চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
Published : 07 Mar 2020, 10:48 PM
শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এই আহ্বান জানান।
প্রার্থিতা প্রত্যহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগের দিন এই আহ্বান এলো। ৮ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রার্থিাতা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।”
সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “সিসিসি নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
“আমাদের লক্ষ্য একটাই- মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। একই সাথে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার পার্লামেন্ট বোর্ড সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই।
“কিন্তু লক্ষনীয় যে, বেশ কিছু সংখ্যক ওয়ার্ডে একের অধিক সংক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। দলের বৃহত্তর স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান রেখে আপনাদের প্রার্থিতা আগামীকাল ৮ মার্চ বিকাল ৪টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আমরা আশাবাদী।
“আশা করি, দলের মর্যাদা ও শৃঙ্খলার পথকে আপনারা সচল রাখবেন। এ লক্ষ্যে আপনাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এ প্রত্যাশাই করে।”
এদিকে রাত ৯টার দিকে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় আওয়ামী লীগ থেকে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে এক বৈঠক হয়।
সেখানে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রায় ১৫-২০ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জামালখান ওয়ার্ডের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী, আলকরণ ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিম, সংরক্ষিত নারী আসনের বিদ্রোহী প্রার্থী আনজুমান আরাসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বিদ্রোহীরা ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত একজন বিদ্রোহী প্রার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে মোশাররফ ভাই বলেছেন, মনোনয়ন বোর্ডে সভাপতিত্ব করেছেন দলীয় সভানেত্রী। তিনি সব বিবেচনা করেই মনোনয়ন দিয়েছেন।
“এর বাইরে কোনো ভাবনার সুযোগ নেই। কেউ তারপরও নির্বাচন করতে চাইলে নিজ দায়িত্বে নির্বাচন করবেন। পরে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ সময় কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী দল মনোনীত বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীর ‘অযোগ্যতা’, দলের সাথে ‘সম্পৃক্ত না থাকাসহ’ নানা বিষয়ের অবতারণা করেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, “একটাই সিদ্ধান্ত দল যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তারাই নির্বাচন করবে। বাকিদের প্রত্যাহার করতে বলে দিয়েছি। প্রত্যাহার যদি না করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দলীয়ভাবে এই প্রথমবারের মতো সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মোট ৫৫টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই প্রার্থীদের এক তৃতীয়াংশই নতুন প্রার্থী।
বাদ পড়াদের মধ্যে একজন ছাড়া গতবারের ১৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর ২৪ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি দলের কার্যকরী কমিটির সভায় ও বর্ধিত সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
৫ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে সভায় বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতা চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়।
সেদিন জানা যায়, ৮ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হবে।
এরপর ৬ মার্চ শুক্রবার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, সেই সিদ্ধান্তে বদল এসেছে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক হবে রুদ্ধদ্বার।
এরপর শনিবার দুপুরে চশমা হিলের বাসায় নিজের সংসদীয় আসনের অধীন ১৪টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে বৈঠকে কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়ে দেন, কেউ বিদ্রোহী হলে তার দায় তিনি নেবেন না।
শনিবার বিকেলে ৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পাশাপাশি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন নাছির।