জাতির জনককে অবমাননার জন্য নিজ দলের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে দায়ী করে তার চট্টগ্রামে প্রবেশ ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
Published : 01 Mar 2016, 07:49 PM
লতিফে বিভেদ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে
এমপি লতিফের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃতি’
বঙ্গবন্ধুর ছবিতে দেহটা লতিফের, দায় নিলেন ডিজাইনার
লতিফ বন্দর নগরীতে আক্রান্ত হলে তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে চট্টগ্রামের অন্য সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়া মহিউদ্দিন এবার সরাসরি হামলা চালাতেও দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
“লতিফ যেন চট্টগ্রামে আসতে না পারে। প্রতি এলাকাতে লাঠি নিয়ে সংগঠিত হবেন। লতিফকে দেখলেই মাথায় আঘাত করবেন,” মঙ্গলবার বিকালে লালদীঘি পাড়ে নাগরিক মঞ্চের এক সমাবেশে বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য লতিফের বিচার ও শাস্তির দাবিতে নাগরিক মঞ্চের ব্যানারে এ নিয়ে দ্বিতীয় সমাবেশ হল।
গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে কেন্দ্র করে লতিফের নামে স্থাপিত বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি দেখে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা বিক্ষোভ শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়, আনা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও।
সমালোচনার মুখে লতিফ এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওই বিলবোর্ড স্থাপনের দায়িত্ব পাওয়া বিজ্ঞাপনী সংস্থার ডিজাইনারকে নিয়ে। তাতে ওই ডিজাইনার লতিফকে নির্দোষ দাবি করে নিজে ওই ঘটনার দায় নেন।
তবে মহিউদ্দিন সমর্থকরা লতিফকে জামায়াতের চর আখ্যায়িত করে তার শাস্তির দাবিতে সক্রিয় রয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নাগরিক মঞ্চের সমাবেশে মহিউদ্দিন সংসদ সদস্য লতিফকে সতর্ক করে বলেছিলেন, চট্টগ্রামে তার চলাফেরায় ক্ষুব্ধ কেউ হামলা করলে সে দায় তিনি নেবেন।
তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে সাবেক চেম্বার সভাপতি লতিফের পক্ষে বিবৃতি দেন চট্টগ্রামে মহিউদ্দিনের দলেরই সাত সংসদ সদস্য। প্রকাশ্যে মহিউদ্দিনের এই ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও।
তবে এবার আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় লতিফের সমালোচনাকারী বর্ষীয়ান রাজনীতিক মহিউদ্দিন দলে লতিফের সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “তার সাথে যে সহযোগী আছে। গাড়িতে করে নিয়ে আসে। কেন নিয়ে আসবে? কোন শক্তির বলে? তাদেরকে আমি চিনি। কেন লতিফের সহযোগী হবেন? কেন লতিফকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে যাবেন? তারা কারা? তারা পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি।
“তাদেরকে নেত্রী নমিনেশনে দিয়েছেন সঠিক পথে আসার জন্যে। আসছেন না। তারা খোন্দকার মোশতাকের মতোই গোপনে-প্রকাশ্যে চক্রান্ত করছে। হুমকি প্রদর্শন করছে।”
“শুধু লতিফ নয়, তার সহযোগী যারা আছেন তাদের তালিকা তৈরি করবেন। এক মাস সময় দেওয়া হল। আমাকে তালিকা দেবেন। সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমার জীবনকে বাজি রেখে হলেও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দলের ভেতরে লতিফ সমর্থকদের হুঁশিয়ার করে মহিউদ্দিন বলেন, “আমাদের দলের অনেকে লজ্জা পায় এ সভায় আসতে, তবে টাকা নেয় আমার কাছ থেকে। অনেকে লতিফকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তা ঠিক হবে না। যারা লতিফের পক্ষাবলম্বন করছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশেপাশে দাঁড়িয়ে গুনকীর্তন করছেন, তারা কারা আমি জানি।
“প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী পাগল হয়ে গেছে’। পঁচাত্তরের পরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী পাগল হয়ে গেছেন। পাগলামি নয় অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জীবন দিতে রাজি আছি। সাবধান হয়ে যাবেন।”
১৫ ফেব্রুয়ারির সমাবেশের পর লতিফ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
তার প্রসঙ্গ তুলে পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আপনাদের দেখতে হবে। জিডির তোয়াক্কা করি না। অতীতেও কারাগারে গেছি। দাউদাউ করে চট্টগ্রামে আগুন জ্বলেছে। আবার কী চান, লতিফকে প্রশ্রয় দিয়ে চট্টগ্রামে আগুন জ্বালানোর জন্যে?”
সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “সিনেমার নায়িকা যেমন শাড়ি পাল্টায় লতিফ তেমন দল পাল্টায়। একসময় জামায়াত, পরে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগ।
“এখন তিনি সংসদে কবিতা পড়েন। যখন তিনি সংসদে কথা বলতে ওঠেন সবাই হেসে ওঠে। উনি এরশাদের মতো কবিতা লেখেন। ঠেলায় পড়ে কবি হয়েছেন।”
সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ কে এম বেলায়েত হোসেন বলেন, “জামায়াত-বিএনপির কেউ বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির সাহস করেনি। কিন্তু লতিফ তা করেছে।
“তিনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। এমন কি শক্তি হল, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির পরও তার বিচার হয় না।”
সমাবেশে নগর মহিলা লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “সংসদে লতিফ থেকে সাবধানে থাকবেন। যিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করতে পারেন তিনি বোমা মেরে পুরো সংসদ উড়িয়ে দিতে পারেন।”
সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির আবু হানিফ, জাসদের জসিম উদ্দিন বাবুল, গণআজাদী লীগের নজরুল ইসলাম আশরাফী, সাম্যবাদী দলের অমূল্য বড়ুয়া, নগর আওয়ামী লীগের বদিউল আলম, মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র, কাউন্সিলর মোরশেদ চৌধুরী ও নীলু নাগ এবং নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুও বক্তব্য রাখেন।