গাড়িতে থাকা চোলাই মদ ও নিজেদের বাঁচাতে মাইক্রোবাসের মালিকের ‘নির্দেশে’ এএসআই কাজী সালাউদ্দিনকে চাপা দিয়ে চালক পালিয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
Published : 19 Jun 2021, 07:40 PM
‘চোলাই মদ বহনকারী’ মাইক্রোবাস চাপায় এএসআই সালাউদ্দিনের নিহতের ঘটনায় চালক ও গাড়ির মালিকের বাবা-ভাইসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঘটনার সময় সামনে ও পেছনে গাড়ির মালিক ও তার অপর তিন সহযোগী মোটর সাইকেল নিয়ে পাহারা দিয়ে চোলাই মদ নিয়ে মাইক্রোবাসটি কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রামে এসেছিল বলেও পুলিশ জানায়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল ওরফে উত্তম বিশ্বাস (৩৪), মো. রাশেদ ওরফে রাসেল (২৬) ও তার বাবা শামসুল আলম (৬০)।
বেলালের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার ধোরলা এবং অন্য দুই জনের বাড়ি আহল্লা এলাকায়।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কক্সাবাজার পালানোর সময় শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চালক বেলালকে পুলিশ হত্যা মামলায় এবং রাশেদ ও শামসুল আলমকে মাদক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি ।
হত্যা মামলায় চালক বেলাল চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। আর মাদক আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ।
গত ১১ জুন ভোরে চান্দগাঁও থানার মেহেরাজ চৌধুরী ঘাটা এলাকায় এএসআই কাজী মো. সালাউদ্দিনকে চাপা দেয় একটি মাইক্রোবাস।
টহল ডিউটিতে থাকা সালাউদ্দিন সংকেত দিলেও মাইক্রোবাসটি না থামিয়ে চালক তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়। গুরুতর আহত এএসআই সালাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চান্দগাঁও বোর্ড স্কুল এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসটি আটক করে পুলিশ। মাইক্রোবাস তল্লাশি করে ৭৩০ লিটার চোলাইমদ উদ্ধার করার দাবি করেছে পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাইক্রোবাসটিতে করে কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রামে চোলাইমদ নিয়ে আসা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা পার্বত্য এলাকা থেকে চোলাইমদ এনে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া জানান, পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ও গাড়িতে চোলাইমদ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথমক দুইটি মামলা করা হয়েছে।
মামলার পরপর গাড়ির নম্বর নিয়ে মালিকানা যাচাই করে সেটি বোয়ালখালী উপজেলার আহল্লা এলাকার জাহাঙ্গীর নামের একজনের বলে নিশ্চিত হয়ে অভিযান শুরু করে থানা পুলিশ।
তিনি জানান, জাহাঙ্গীর পেশাদার মাদক কারবারি। বেলাল তার গাড়ির চালক। রাঙামাটি থেকে চোলাইমদ এনে তারা বিক্রি করেন। জাহাঙ্গীরের বাবা শামসুদ্দিন ও ছোট ভাই রাশেদও মাদক কারবারে জড়িত।
ঘটনার দিন চোলাইমদ নিয়ে কাপ্তাই থেকে আসার পথে বেলাল একাই গাড়িতে ছিলেন। আর গাড়ির সামনে-পেছনে দুইটি মোটর সাইকেলে জাহাঙ্গীর ও তার তিনজন সহযোগী সেটিকে পাহারা দিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিলেন।
“মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশের পর মেহেরাজ চৌধুরী ঘাটা এলাকায় টহল ডিউটিতে থাকা এএসআই কাজী মো. সালাউদ্দিন ও তার দলের সদস্যরা থামার সংকেত দেয়। কিন্তু সংকেত না মেনে মালিকের ‘নির্দেশ’ মতো সালাউদ্দিনকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় চালক বেলাল,” বলেন পরিদর্শক রাজেশ।
মুরাদপুর এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ঘটনার দিন মাইক্রোবাসের সঙ্গে থাকা একটি মোটর সাইকেলও পুলিশ জব্দ করে বলে জানান তিনি।
রাজেশ জানান, ওই দিন দুই মোটর সাইকেলে জাহাঙ্গীর ছাড়াও অন্য যে তিন জন ছিলেন তাদের নামও জানতে পেরেছে পুলিশ। তাদের ধরতে এবং অপর মোটর সাইকেলটি উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে।
দুইটি মামলার মধ্যে মাদকের মামলায় মাইক্রোবাস চালক বেলাল, গাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর, মোটর সাইকেলে থাকা তিন সহযোগী ও জাহাঙ্গীরের বাবা এবং ভাইকে আসামি করা হয়েছে। আর হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে জাহাঙ্গীরের বাবা ও ভাই ছাড়া অন্য পাঁচ জনকে।
পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বলেন, আদালতে দেওয়া জবাবন্দিতে বেলাল মাদক পাচারের সাথে বেশ কয়েক জনের নাম জানিয়েছে। তাদের বিষয়গুলো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
বেলালের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় এবং জাহাঙ্গীরের ভাই রাশেদের বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় মাদকের মামলা আছে বলে জানান তিনি।