আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর তৃণমূলের সম্মেলন সেরে চট্টগ্রাম নগরের সম্মেলন হবে।
Published : 05 Dec 2022, 01:24 PM
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য ১৮ ডিসেম্বর তারিখ ঘোষণা হলেও শেষ পর্যন্ত তা আটকে গেল।
নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ২৪ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর তৃণমূলের সম্মেলন সেরে চট্টগ্রাম নগরের সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। রোববার পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাছির বলেন, “হাতে গোণা কয়েকটা বাদে ইউনিট সম্মেলনগুলো প্রায় সব হয়েছে। আমাদের ১৩২টা ইউনিট আছে সেখানে আমরা ১২০টির সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। ওয়ার্ড হল আমাদের ৪৪টি। সেখানে আমরা ৩টা ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন করেছি।
“বাকিগুলো এরমধ্যে হত। যেহেতু ৪ ডিসেম্বর জনসভা উপলক্ষে আমাদের কিছু কিছু নেতৃবৃন্দ বললেন যে, আমরা যদি সম্মেলন এবং জনসভা একই সাথে করতে যাই, হয়ত জনসভায় কোনো প্রভাব পরতে পারে। এবং আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে...।”
নাছির বলেন, “পরে আমি যোগাযোগ করলে উনি বললেন যে, আপনারা পত্রিকায় সংবাদ দিয়ে সম্মেলন স্থগিত রাখেন। সে হিসেবে আমরা স্থগিত রেখেছি। এখন যে সময় আছে এরমধ্যে ওয়ার্ড সম্মেলন আর থানা সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
“গত পরশুদিন আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহবুব উল আলম হানিফ ভাই এবং আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাথে কথা হয়েছে গতকাল। উনারা বললেন যে, না- ওয়ার্ড এবং থানার সম্মেলন করার পরেই মহানগরের সম্মেলন হবে। সে হিসেবে ওবায়দুল কাদের ভাই বললেন যে, জাতীয় সম্মেলনের পরে তোমরা সম্মেলন কর। তাই ১৮ তারিখ আর হচ্ছে না”
রোববারের জনসভা সামনে রেখে গত ৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক প্রতিনিধি সভায় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছিলেন, “৪ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিল। যেহেতু সেদিন নেত্রীর শুভাগমন, তাই করতে পারছি না। মাননীয় নেত্রীর কাছে সদয় অনুমোদন নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনটি করতে চাই।”
এক বছর আগে শুরু হওয়া তৃণমূলের সম্মেলন শেষ না হওয়ায় সেদিন ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন স্বপন।
এর এক সপ্তাহ পর ১৬ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে নগর কমিটির অধীন ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন স্থগিত করা হয়। সেদিনই আ জ ম নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, ওয়ার্ড এবং থানার সম্মেলনের পরই নগর সম্মেলন হবে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বক্তব্যে স্পষ্ট হল, নগর আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের আপত্তির কারণেই মধ্য নভেম্বরে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জনসভার আগে অনেক ধরনের শঙ্কা ছিল। এমনকি মিডিয়ার অনেক ভাইয়েরা আমাকেও অনেকে প্রশ্ন করেছেন। অন্যদেরও প্রশ্ন করেছেন। আমাদের কিছু কিছু পছন্দ অপছন্দের বিষয় থাকে, এটা বড় একটা সংগঠনে থাকে। এটার কোনো প্রতিফলন এখানে ঘটবে কিনা? এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে কিনা?
“কালকের জনসভা অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, সুশৃঙ্খল এবং শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার এবং সভাস্থল ত্যাগের আগেও দাঁড়িয়ে প্রায় ১০ মিনিট আমাদের সাথে কথা বলেছেন। এত বেশি খুশি হয়েছেন জনসভা দেখে…। চট্টগ্রাম নিয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা অনেকে উনার কর্ণগোচর করেছিল। কালকের মিটিং দেখে উনার কাছে সবগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।”
নাছিরের এই বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টিও আবার সামনে এলো।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি ধারা চলছে। এর একটি অংশ নগর কমিটির সভাপতি ও তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই ধারাটির নেতাকর্মীরা আছেন তার বড় ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে।
আরেকটি ধারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
চট্টগ্রাম নগরের ওয়ার্ডগুলোর অধীনে ইউনিট শাখার সম্মেলন ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই সম্মেলনস্থল ঘিরে অবস্থান, পাল্টা সম্মেলন ও এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে।
শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সদস্য ফরম না দেওয়া, সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ না জানানো, নগরের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মেলন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা, একপক্ষীয় সম্মেলন আয়োজন ও কমিটিতে জ্যেষ্ঠদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে।
কেন্দ্রে এ বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পর গত বছরের ডিসেম্বরে একবার ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছিল।
বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং ইউনিট সম্মেলন বিষয়ে আপত্তি জানাতে আরেকটি কমিটি গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরও বিরোধ মেটেনি।
তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। তবে সেবার সম্মেলন হয়নি, কমিটিরি ঘোষণা এসেছিল ঢাকা থেকে। তার আগে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে।
২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পর কমিটির সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। কিন্তু সম্মেলন আর হয়নি।
এরপর চলতি বছর ১ অক্টোবরে ও ৪ ডিসেম্বর দুই দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেও তা হয়নি।
পুরনো খবর
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত, নগর সম্মেলন অনিশ্চয়তায়
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১ অক্টোবর: হানিফ
চট্টগ্রামে তৃণমূলে সম্মেলন শেষ হল না কেন, ক্ষোভ স্বপনের
কাউন্সিল করতে গিয়ে বিভক্ত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ