দলের তিন নেতা এবং বন্দরের জেটি পরিচালনাকারী বেসরকারি বার্থ অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘ডাকাত’ আখ্যায়িত এর আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, এরা চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘খেয়ে ফেলছে’।
Published : 09 Nov 2016, 08:00 PM
বুধবার দুপুরে বন্দরের ৫ নম্বর জেটি গেইট এলাকায় ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
যে চারজনের বিরুদ্ধে মহিউদ্দিন অভিযোগ তুলেছেন, তারা হলেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বন্দর-পতেঙ্গার সাংসদ এম এ লতিফ, পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী এবং বার্থ অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মহিউদ্দিন বলেন, “আর আঁরা নেতা অল আছি দি বাজি, খালি আইয়েরে, মিটিং দেয়ারে কিছু এক্কান গইজ্জ্যুম। কনঅ একখান পারমিট পাইর না চাইয়ুম। ইন চলের এরি। (আর আমরা নেতারা আছি, শুধু এসে, সভা করে বলা-কিছু একটা করব। বলে, একটা পারমিট পাই কি না দেখব। এভাবেই চলছে।)
“চাইর জনে খাই ফালার বন্দর হিয়ান। আঁরার নাছিরা উউগ্গ্যা আছে। লতিফ আছে। বিচ্ছু সমশু আছে। আর তরফদার। (চারজনে বন্দরটা খেয়ে ফেলছে। আমাদের নাছির একটা আছে। লতিফ আছে। সামশুল আছে। আর তরফদার)। বিচ্ছু সমশু, তার কাজ কী? সে সংসদীয় কমিটির নেতা (নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সাবেক সদস্য) লুটপাট করে খেয়ে ফেলছে। এভাবেই চলছে।”
“লতিফ ডাকাইত। বিচ্ছু (সামশুল হক) ডাকাইত। সাইফ ডাকাইত, নাছিরও ডাকাইতর ভাই, বড় ভাই। নাছির মেয়র হয়েছেন, বন্দর খাওয়ার জন্য নয়। বন্দর কারও বাবার সম্পত্তি নয়।”
শ্রমিকদের উদ্দেশে মহিউদ্দিন বলেন, “আন্দোলন করলেই দাবি আদায় হবে, অনেককে শ্রমিক নেতা বানিয়েছি। তারা আজ আসেনি। আপনারা এসেছেন। তারা খাবে আপনারা খাবেন না, সেটা হতে পারে না। আন্দোলন করতে হবে।”
এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ‘বন্দর রক্ষা পরিষদ’ এর ব্যানারে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচাও, সাইফ পাওয়ার টেক হঠাও’ আন্দোলনের সময় বন্দরের ‘ঘুষের টাকা মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটি পায়’ বলে অভিযোগ করেছিলেন মহিউদ্দিন।
তখন মহিউদ্দিন ‘ব্যক্তিস্বার্থে’ বন্দর রক্ষার আন্দোলন করছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী।
পরে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটির) চারটি জেটি ও সিসিটির দুটি জেটি পরিচালনার কাজ পায় সাইফ পাওয়ার টেক।
এরমধ্যে এনসিটির ২ ও ৩ নম্বর জেটি এককভাবে এবং ৪ ও ৫ নম্বর জেটি সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের মালিকানাধীন এমএইচ চৌধুরী লিমিটেড এবং নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল করিমের মালিকানাধীন এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালনা করে সাইফ।
এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে সাংসদ এম এ লতিফের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে মহিউদ্দিনের অনুসারীরা।
শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মহিউদ্দিন বলেন, “ওরা কী করে, নিজস্ব কিছু লোক ঢুকায়। ওরা হাজিরা দেয়, কাজ করে না, পয়সা পায়। আপনারা কাজ করলেন, পয়সা পেলেন না। শূন্য হাতে চলে গেলেন।
“ধান্ধাবাজরাই এ বন্দরে ধান্ধা করে চলেছে। যে হারে আপনারা যারা কাজ করছেন, সে হারে বেতন পান না। দেশের আয়টা রাজস্ব খাতে যাবে। লুটপাট করে তারা খেয়ে ফেলছে। রাজস্ব খাতেও যাচ্ছে না।”
শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “উত্তেজিত আমি করি না। আমি বলব না- বন্দর বন্ধ রাখুন। বন্দর বন্ধ রাখলে খাব কী? হ্যাঁ, অত্যাচার করলে, আমি জোর করে কেড়ে নেব।”
এনসিটির আরও দুই জেটি পেল সাইফ পাওয়ার
বন্দরের ঘুষের টাকা পায় মন্ত্রী-সংসদীয় কমিটি, অভিযোগ মহিউদ্দিনের
মহিউদ্দিনের আন্দোলন ‘ব্যক্তি স্বার্থে’: এমপি সামশুল
কন্টেইনার টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ বন্দরের হাতে রাখার দাবি
মহিউদ্দিনকে আলোচনায় ডাকলেন শাজাহান
চট্টগ্রাম বন্দর ‘ধ্বংস’ করার অভিযোগ মহিউদ্দিনের