চট্টগ্রাম নগরীতে পরবর্তীতে লকডাউনের ক্ষেত্রে পুরো এলাকা স্থবির না করে ‘বেশি সংক্রমিত এলাকায়’ তা কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
Published : 08 Jul 2020, 12:00 AM
মঙ্গলবার উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন শেষে নগরীর সিটি গেইট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকে তিনি এ মত দেন।
মেয়র নাছির বলেন, “পরবর্তীতে যেসব এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন হবে সেগুলোর সম্ভাব্য আওতা ও পরিধি বিন্যাস করে একটি পুরো এলাকাকে স্থবির না করে শুধু ব্যাপকভাবে সংক্রমিত স্থানটি বেছে নিয়ে লকডাউনের আওতায় আনা হলে জীবন রক্ষার পাশাপশি জীবিকা ও অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে।
“এর প্রভাবে লকডাউন নিয়ে সাধারণ মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার ভীতি ও আশঙ্কা দূর হবে এবং লকডাউন চলাকালীন নির্ধারিত স্থানটির অধিবাসীরাও স্বস্তি অনুভব করবেন।”
তিনি বলেন, “করোনাকালে অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর করা একটি কঠিন কাজ। জনস্বার্থ বিবেচনায় লকডাউন জবরদস্তি ও দমনমূলক নয়, এটি সেবামূলক দায়বদ্ধতা।”
উত্তর কাট্টলীতে লকডাউন ‘সফল’ দাবি করে এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকায় প্রয়োগ করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘অবশ্যই ইতিবাচক সুফল বয়ে আনবে’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র নাছির।
তিনি বলেন, “লকডাউন শুরুর আগে এই এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৪ জন। আজ পর্যন্ত এখানে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১১ জন। ইতোমধ্যে আগের ৫৮ জন আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন।
“এতে বোঝা যায়, পরিকল্পিত এলাকাভিত্তিক লকডাউন চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে আরোপিত হলে পরিস্থিতি যা-ই হোক কেন ভয়, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার অবসান হবে।”
গত ১৬ জুন থেকে নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে টানা ২১ দিনের লকডাউন শেষ হয়েছে।
জুনের মাঝামাঝি নগরীতে ১০টি এলাকা লকডাউনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে শুরুতে উত্তর কাট্টলীতে তা বাস্তবায়ন করা হয়।
ওই এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, এলাকাটি আবাসিক এবং এখানে তৈরি পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় শিল্প ও কলকারখানা রয়েছে। তাই প্রথমদিকে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
“তবে দুই-একদিন পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকাবাসীর চাহিদা এবং দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সেবা দিতে সচেষ্ট হওয়ার পর একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।”
লকডাউন চলাকালে ওই এলাকায় কোনো হতদরিদ্র মানুষ অভুক্ত ছিলেন না দাবি করে মেয়র বলেন, “প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষকে খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকাবাসীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
“রোগের নমুনা পরীক্ষার জন্য বুথ ও রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছিল।”
লকডাউন সফল করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় স্থানীয় সাংসদ, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী, সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান মেয়র।
এ সময় কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মহিলা কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হাসান, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আরিফ, আকবর শাহ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলতান আহমদ চৌধুরী, পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।