশের তরফে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে; তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানের সমর্থকরা। এ নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে দুই পক্ষ।
থানায় মজিবুরের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইলে হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁশখালী পৌরসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তার সামনে নিজের মালিকাধীন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় নির্বাচনি কার্যালয় স্থাপন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান।
১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের উত্তেজনা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন।
দুই দিন বাদে শুক্রবার স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে বেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০/৫০ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি মামলা করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজেদের অনুসারীদের নামে মামলার বিষয়টি জানতে পেরে ২২ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে বাঁশখালীর ওসির সরকারি নম্বরে ফোন করে বলেন, “শালা তুই মামলা নিলি কেন?”
ওসি তখন ঘটনা বোঝানোর চেষ্টা করলে ক্ষেপে গিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, “দুই দিন পর মামলা নিলি কেন?”
জবাবে ওসি বলেন, “আজকেই তারা এজাহার দিয়েছে”।
এরপর মোস্তাফিজুর বলেন, “তুই তদন্ত করিসনি কেন?”
ওসি তখন প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে বলে জানালে নৌকার প্রার্থী বলেন, “তুই মুজিবের কাজ করার জন্য আসছিস, শালারপুত তোকে আমি দেখে নেব।”
ওসিকে হুমকি দেওয়ার ওই ঘটনায় ওই দিন বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
ওসির সঙ্গে প্রার্থী মোস্তাফিজুরের এ ধরনের আচরণ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনি পরিবেশের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ হিসেবে ডিএসবির প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
আর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “তারা (মজিবুর রহমান) মার্কেটের উপরে একটা অফিস করেছে। আর আমাদেরটা স্থায়ী দলীয় কার্যালয়। দলীয় কার্যালয় থেকে নামার পথে সেখান থেকে পাথর ছুঁড়ে মারে। ভাগ্যিস আমার মাথায় পড়েনি, আমার পাশে এক ছেলের মাথায় পড়েছে।”
ওসির সঙ্গে কথোপকোথনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ‘ওইসব বাজে কথা’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেনও কথা বলতে চাননি।
প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেটি তদন্তের জন্য ইলেকটোরাইল ইনকোয়ারি কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর রহমান। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে প্রশ্ন করেন বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন।
প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান মোস্তাফিজুর রহমান, গালি দিয়ে ওই সাংবাদিককে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা এসময় অন্য সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলা দায়ের করার জন্য রোববার বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন