তালাবদ্ধ ঘর থেকে পুরুষ ব্যক্তিটির লাশ উদ্ধারের পর খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার গৃহসঙ্গী নারীকে।
Published : 06 Jul 2023, 06:22 PM
চট্টগ্রামে পাঁচ দিন আগে তালাবদ্ধ ঘর থেকে যে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছিল, তিনি যে নারীর সঙ্গে বাসায় থাকতেন তিনিই তাকে খুন করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।
খুলনা নগরীর ফুলবাড়ি এলাকায় বোনের বাসা থেকে গত সোমবার রোজিনা বেগম ওরফে রোজী (২৩) নামে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে চট্টগ্রামে এনে আদালতের অনুমতি নিয়ে দুদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার পিবিআই কর্মকর্তারা আকরাম উল্লাহ (৪৩) নামে ওই কভার্ড ভ্যান চালকের খুনের আদ্যোপান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
গত ১ জুলাই রাতে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকার একটি ভবনের তালাবদ্ধ বাসা থেকে আকরামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ও রোজী স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
৩০ জুন বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল আকরামের। তবে নতুন ভাড়াটিয়া আসার পরও বাসা বুঝিয়ে না দেওয়ায় বাড়ির কেয়ারটেকার প্রতিবেশীদের নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রেপ্তার রোজি ও মৃত আকরাম দুজনেরই আলাদা সংসার আছে। তবে তারা চট্টগ্রাম নগরীতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
আকরামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। সেখানে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকে। বাগেরহাটের রোজির সঙ্গে তার স্বামী আগে চট্টগ্রামে থাকলেও কয়েক বছর আগে কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। রোজী চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে এখানেই থেকে যান। তার মেয়ে থাকে খুলনায় বোনের বাসায়।
কয়েক বছর আগে আকরামের সঙ্গে রোজীর পরিচয়ের পর তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, সেই সূত্রে তারা একসঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
খুনের কারণ নিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, আকরাম বিভিন্ন সময়ে রোজীর কাছ থেকে অরথ নিতেন, আবার জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন, এনিয়ে রোজীর মনে ক্ষোভ জন্মে।
পুলিশ সুপার নাঈমা বলেন, “রোজীর মোবাইলে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল, যেগুলো সে তার সৌদি প্রবাসী স্বামীকে পাঠানোর জন্য তুলেছিল। ৩০ জুন রাতে আকরাম ছবিগুলো দেখে, জোর করে রোজীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে অসুস্থ থাকায় অস্বীকৃতি জানায়। এসময় আকরাম তাদের সম্পর্কের কথা রোজীর স্বামীকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
“এনিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটিতে আকরামের অণ্ডকোষ চেপে ধরে রোজী। এসময় আকরামের নাক দিয়ে রক্ত চলে আসে। শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় আকরামকে গলায় রশি বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রোজী। না পেরে লাশটি খাটের নিচে রেখে দেয়।”
৩০ জুন রাতে আকরামকে খুন করার পর রোজী সকালে খুলনার বাসের টিকেট কাটেন। তারপর ঘরে থাকা রক্তমাখা ওড়না, তোয়ালে, আকরামের ব্যবহৃত গেঞ্জি কাছের একটি নালায় ফেলে দেন। এরপর রাতে রাতে খুলনার বাসে উঠে পড়েন।
আকরাম খুনের ঘটনায় তার ছেলে একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় রোজীকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।