‘অনৈতিক প্রভাবে’ আড়ালে সুদীপ্ত খুনের হোতারা: ছাত্রলীগ

সুদীপ্ত বিশ্বাসকে হত্যার এক বছর পরও ‘অনৈতিক প্রভাবের’ কারণে খুনের মূল হোতা ও নির্দেশদাতারা আড়ালেই রয়ে গেছে বলে মনে করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2018, 01:31 PM
Updated : 6 Oct 2018, 01:31 PM

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেন নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।

‘সুদীপ্ত বিশ্বাসের হত্যা মামলার রায় ও মূল হোতাদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গত বছরের ৬ অক্টোবর সকালে দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, চট্টগ্রামের লালখান বাজারের একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী নেতার নির্দেশ অনুসারে সেখান থেকে সংগঠিত হয়েই সন্ত্রাসীরা সদরঘাট মোড়ে যায় এবং উত্তর নালাপাড়ায় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবেশ করে।

“সুদীপ্তকে পৈশাচিক কায়দার তারা পিটিয়ে আহত করে এবং পরে তার মৃত্যু হয়।”

ইমু বলেন, “একের পর এক ছাত্রলীগ নেতাদের হত্যা করা হয় আর আমরা প্রতিবাদ করি। কিন্তু বিচার দিনের পর দিন বিলম্বিত হয়।

“অনৈতিক প্রভাব আর মহল বিশেষের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে বিচারের স্বাভাবিক গতিপথ। এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে এসে সুদীপ্তর খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উনার নির্দেশের পরও কেন খুনি গ্রেপ্তার হল না সে প্রশ্ন পুলিশ প্রশাসনের কাছে।

“অনুমান করছি তাহলে অনৈতিক কোনো চাপ আছে। আমাদের কাছে যা তথ্য ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ ছিল তা সব পুলিশকে দিয়েছি। বাকিটা পুলিশ খোলাসা করবে।”

গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি থেকে পাওয়া মূল নির্দেশদাতাদের নাম আড়াল করতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

“পুলিশ প্রশাসনের চেষ্টা আছে কিন্তু তাদের প্রভাবিত করার নানামুখী চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।”

সুদীপ্ত হত্যার মূল হোতাদের আড়াল করতে কোনো রাজনৈতিক চাপ আছে কি না জানতে চাইলে ইমু বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের সহযোগিতা করছেন।”

‘সব চাপ ও প্রভাবের’ ঊর্ধ্বে উঠে দ্রুত এ মামলায় অভিযোগপত্র দিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান নগর ছাত্রলীগ সভাপতি।

“আমরা সকল ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকারীদের বিচার চাই। যারা আমাদের সহযোদ্ধা ও ভাই সুদীপ্তর হত্যাকারী, তাদের ফাঁসিকাষ্ঠে দেখতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সহ-সভাপতি শাহীন মোল্লা, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, খোরশেদ আলম মানিক, এম হালিম, রনি মির্জা, সামশুল আলম সবুজ, ফয়সাল অভি, বিকাশ দাশ প্রমুখ।

সুদীপ্ত হত্যার ঘটনায় তার বাবা সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছিলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তার বিপরীতে একটি অংশ দাঁড়িয়েছে।

তাদের একাংশের নেতৃত্বে আছেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। মাসুমের অনুসারীরাই সুদীপ্তকে পিটিয়ে মেরেছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে নগর ছাত্রলীগের একাংশ।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার মোট ১১ জনের সবাই দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর মাসুম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ২০১৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর মেয়র আ জ ম নাছিরের সমর্থক বনে যান।

নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে ফেইসবুকে লেখালেখির কারণে মাসুমের বিরাগভাজন হয়ে সুদীপ্ত খুন হন বলেও তার ঘনিষ্টজনদের ধারণা।