ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আশুলিয়ার কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা এবং নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের মানহানির ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এবার পথে নামলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
Published : 30 Jun 2022, 06:02 PM
এসব ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
শনিবার দুপুরের দিকে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে উৎপল কুমার সরকারের (৩৭) ওপর দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে হামলা চালায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মারা যান শিক্ষক উৎপল। র্যাব বলছে, স্কুল ক্যাম্পাসে বান্ধবীকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে ‘নিষেধ করেছিলেন’ শিক্ষক উৎপল। সেই ক্ষোভ থেকেই এই ঘটনা।
অন্যাদিকে গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেইসবুকে নড়াইলের কলেজের এক ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা।
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার বলেন, একজন অধ্যক্ষকে এভাবে লাঞ্ছিত করা হল, অথচ পুলিশ প্রশাসন ‘দাঁড়িয়ে থাকল’। বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত ‘লজ্জার ছবি’।
“আমি ধিক্কার জানাই সেই পুলিশদের, যারা একজন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করতে পারল না। পাশাপাশি আমরা দেখেছি কিভাবে উৎপলকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ছাত্রের হাতে খুন হতে হল। এরা কখনও ছাত্র হতে পারে না। এই খুনিরা ছাত্র-শিক্ষিকের মধুর সম্পর্ককে কলুষিত করেছে।
“আমি স্পষ্ট ভাবে প্রশাসনের কাছে বলতে চাই অতিদ্রুত এসব নির্মমতার কঠোর বিচার করুন, না হলে সারা বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদে রাজপথে নামবে,” হুঁশিয়ারি দেন এই অধ্যাপক।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, "এই যে শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, এগুলো কি শুধুই ঘটনা নাকি কোনো ষড়যন্ত্র তা খতিয়ে দেখতে হবে।"
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, “একজন শিক্ষককে মেরে ফেলা হয়েছে আরেকজন শিক্ষক জীবিত থেকেই বর্তমানে মৃত। এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আজকের এই মানববন্ধন থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।"
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার সাইদ বলেন, “আমি একজন শিক্ষক।… একজন শিক্ষক হেনস্তার শিকার হয় বা খুন হয় তাহলে একটি জাতিই লজ্জার মুখে পড়ে।
“আমরা সিনেমা হীরক রাজার দেশে দেখেছিলাম সেখানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজা তখন বলেন শিক্ষক বেমানান -নাই অর্থ, নাই মান। এখন দেখা যাচ্ছে অর্থ আর মানের সাথে সাথে প্রাণও নাই।”