“ঢাকার বাইরে এই প্রথম জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এজন্য আমরা চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছি,” বলেন গোলাম কুদ্দুছ।
Published : 25 Apr 2024, 08:15 PM
চট্টগ্রামে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে উৎসব বসবে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সারাদেশের ৩২টি দল এবং একক শিল্পী মিলিয়ে সারাদেশের প্রায় ৬০০ শিল্পী এতে অংশ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব আগের তিনবার ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে। সমস্ত কিছু ঢাকায় না করে দেশের অন্যান্য স্থানে করলে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে।
“ঢাকার বাইরে এই প্রথম জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এজন্য আমরা চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছি।”
যতদিন শ্রেণি বৈষম্য থাকবে, সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না; ততদিন গণসঙ্গীতের প্রয়োজনীয়তা থাকবে মন্তব্য করে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “কথা ছিল স্বাধীন দেশে সকল শ্রেণি-পেশার, জাতি ও ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। শ্রেণি বৈষম্য থাকবে না।
“সে লক্ষ্যে বাহাত্তরের সংবিধানে চার মূলনীতি গ্রহণ করা হয়। পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর সেই যাত্রা থেমে গিয়েছিল। তারপর বহু কঠিন পথ আমাদের পার হতে হয়েছে এবং হচ্ছে। যে রাষ্ট্রে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বিধি-নিষেধ মানতে হয় সেখানে বাংলা, বাঙালি, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব? সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “আজ হয়ত কেউ না খেয়ে নেই। অতি দরিদ্রের সংখ্যা হয়ত কমেছে। কিন্তু শ্রেণি বৈষম্য তো বাড়ছে। বৈষম্য কমিয়ে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াই করতে হবে। ’৫২, ’৭১ সহ অতীতে নানা দুঃসময়ে সংস্কৃতি কর্মীরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের সংগ্রাম আজো অব্যাহত আছে। লুটেরা শ্রেণি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, “উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী গণসঙ্গীত পরিবেশন করবেন ১৩৫ জন শিল্পী।
“শুক্রবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্ত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করবেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন।”
শনিবার সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শিরোনামে সেমিনারে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি মামুনুর রশিদ।
এবার উৎসবের বিভিন্ন অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান, আব্দুল লতিফের গান, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান, বর্ণবাদ বিরোধী গান, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান, ফকির আলমগীরের গান, ভূপেন হাজারিকার গান, শ্রেণি-সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান, অজিত রায়ের গান, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, কৃষক আন্দোলনের গান, শেখ লুৎফর রহমানের গান, সলিল চৌধুরীর গান, চাকমা ভাষার গণসঙ্গীত, ভাষা আন্দোলনের গান, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান, গারো গান, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান, মুকুন্দ দাসের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের গান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষায় গণমানুষের গান এবং অশোক সেনগুপ্তের গান পরিবেশন করবেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গণসঙ্গীতের দলগুলো।
সংবাদ সস্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয়ক পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা, শিল্পী আরিফ রহমান, উৎসব উদযাপন কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শিল্পী শ্রেয়সী রায়, পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলক দাশগুপ্ত ও হাবিবুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি জসিম চৌধুরী সবুজ।