বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির জন্য নিজ দলের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে বন্দর নগরীতে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
Published : 15 Feb 2016, 06:24 PM
সোমবার চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে লতিফকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির প্রতিবাদে ‘নাগরিক মঞ্চ, চট্টগ্রাম’ এ সমাবেশ ডাকে। এতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা লতিফকে ‘জামায়াত নেতা’, ‘পাকিস্তানপন্থি’, ‘কুলাঙ্গার’, ‘হাইব্রিড নেতা’ও ‘ভুঁইফোড় রাজনীতিবিদ’হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিনের অনুসারী অধিকাংশ নেতারা উপস্থিত থাকলেও সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকদের কেউ ছিলেন না।
চট্টগ্রামে চেম্বারের নেতা থেকে রাজনীতিতে আসা লতিফের সঙ্গে বন্দরসহ নানা বিষয়ে মহিউদ্দিনের বিরোধ রয়েছে।
সমাবেশে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন এমপি লতিফকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বলেন, “আদালতের কাছে আবেদন, বিচার চলাকালে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা না হলে লালদীঘির মাঠে আবারও সমাবেশ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
লতিফকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “মামলার বিচার আদালত করবে। অনেক বিচার জনগণের হাতে আছে। চট্টগ্রামের মাটিতে চলাফেরা করবেন না। হঠাৎ কেউ উত্তেজিত হয়ে আক্রমণ করতে পারে।
“যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, যদি কোনো তরুণ যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে আঘাত করে, যদি এতে তার মৃত্যু হয়, তাহলে নির্দেশদাতা হিসেবে অপরাধী হতে আমি রাজি আছি। মামলায় আমাকে প্রথম আসামি করতে পারবেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী কাঠগড়ায় যেতে রাজি আছে।”
গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে কেন্দ্র করে লতিফের নামে স্থাপিত বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি দেখে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা বিক্ষোভ শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলাও হয়।
বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য লতিফ শুরুতে বিকৃতির অভিযোগ অস্বীকার করলেও সমালোচনার মুখে পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বিলবোর্ডের ডিজাইনার ছবি বিকৃতি করেন।
লতিফের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ওই ডিজাইনার বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল লতিফের একটি ছবির দেহে জোড়া লাগানোর কথা স্বীকার করেন।
এই ঘটনায় সংসদ সদস্যের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে ডিজাইনার কবীর দাবি করলেও মহিউদ্দিন সমর্থকরা লতিফকেই দায়ী করছেন।
মহিউদ্দিন বলেন, “আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর কাপড় বদলে, মাথা কেটে বসানো হয়েছে। তাই মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি। চক্রান্তকারীরা পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন লোক। যেসব কুলাঙ্গার গোপনে লতিফের সহযোগিতা করছেন তারা সাবধান হয়ে যাবেন।”
এসময় মাঠে সমবেত নেতা-কর্মীরা ‘দালাল, দালাল’ স্লোগান দিতে থাকে।
মহিউদ্দিন বলেন, “চ্যালেঞ্জ করে বলছি সে (লতিফ) কোকেন আমদানির সাথে জড়িত। ইয়াবা বিক্রেতা, চোরাকারবারি, কোকেন কারবারি। সংবাদকর্মীদের বলছি, তার নামের সাথে আজ থেকে আর সাংসদ লিখবেন না।”
লতিফের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি দ্রুত অনুমোদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিও দাবি জানান ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
সমাবেশের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম বেলায়েত হোসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই- ৭৪ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। সারাজীবন রাজনীতি করেছি এসব কুকীর্তি দেখার জন্য নয়।
“কুলাঙ্গারের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় থাকব। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের দরদ কারও চেয়ে কম নয়।”
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে জাতির পিতার অপমান হয়। অপমানে ক্ষোভে অভিমানে মানুষ ফুঁসছে।”
এসময় সুজন মঞ্চ থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর অবমাননা, বীর বাঙালি সইবে না’স্লোগান ধরলে সবাই তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী নগর মহিলা লীগ সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এম এ লতিফকে সাংসদ পদে মনোনয়ন দেওয়ায় একজন জামায়াতকে জয়ী করতে আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম।
“জয়ী হয়ে তিনি (লতিফ) আমাদের বাসায় যান। সেদিন তাকে মুজিব কোট পরিয়ে দেই। মুজিব কোট পরে তিনি আধঘণ্টা অজ্ঞান ছিলেন।”
সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “লতিফের স্ত্রীর নাম ছিল হাসিনা আক্তার। লতিফ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করতেন না। ১৯৯৬ তে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর স্ত্রীর নাম বদলে রাখেন হারুনুর বাহার।”
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নগর যুবলীগ আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদসহ ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।