চট্টগ্রামে সুদীপ্ত হত্যায় আ. লীগ নেতা মাসুম গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2019, 05:12 PM
Updated : 4 August 2019, 08:40 PM

রোববার রাতে ঢাকা থেকে মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তারের পর দিদারুল আলম মাসুমকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে।”

মাসুমকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লালখান বাজার বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এ ঘটনায় সুদীপ্তর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাবুল বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত পরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে।

হত্যাকাণ্ডের পর মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেছিলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা থাকলেও গত কয়েক বছরে তার বিপরীতে একটি অংশ দাঁড়িয়েছে, যাদের একাংশের নেতৃত্বে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম।

এই মাসুমের অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ করে আসছে নগর ছাত্রলীগের একাংশ।

এই হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তাররা সবাই মাসুমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আর মাসুম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে পরিচিতি হলেও ২০১৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তিনি মেয়র আ জ ম নাছিরের বলয়ে চলে আসেন।

গেল সপ্তাহে দিদারুল আলম মাসুমের দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মাঝে তিনি সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীনের অনুসারী হিসেবে বলেও পরিচয় দিতেন।

নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ নিয়ে ফেইসবুকে লেখালেখির কারণে মাসুমের বিরাগভাজন হয়ে সুদীপ্ত খুন হন বলেও তার ঘনিষ্টজনদের ধারণা।

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আলোচনায় আসা আইনুল কাদের নিপুও চট্টগ্রামে সমালোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী।

মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করার পর কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে গত ১২ জুলাই মিজান নামে গ্রেপ্তার একজন জবানবন্দিতে দিদারুল আলম মাসুমের নাম বলেন।

এদিকে লালখান বাজার এলাকায় বিভিন্ন মারামারির ঘটনায় বারবার মাসুমের নাম উঠে আসে। 

এর মধ্যে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ কবির মানিক গত ২২ জুলাই দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ৩১ জুলাই মাসুমের দুটি অস্ত্রের নিবন্ধন বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার বিকালে মাসুম নিজে গিয়ে অস্ত্রগুলো খুলশী থানায় জমা দেন। 

চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম নানা কারণে আলোচিত। বিভিন্ন সময়ে লালখান বাজার এলাকায় বিভিন্ন সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার নাম এসেছে। গণমাধ্যমে অস্ত্র হাতে ছবি ছাপা হওয়ায় তিনি সমালোচিতও হন।

মাসুম ১৯৯৭-৯৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায় তিন বছর কারাবাসের পর দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে ছিলেন মাসুম। ২০১৩ সাল থেকে তিনি লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শুক্রবার মাসুম দাবি করেছিলেন, আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে একটি অংশ উঠেপড়ে লেগেছে।