”যে সব এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে, সেখানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না,” বলেন আরেক কমিশনার।
Published : 08 May 2024, 11:54 PM
দেশে আসা অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন কমিশনার।
বুধবার ‘টেলিযোগাযোগ সেবা’ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে গণশুনানিকালে এক অংশগ্রহণকারীর প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ এ কথা বলেন।
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন সেট সাধারণত বাজারে ‘আনঅফিসিয়াল ফোন’ হিসেবে পরিচিত। বিটিআরসি বলছে, এগুলোও নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। যদি কখনও বন্ধ করা হয়, তাহলে আগে ঘোষণা দিয়ে জানাবে তারা। এ নিয়ে অনেক ক্রেতা ও ব্যবহারকারীর মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ গণশুনানি চলাকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিটিআরসির কর্মকর্তারা অংশীজন এবং গ্রাহকদের বক্তব্য শোনেন এবং কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেন।
শুনানিতে জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত হন ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মো. রাসেল। অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ হওয়া, না-হওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত জানতে চান।
এর উত্তরে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, “আনঅফিসিয়াল ফোন মানে অবৈধ ফোন। অবৈধ জিনিসটা ভালো নয়। তবে বিটিআরসির নেটওয়ার্কে যত সেট আসছে, বৈধ বা অবৈধ সবই কিন্তু রেজিস্ট্রার্ড হয়ে যাচ্ছে। তারপরও যদি অবৈধ সেট থেকে থাকে, তাহলে গ্রাহকদের পর্যাপ্ত সময় দিয়েই সেটগুলো ডিসকানেক্টেড করার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।
“আপনাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সব মোবাইল ফোনই নেটওয়ার্কে কাজ করবে। কোনটাই বিচ্ছিন্ন করা হবে না।”
গণশুনানিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, মোবাইল ফোন অপারেটর, বিটিআরসির লাইসেন্সধারী টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাগ্রহীতারা বিটিআরসি ভবনে সশরীরে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জুম প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন।
প্রতিমন্ত্রী পলক টেলিযোগাযোগ খাতে বিটিআরসি ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “চাহিদা ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী টেলিযোগাযোগ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য বরাদ্দকৃত তরঙ্গ যেন ফোর-জি সেবার মানোন্নয়নে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়ে বিটিআরসি উদ্যোগ নেবে।”
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মুন্সি আমানুর রহমান গণশুনানিতে অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন, তারা যে কমপ্লেক্সে বসবাস করছেন, সেখানে ৪৮৮টি ফ্ল্যাটে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় একজন প্রভাবশালী। তার কারণে অন্য ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে সব যাচাই করে গেলেও লাইন দিতে পারছে না। তিনি বিটিসিএল অফিসে গিয়ে সরকারি উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য আবেদন করেও তা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আমানুর এ সমস্যার সমাধান চাইলে প্রতিমন্ত্রী পলক মোবাইল ফোনে বিটিসিএল খিলগাঁও জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলেন। পাশাপাশি বেসরকারি ইন্টারনেট সেবাদাতারা যেন ওই এলাকায় যেতে পারেন, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
ঢাকার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তরঙ্গ বরাদ্দের পরও অপারেটরগুলো যথাসময়ে রোল-আউট (ব্যবহার) না করায় গ্রাহকরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু বিটিআরসি কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
এ বিষয়ে বিটিআরসির স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, “অপারেটরদের যথাসময়ে তরঙ্গ রোল-আউটের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান বাড়বে।”
ধানমন্ডির ব্যবসায়ী নাহিয়ান তার বাসায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, যে সব এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে, সেখানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। সেবাদাতা অপারেটররা নতুন সাইট (টাওয়ার) স্থাপন করতে চাইলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধিতায় তা হচ্ছে না।
টাওয়ার স্থাপনের বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাওয়ার স্থাপনের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য বিটিআরসি টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছে।
দেশে র্যাডিয়েশনের মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে নিচে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।”
গণশুনানিতে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান জানান, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোবাইল সিম সংযোগ ১৯ কোটি ২২ লাখ, ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩ কোটি ৪৭ লাখ।
মোবাইল ঘনত্ব ১০৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ঘনত্ব ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ তথা ডেটার ব্যবহার হয়েছে ৫ হাজার ৯১২ জিবিপিএস।
বর্তমানে দেশে ৯৯ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে, যার মধ্যে স্মার্ট ফোন ৬০ ভাগের বেশি বলে জানান তিনি।
সাইবার অপরাধ বিষয়েও নানা প্রশ্ন আসে গণশুনানিতে।
এবার শুনানিতে ৩ হাজার ২৫ জন নিবন্ধন করেন। এ সংখ্যা ২০২২ সালের চেয়ে চারগুণ বেশি। বাছাই করা প্রশ্নগুলো শুনানিতে উত্থাপন করা হয়। তবে উপস্থিত অন্য ব্যক্তি ও সংবাদমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নও নেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী পলক এবারই প্রথম গণশুনানিতে অংশ নিলেন।