চট্টগ্রাম নগরীর মহেশখালের ওপর বাঁধ নির্মাণের সমালোচনা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি মু. সিকান্দার খান বলেছেন, জবাবদিহি না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এটা করতে পেরেছে।
Published : 28 Oct 2015, 12:19 AM
তাদের এই বাঁধ নির্মাণের কোনো এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নদী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সিকান্দার বলেন, “এ বাঁধ নির্মাণের ফলে কেউ রক্ষা পাবে আর কেউ ডুবে মরবে।
“একটা সরকারি সংস্থা, হঠাৎ তার মনে হল এখানে একটা বাঁধ দেওয়া দরকার, অমনি সে একটা বাঁধ দিতে পারে না।”
‘জবাবদিহির অভাবের’ সুযোগ নিয়ে তারা এ বাঁধ নির্মাণ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যেভাবে এ বাঁধ দেওয়া হয়েছে দেখে মনে হয়, আমাদের কোনো অভিভাবক নেই।”
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা ও এক্সেস সড়কে জোয়ারের পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ অবস্থা থেকে স্থানীয়দের ‘মুক্তি’ দিতে গত ২ সেপ্টেম্বর মহেশখালে বাঁধ নিমার্ণ কাজ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওইদিন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বাঁধের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মহেশখালে স্লুইস গেটও নির্মাণ করা হবে।
নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে মহেশখালের যাত্রা শুরু। এই খালের বন্দর রিপাবলিক ক্লাব সংলগ্ন অংশে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটির নির্মাণ কাজ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়।
বাঁধের উজানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড দুটির অবস্থান।
বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই ওই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্লুইস গেটের কাজ শেষ না করলে আগামী বর্ষায় এই দুই ওয়ার্ডে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি হবে।
অধ্যাপক সিকান্দার বলেন, “কর্ণফুলি নদীর সঙ্গে কমপক্ষে ৩৫টি খাল যুক্ত আছে। তার মানে এ নদীতে আমরা যে দূষণ ছড়াচ্ছি সেটা শুধু নদীতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এসব খালের মধ্যে দিয়ে সেটা চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।”
আলোচনা সভায় হালদা ও কর্ণফুলি নদী নিয়ে আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া ও চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ইদ্রিছ আলী।
হালদা ও কর্ণফুলি নদীতে বাঁধের কারণে সামাজিক, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাবের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন মনজুরুল কিবরিয়া।
সভায় বাপা চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবু নোমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, উন্নয়নকর্মী জেসমিন সুলতানা পারু ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক শেখ বখতেয়ার উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।