চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে খুনের তথ্যপ্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে প্রয়োজনে তা প্রকাশের কথা বলেছেন সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
Published : 11 Apr 2017, 07:53 PM
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ক্যাম্পাসে নিজের অফিস কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন।
এর আগে সোমবার লালদীঘি মাঠে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সমাবেশে মহিউদ্দিন অভিযোগ করেন নাছিরের তত্ত্বাবধানে ১২টি খুন করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার সকালে নগরভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিনের বক্তব্যের সপক্ষে ‘তথ্য-উপাত্ত’ থাকলে তা দিতে বলে বর্তমান মেয়র নাছির।
নাছিরের খুনের তথ্য-উপাত্ত চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, “দেব দেব। যখন প্রয়োজন হয়- মামলা করবে তো।
“উনার রাজনৈতিক জীবনে কমপক্ষে ১২টা ছাত্রলীগের ছেলেকে খুন করেছেন। তার ইন্ধনে। মামলা তো হয়েছে। হয়তো উনি ক্ষমতায় আছেন বিধায় মামলাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে না।”
বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ সোহেল খুনের ঘটনা উল্লেখ করে মহিউদ্দিন বলেন, “প্রিমিয়ারের একটা ছেলেকে মেরে ফেলল। ক্যামেরা ছিল। ফুটেজ কেটে দিয়েছে, কার সাহস? উনার (নাছির) সাহসের জোরেই তার নির্ধারিত ছেলেরা খুন করেছে। খুন করে কি রাজনীতি করা যায়?”
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “উনি মামলার আসামি ছিলেন। শেখ হাসিনা অনেক আগে লালদীঘিতে মিটিং করছিলেন। সে মিটিংয়ে তিনি গুলি করেছিলেন। আহত ব্যক্তি মামলা করেছে। তার ট্রায়াল চলছিল।
১৯৯৩ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় তখনকার নগর ছাত্রলীগ নেতা সুফিয়ান সিদ্দিকীর ওপর অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার অভিযোগে এ মামলা করা হয়।
সুফিয়ান সিদ্দিকীর করা এই মামলায় নাছিরসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরের ৭ মার্চ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আসামিপক্ষের করা সাক্ষীদের অধিকতর জেরার আবেদন, রিভিশন ও স্থগিতাদেশ পেরিয়ে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল মামলা শেষ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছায়।
এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে জিতে চট্টগ্রামের মেয়র হন নাছির। ওই বছরের ২২ জুলাই মামলায় রায় দেয় চট্টগ্রামের আদালত। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় নাছিরসহ ১৮ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়।
নাছিরের বিরুদ্ধে এ মামলা ছাড়াও ১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেলে তিন খুন, ১৯৯৪ সালে ইসলামিয়া কলেজে দুই খুন এবং ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ছাত্রলীগের এক নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলা ছিল।
এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটিতে বেকসুর খালাস এবং হত্যাচেষ্টা মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন বলে নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছিলেন নাছির।
‘কিভাবে নির্বাচিত হয়েছে তা তো জানেন’
সিটি মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির ‘কিভাবে নির্বাচিত’ হয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহিউদ্দিন।
ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়র মনজুর আলম।
মঙ্গলবার মহিউদ্দিন বলেন, “সভায় বলেছি আমার সাথে কথা বলার জন্য। সে কথা বলার তোয়াক্কাই করে না।
“সে মনে করে নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কিভাবে হয়েছে তা তো জানেন। আমাকে বলতে হবে না। এরপরও দাম্ভিকতা-অহমিকা কি কারণে থাকবে?”
নাছিরের সঙ্গে ‘গ্রুপিং বা ‘দ্বন্দ্ব’ নেই দাবি করে মহিউদ্দিন বলেন, “সে ছোট ভাই। সে যখন দাম্ভিকতা-অহমিকা দেখায় স্বাভাবিকভাবে তা দলের ওপর পড়ে। সাধারণ সম্পাদক অন্যায়-ভুল করে থাকলে তা দলের ওপর বর্তাবে।
“কেউ মনক্ষুন্ন হতে পারে। মনক্ষুন্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার রাখি বলেই বলেছি। তাছাড়া আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।”
তিনি ‘পাগলের প্রলাপ বকছেন’ নাছিরের এমন মন্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, একজন মেয়রের উক্তি তো সুন্দর হওয়া চাই। উনি খারাপ উক্তি করেছেন। কথা বার্তায় দাম্ভিকতা থাকা উচিত নয়।
বিজয় মেলার প্রতি আক্রোশ কেন?
নাছিরকে আবারও বিজয় মেলা ‘বিরোধী’ আখ্যায়িত করে মহিউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা না হওয়ার জন্য অনেক চক্রান্ত অনেকে করেছে তারমধ্যে ইনি একজন। এটা তার জেলাসি।
“বিজয় মেলার প্রতি আক্রোশ কেন? অসংখ্য জামায়াতকে সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন পদ দিয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে উনার আঁতাত আছে।”
নাছির মঙ্গলবার অভিযোগ করেন বিজয় মেলা থেকে প্রতি বছর এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেন মহিউদ্দিন।
এর জবাবে মহিউদ্দিন বলেন, “আয় হতে পারে। অবশ্যই। টাকা দিয়েই ব্যবসায়ীরা সেখানে অংশগ্রহণ করে। সে টাকা ফান্ডে থাকে। সে টাকা বিভিন্ন কাজে খরচ করি।
“মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্রসহ অসুস্থদের টাকা দিয়ে সহায়তা করেছি। উনি (নাছির) আসুক না। তিনি মুক্তিযু্দ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? পরিণত বয়স ছিল। লোক উপকৃত হচ্ছে বিজয় মেলায়। মুক্তিযোদ্ধা বলে করেছি। আমি খাইনি। হারাম আমার মুখ দিয়ে যায় না।”
রাজধানীতে ১৪ শতাংশ ট্যাক্স হলেও চট্টগ্রামে নগরবাসী কেন ১৭ শতাংশ ট্যাক্স দেবে সে প্রশ্নও রাখেন মহিউদ্দিন।
“বন্দরের কাছে ৩০০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স পাওনা। উনি বন্দরের সাথে ব্যবসা করেন বলে লজ্জায় বলেন না।”
চাক্তাইয়ে নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ‘অবৈধ’ এবং সেখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত না দিলে মামলা হবে বলে হুশিয়ার করেন মহিউদ্দিন।
‘মনজুরের লজ্জা লাগে’
বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স সম্পর্কিত আন্দোলনে সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে ‘সঙ্গে’ নেবেন কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, “আমি তাকে বলেছিলাম আসার জন্য।
“তার না কি লজ্জা লাগে। হেসে হেসে বলেছেন। সে আমার বাসায় আসে। আমি তার বাসায় যাই।”
তিনবার মেয়র থাকাকালে নাছিরের করা ‘লুটপাট ও কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ার’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “১৭ বছরের মধ্যে অন্যায় করে থাকলে বলতে পারেন। চেষ্টা করেছি ট্যাক্স না বাড়িয়ে বাইরে থেকে টাকা এনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কাজ করেছি। অপরাধটা কোথায়? আমি চ্যালেঞ্জ করলাম।
“আগামীতে আই ক্যান হেল্প দ্য সিটি। প্রাণরক্ষায় ভূমিকা রাখার সে যোগ্যতা দক্ষতা আমার আছে।”