আদালত ভবনেই সুদীপ্ত হত্যার এক আসামির উপর অন্যদের হামলা

চট্টগ্রামে আদালত ভবনেই ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলার এক আসামির উপর অন্য আসামিরা হামলা করেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2020, 02:15 PM
Updated : 12 Oct 2020, 03:16 PM

এ ঘটনায় আহত হয়েছে তিনজন। তাদের মধ্যে মামলার আসামি বিচারকের এজলাসে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের এজলাসের বাইরে বারন্দায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহতরা হলেন- সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি মোক্তার হোসেন, তার বন্ধু মো. জাহেদ এবং অন্য এক আসামি মিজানের ভাই আরিফ।

হামলার ঘটনায় আদালতের মৌখিক নির্দেশ পাওয়ার পর মামলা করতে ও নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন আহত মোক্তার।

এভাবে আদালত ভবনে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে আইনজীবী সমিতি। আহতরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়া মাত্র মোক্তারকে প্রতিপক্ষের লোকজন ঘিরে ফেলে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার বন্ধুরা হামলার শিকার হন।

হামলায় আহত মোক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছি। এতে তারা ফেঁসে যেতে পারে এই ভয়ে আমার উপর হামলা হয়েছে। হামলাকারীদের আমি চিনি। তারা ১২ জনই মামলার আসামি। তিনজন বাইরের।

“এই ১৫ জনকে আসামি করে আমি কোতোয়ালি থানায় মামলার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ মেডিকেল রিপোর্ট চেয়েছে। সেটা নিয়ে আবার থানায় যাচ্ছি। আমি নিরাপত্তা চেয়েছি।”

তবে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করতে রাজি হননি মোক্তার।

২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মোক্তার ‘বড় ভাইদের নির্দেশে’ সুদীপ্তকে হত্যা করা হয় জানিয়ে জড়িত ১২-১৫ জনের নাম প্রকাশ করেন। নিজের অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি নির্দেশদাতার ‘নাম জানেন না’ বলে দাবি করেছিলেন।

মোক্তারের আইনজীবী শাহেদুল আজম শাকিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালেই মোক্তার বলেছিল, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার উপর হামলা হতে পারে। সে কোর্টে জিডি করবে বলেছিল।

“পূর্ব নির্ধারিত শুনানি শেষে বের হওয়া মাত্র ২০-৩০ জন ছেলে মোক্তারকে ঘিরে ফেলে। এ সময় আমি একটু পেছনেই ছিলাম। তার বন্ধুরা তাকে রক্ষার চেষ্টা করে। এরমধ্যেই হামলা হয়। আমি ‍ছুটে এডিসি প্রসিকিউশনের কক্ষে গিয়ে কাউকে পাইনি।”

সুদীপ্ত হত্যার আসামি মোক্তার হোসেন (ফাইল ছবি)

এ সময় হামলার শিকার মোক্তারকে আরও লোকজন এসে দ্বিতীয় দফায় ঘিরে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে মোক্তার বন্ধুদের সহায়তায় নেজারত শাখায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। তখন হামলাকারীরা দরজায় লাথি মারতে থাকে।

আইনজীবী শাহেদুল আজম সাকিন বলেন, “তারপর পুলিশ আসলে হামলাকারীরা সরে যায়। তখন মোক্তার দৌড়ে এজলাসে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বিচারককে বিষয়টি জানায়। তখন আদালত তাকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলা করার নির্দেশ দেয়।”

হামলার বিষয়ে জানতে নগর পুলিশের এডিসি (প্রসিকিউশন) এম এন নাসিরুদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানির নির্ধারিত দিন ছিল আজ। সেখানে আসামিদের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। আগে থেকে আমাদের ধারণা ছিল না এ রকম কিছু হতে পারে। সেখানে কোর্ট পুলিশ সদস্যরা ছিল।”

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মোক্তার অভিযোগ নিয়ে এসেছে। মামলা নেওয়া হবে। সে নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।”

সোমবার আদালতে মোক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) করা আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল।

সুদীপ্ত হত্যার সময় তাকে মারধরের ঘটনা ভিডিও করার দায়িত্ব ছিল আসামি মোক্তারের। সুদীপ্তর মৃত্যুর পর সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন মোক্তার। পাশাপাশি হত্যার সময় উপস্থিত ও সম্পৃক্তদের বিষয়েও জবানবন্দিতে তথ্য দেন তিনি।

জামিনে থাকা মোক্তারের করা ভিডিওটির বিষয়ে জানতে তাকে পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে পিবিআই। তবে সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিদেশে থাকায় সে বিষয়ে সময়ের আবেদন করে তারা।

এদিকে হামলার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ আদালতে আসে বিচারের জন্য। এসব ঘটনায় বিচারের পরিবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত অবিলম্বে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পুলিশ কমিশনারের সাথে আগামীকাল আমরা কথা বলব। এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আগেও ঘটেছে। এসব বন্ধ করতে যেন বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তি হচ্ছে।

সুদীপ্তর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে যে হত্যা মামলা করেছিলেন, এক বছর পর তারই আবেদনে আদালত এর তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগের একাংশ লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুমকে দায়ী করলেও গ্রেপ্তারকৃতদের কারও জবানবন্দিতে তার নাম আসেনি; এক ‘বড় ভাই’ হুকুমদাতা ছিলেন বলে তাদের ভাষ্য।

গত বছরের ১২ জুলাই গ্রেপ্তার মিজান জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে মাসুমের নাম বলার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ছাড়াও এ মামলায় আরও ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, যারা সবাই মাসুমের অনুসারী বলে পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।