চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৮ ডিসেম্বর, দক্ষিণ জেলার ১২ ডিসেম্বর।
Published : 09 Nov 2022, 08:28 PM
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন দীর্ঘদিনেও শেষ করতে না পারায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
আগামী ৪ ডিসেম্বর এই তিন সাংগঠনিক জেলার আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য জনসভা উপলক্ষে আয়োজিত যৌথ প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাশাপাশি আগামী ১৮ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের এবং ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন।
সভায় স্বপন বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করে এসেছি। ৪২ বছর বয়সে যদি জননেত্রী আমাকে আওয়ামী লীগের মতো সম্ভ্রান্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করতে পারেন, তাহলে কেন দীর্ঘদিন ধরে যারা ছাত্রলীগ করছেন-চট্টগ্রামের অগণিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ করা নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আসতে পারবেন না?
“আমার খুব স্বপ্ন ছিল। আমি ক্ষণিকের অতিথি। হয়ত আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনাদের সাথে কাজ করব। ওয়ার্ডের কাউন্সিল হয় না। মহানগরের কমিটি ঢাকা থেকে হয়। আমার স্বপ্ন ছিল ইউনিটের ওয়ার্ডের কাউন্সিল করব। সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ করা তাজা প্রাণ, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আসীন হয়ে দলকে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করবে।”
“কিন্তু দুঃখের বিষয় সামনের মাসে রোজা, তার পরের মাসে কোরবানি, তারপর হজ, তারপর দুর্গা পূজা, তার পরের মাসে করোনা- বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে আমার এই উদ্যোগকে অনেকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেছে।”
স্বপন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “মনে করেছেন, আমি কারও পক্ষপাতিত্ব করছি। ইয়েস আমি পক্ষপাতিত্ব করি। সেই পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ। কেন পক্ষপাতিত্ব করব না?
“৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে সফল করার জন্য গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। একইভাবে ওয়ার্ড, থানা, ইউনিট কাউন্সিল সবকিছু চলমান থাকবে। নির্ধারিত ছিল ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলার সম্মেলন। যেহেতু জনসভা তাই ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলার সম্মেলন করব।”
স্বপন বলেন, “৪ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিল। যেহেতু সেদিন নেত্রীর শুভাগমন, তাই করতে পারছি না। মাননীয় নেত্রীর কাছে সদয় অনুমোদন নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনটি করতে চাই।”
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি ধারা চলছে। এর একটি নগর কমিটির সভাপতি ও তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী, আরেকটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্যসাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
চট্টগ্রাম নগরের ওয়ার্ডগুলোর অধীনে ইউনিট শাখার সম্মেলন গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই সম্মেলনস্থল ঘিরে অবস্থান, পাল্টা সম্মেলন ও এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে।
শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সদস্য ফরম না দেওয়া, সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ না জানানো, নগরের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সম্মেলন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা, একপক্ষীয় সম্মেলন আয়োজন ও কমিটিতে জ্যেষ্ঠদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে।
নগর আওয়ামী লীগের ১৫টি থানা, ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১২৯টি ইউনিট আছে। ইতোমধ্যে ১০৬টি ইউনিট এবং ২টি ওয়ার্ড সম্মেলন করা হয়েছে।
বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং ইউনিট সম্মেলন বিষয়ে আপত্তি জানাতে আরেকটি কমিটি গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপরও বিরোধ মেটেনি।
তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। তবে সেবার সম্মেলন হয়নি, কমিটিরি ঘোষণা এসেছিল ঢাকা থেকে। তার আগে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে।
২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পর কমিটির সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। কিন্তু সম্মেলন আর হয়নি। এরপর ১ অক্টোবরে ও ৪ ডিসেম্বর দু’দফায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেও তা হয়নি।