গ্রেপ্তাররা ৯ লাখ টাকা দাবি করে বলে পুলিশের ভাষ্য।
Published : 26 Jan 2025, 05:39 PM
চট্টগ্রামে তিন ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যারা সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলের অনুসারী।
নগরীর পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড়ের শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের বাগান থেকে শনিবার রাতে অপহৃতদের উদ্ধার করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- বাছির আহম্মদ ওরফে রানা (২৭), মো. জিহাদ (২৪), মো. আরিফ (২৪) ও মো. ইমন ওরফে সাদ্দাম (২৩)।
তাদের মধ্যে বাছিরের বিরুদ্ধে ১০টি, ইমনের বিরুদ্ধে আটটি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা আছে।
উদ্ধার হওয়া তিনজন হলেন- সমীর দাশ (৪৫), কেশব মিত্র দাশ (৪৩) ও রুবেল রুদ্র (৪২)। তাদের মধ্যে কেশব মিত্র পুরহিত এবং অপর দুজন শালকর ব্যবসায়ী।
রোববার নগর পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বলেন, শনিবার দিনের বিভিন্ন সময়ে আসামিরা হিলভিউ এলাকা উদ্ধার হওয়া তিন ব্যক্তিকে থেকে অপহরণ করে হিলভিউ ১ নম্বর রোডের নির্মাণাধীন একটি ভবনে আটকে রেখে মারধর করে এবং ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে তাদের শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনে হাত-পা বেঁধে ফের আটকে রাখে।
খবর পেয়ে রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় আরও কয়েকজন পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়াদের কাছ থেকে বেশকিছু ধারালো অস্ত্র এবং পাঁচটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
অপহৃতরা পরষ্পর পরিচিতি জানিয়ে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রুবেল রুদ্রকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এবং সমীরকে বেলা আড়াইটার দিকে নিজ নিজ লন্ড্রি থেকে অপহৃত হন।
“অনেকেই মনে করেছিল রুবেল ও সমীরকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছেন। তাদের বিষয়ে জানতে পরিচিতরা কেশব মিত্রকে পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলেন। কেশব বিকালে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যাবার পথে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অপহরণকারীরা হিলভিউ ১ নম্বর সড়ক থেকে তাকে একটি অটোরিকশা করে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলেও তাদের ধরতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানানোর পর তারা অভিযানে যায়।”
গ্রেপ্তাররা সাবেক ছাত্রদল নেতা বার্মা সাইফুলের ‘অনুসারী’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশ যতটুকু জেনেছে গ্রেপ্তার হওয়ার অপহরণকারীরা সবাই বার্মা সাইফুলের অনুসারী।
বায়েজিদ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অপরাধের ঘটনায় নাম আসে সাবেক ছাত্রদল নেতা বার্মা সাইফুলের। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ এলাকার লোকজন মানববন্ধন করেছে বলেও স্থানীয়দের ভাষ্য।
রইছ উদ্দিন বলেন, তাকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। কার কী রাজনৈতিক পরিচয় সেটি আমাদের বিবেচ্য নয়।
এ বিষয়ে বার্মা সাইফুলের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সাইফুলকে ২০২১ সালের ১৭ জুন বায়েজিদ থানা পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছিল। ওই সময় ছাত্রদলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল যে ‘প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে’ পুলিশ বার্মা সাইফুলকে গুলি করে।
তবে সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ বলেছিল বার্মা সাইফুল তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। বার্মা সাইফুলের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ১৮টি, তার অপর দুই ভাই সাইদুল ও সবুজের বিরুদ্ধে ১৮ ও ২১টি করে মামলা আছে।
বার্মা সাইফুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ভাষ্য ছিল, ঘটনার দিন রাত পৌনে ২টার দিকে বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে দুইটি মোটর সাইকেল দ্রুত চেকপোস্ট অতিক্রম করে চলে গেলেও একটি মোটর সাইকেল রাস্তায় ফেলে দুই যুবক পাহাড়ের দিকে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের পিছু নিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে।
দুই পক্ষের গোলাগুলির পর পাহাড়ের ঢালে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুলকে গ্রেপ্তার করার কথা তখন বলা হয়েছিল।