ঘূর্ণিঝড় ‘জোয়াদ’ লঘুচাপে পরিণত হয়ে অগ্রহায়ণে যে বৃষ্টি ঝরিয়েছে, তাতে মাথায় হাত পড়েছে চট্টগ্রামের কৃষকের।
Published : 08 Dec 2021, 10:18 PM
জেলার দক্ষিণের উপজেলায় এক চতুর্থাংশ জমির আমন ধান এখনও কাটা হয়নি। অসময়ের বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় শুয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির ধান গাছ বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
আর উত্তরের উপজেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রবি শস্যের ক্ষেত। ক্ষতি পোষাতে সরকারি সহায়তা চায় কৃষকরা।
চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কী পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আরও কয়েকদিন পর বোঝা যাবে।
“প্রাথমিক হিসাবে প্রায় দুই হাজার হেক্টর (প্রায় পাঁচ হাজার একর) জমির ধান শুয়ে গেছে। রবি শস্যেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে।”
তিনি বলেন, আসন্ন বোরো মৌসুমে উপজেলার ১০ হাজার ৩০০ কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হবে। আশাকরি বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এর আওতায় সুবিধা পাবেন।”
সোমবার চট্টগ্রামে প্রায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার আরও চার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে জেলায়।
অসময়ের এ পরিমাণ বৃষ্টিকে বেশিই বলছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলার রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ কয়েকটি উপজেলায় আমনের আবাদ বেশি হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে জেলায় এবার এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার জমির একটা ধানও কাটা হয়নি। সবে রঙ এসেছিল। আরও সপ্তাহ দুয়েক পর কাটব ঠিক করেছিলাম। সোমবারের বৃষ্টিতে সব ধান গাছ শুয়ে পড়েছে।”
এ জমি থেকে ৩০ আঁড়ি (প্রতি আঁড়ি ১০ কেজি) ধান পেতেন জানিয়ে মোহাম্মদ লেদু বলেন, “এখন রোদ উঠলে গাছ শুকানোর পর ঝেড়েবেছে কতটুকু নিতে পারব জানি না। এই বিলে ৭ কানির মত জমি আছে বিভিন্ন জনের। সবার একই অবস্থা।”
বছরে আমনের ফলন থেকেই পরিবারের সারাবছরের খোরাকি চালের যোগান আসে এ কৃষকের পরিবারে। এ জমি ছাড়া আর এক কানি জমি অন্য এক কৃষককে বর্গা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই জমিরও একই দশা।
সেই বর্গা চাষি ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি এবার কোনো ধান দিতে পারবেন না।
একই চরে আলু, টমেটো, বাদাম আর মরিচের চাষ করেছিলেন স্থানীয় মাহবুব ও আজিজ কিন্তু তাদের সব ফসল পানিতে ভিজেছে এবং জমি এখন কাদামাটিতে পরিণত হয়েছে।
মাহবুব বলেন, “বাদাম প্রায় সবই নষ্ট হয়ে যাবে। আলু কিছু টিকতে পারে। টমেটো আর মূলাও নষ্ট হবে বেশির ভাগ।”
বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমৃত কারণ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর কৃষক ফ্রন্টেরও নেতা। স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন তিনি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের জমিতে কেটে রাখা ধান ছিল সেগুলো পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব ধান কাটা হয়নি বৃষ্টি আর বাতাসে শীষ ভেঙে পড়েছে। শীলকূপের হাসির বিল, হাইদ্যার ডেবা, চেচুরিয়া বিলে পানি জমে গেছে।
দক্ষিণের আরেক উপজেলা সাতকানিয়ার পৌরসদর, এওচিয়া ও ধর্মপুর এলাকায় এখনও ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়নি। খাগরিয়া ইউনিয়নে আলুর চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। বাজালিয়া ও চরতিতে শঙ্খের চরে হয় বাদামসহ রবি শস্যের চাষ।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হেলে পড়া গাছ থেকে পুরো ধান পাবেন না কৃষক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সরিষার। কারণ সরিষার মৌসুম প্রায় চলেই যাচ্ছে। উপজেলায় ইতিমধ্যে ৭৫০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছে। যারা সপ্তাহ খানেক আগে আলু লাগিয়েছেন তাদের বেশি ক্ষতি হবে।
“কৃষকদের বলেছি জমির পানি নিষ্কাশন করতে। আবার বৃষ্টি না হলে ক্ষতি কমবে। কৃষকদের নতুন করে আলু বীজ সরবরাহ এবং অন্য ফসল লাগাতে চাইলে সে বিষয়ে সহায়তা দেয়া হবে।”