কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নতুন সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই আপত্তি তুলেছেন। পাল্টাপাল্টি সম্মেলনও হয়েছে কয়েকটি ইউনিটে।
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর ভাষায়, সংগঠনের জন্য এটা মোটেও ‘সুখকর নয়’।
তবে অন্য পক্ষের নেতারা বলছেন, বড় সংগঠনে ‘দুয়েকটি’ সমস্যা থাকতেই পারে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তারা তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করতে চান।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধারা সক্রিয়। এক পক্ষ প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তিনি চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি এবং তিনবারের মেয়র ছিলেন। অন্য পক্ষটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
চট্টগ্রাম নগর কমিটির সম্মেলন সামনে রেখে তৃণমূলের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলোর সম্মেলন করার কাজ শুরু হয়েছে চলতি মাসে। এর আগে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় সদস্য সংগ্রহ অভিযান।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে অক্টোবরে সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা। এরপর এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তারা কিছু নির্দেশনাও দেন।
সবশেষ ১৪ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সদস্য বাছাই ও তৃণমূলের সম্মেলন আয়োজনে নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের তত্ত্বাবধানের প্রস্তাব ওঠে। পাশাপাশি আলোচনা ছাড়া ইউনিট সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ নিয়েও ভিন্নমত দেন নগরের সহ-সভাপতি ও সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
সেই সভায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের এসব আপত্তি না মেনে ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাধ্যবাধকতা’ আছে মন্তব্য করে পাঁচটি ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির।
শুরুতেই বিরোধ, পাল্টা সম্মেলন
১৬ নভেম্বর ইউনিট সম্মেলন শুরুর দিনই নগরীর ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন স্থগিত করা হয়।
রফিকুল ইসলাম বাপ্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কার্যনির্বাহী কমিটির সভা (১৪ নভেম্বর) চলাকালে লিখিতভাবে জানিয়েছি, আমাদের সদস্য ফরম দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও পুলিশ প্রহরায় একপক্ষীয়ভাবে ইউনিটগুলোর সম্মেলন করা হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের কাউকে সদস্য করা হয়নি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতপন্থি, এমনকি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরও সদস্য করা হচ্ছে।
“খ ইউনিটে যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি এনডিপি করতেন। ক ইউনিটে যিনি সভাপতি হয়েছেন তিনি ২০০৮ সালের পর বিএনপি থেকে এসে দলে যোগ দেন। আমরা যারা ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি, আমরা সদস্যও হতে পারব না, আর বহিরাগতরা নেতা হবে। এভাবে সম্মেলন হচ্ছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, “যারা বিরোধিতা করছে তাদের জিজ্ঞেস করুন, কেন করছে। কারো যোগ্যতা থাকলে সদস্য পদ পাবে। আওয়ামী লীগে সদস্য হওয়া এত সহজ না।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটেই পাল্টাপাল্টি সম্মেলন করেছে নাছির ও মহিউদ্দিনের অনুসারীরা।
ওয়ার্ড আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. এমদাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৭ বছর আগে তিন মাসের জন্য করা ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন অবৈধভাবে সম্মেলন করছে। নগর কমিটিতে লিখিত আপত্তি আবেদন করে সদস্য ফরম নিতে হয়েছে আমাদের।
“অথচ যাদের পরিবারে বিএনপি-জাতীয় পার্টি করা লোকজন, তারা সদস্য হয়েছে। সদস্য বাছাই ওয়ার্ড কমিটিতে হয়নি। ক ইউনিটে যিনি সভাপতি হয়েছেন তিনি বিএনপি করতেন। তার পুরো পরিবার বিএনপি। মহিউদ্দিন ভাইয়ের অনুসারী জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে করা একতরফা সম্মেলনের প্রতিবাদে আমরা সম্মেলন ও ইউনিট কমিটি করেছি।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, “কাউন্সিলরদের ভোটে সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। যারা ১৯৯৬ সাল থেকে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত, তারা নেতৃত্ব পেয়েছেন।
এর আগে ২০ নভেম্বর জামালখান ওয়ার্ডের ক ইউনিটের নির্ধারিত সম্মেলন হয়নি। এখানকার সদস্য সংগ্রহ নিয়ে অভিযোগ তুলে নগর কমিটির কাছে লিখিত আপত্তি দেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাশেদুল আলম।
সংগঠন ‘ক্ষতিগ্রস্ত’, সম্মেলন ‘চলবে’
তৃণমূলের সম্মেলন বিষয়ে জানতে চাইলে নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেভাবে তৃণমূলের সম্মেলন হচ্ছে তা বৈধভাবে হচ্ছে না। সদস্য নেই, সদস্য ছাড়া তো হয় না। এভাবে তৃণমূল সম্মেলন হয় না। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।”
আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি তথ্য ফরম যাচাই বাছাই করার কথা বলেছিলেন।
“সেখানে যারা টিকবে তাদের সদস্য করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠনের সাথে যুক্ত কাউকে তো আমরা সদস্য করতে পারি না। তথ্য ফরম টা কী? অতীতের তথ্য। আপনি কোনো দল করতে কিনা।”
পাল্টা সম্মেলন নিয়ে রেজাউল বলেন, “এটা সংগঠনের জন্য কোনো অবস্থাতেই ভালো না। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তৃণমূলে যেভাবে পাল্টাপাল্টি সম্মেলনে হচ্ছে তা সংগঠনের জন্য সুখকর নয়।”
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নগরের রাজনীতিতে নাছিরের অনুসারী নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ করা লোকের তো অভাব নেই। যে কেউ আওয়ামী লীগ নাম ধরে বিরোধিতা করতে পারে। এর কোনো যুক্তি নেই। লক্ষ লক্ষ কর্মী সমর্থক এ দলের। পাল্টা সম্মেলন করতে তো কিছু ভিত্তি দেখাতে হবে।… যে কেউ নিজেরা সম্মেলন করলে তো হবে না।”
হাসনী বলেন, “১১টি ওয়ার্ডে ৩৩টি সম্মেলন হয়ে গেছে। দুয়েকটিতে সমস্যা হবে, কারণ এটা গণসংগঠন। এটাকে সমস্যা মনে করি না। কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। রোববার থেকে আরও ছয়টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে চলবে। ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ইউনিট সম্মেলন শেষ হবে।
“এরপর ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করব। এটাই নগর আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে।”