৯৬ জন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ফুটে উঠেছে নদী, নদী তীরের জীবন, নদী দখল ও দূষণে বিপন্ন নদীর প্রাণের নানা রকম চিত্র।
Published : 25 Oct 2024, 08:02 PM
নদীর নানা রূপ ও প্রতিবেশের দূষণের ছবি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে হয়ে গেল দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
শুক্রবার একাডেমির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন গ্যালারিতে প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করেছিলেন নানা বয়সীরা।
দেশের ৯৬ জন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ফুটে উঠেছে নদী, নদী তীরের জীবন, নদী দখল ও দূষণে বিপন্ন নদীর প্রাণের নানা রকম চিত্র।
ছবিতে উঠে এসেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা নদীর নানা চিত্র। এরমধ্যে কোনটা প্রমত্তা আবার কোনটির স্রোতধারা শীর্ণ হয়ে এসেছে। কোথাও বর্ষায় উত্তাল জলধারা, কোথাও শীতে কুয়াশা ঢাকা নদীবক্ষ আবার কোন কোনটি দারুণ খরতাপে শুকিয়ে চৌচির।
শিল্পের বর্জ্যের দূষণ যেন গলাটিপে ধরেছে কোন কোন নদীর। কালো ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে আছে নদী ও নদী তীরের আকাশ।
আবারও কোথাও সুন্দরের প্রসারিত দুহাতে নদী অনন্য রূপে সাজিয়েছে এই বদ্বীপভূমিকে। শীতের সকালে স্নিগ্ধ নদীর জলে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে জীবিকার জন্য চলমান জীবনও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
সাত বছরের সন্তান অপরাজিতাকে নিয়ে প্রদর্শনীতে আসা বিমলেন্দু দাশ বলেন, "আমাদের দেশটা তো নদীরই দেশ। নদী সম্পর্কে তাই সন্তানকে জানাতে চাই। ছবি দেখতে শিশুরা খুব পছন্দ করে। তাই মেয়েকে নিয়ে এসেছি।"
শিল্পকলা একাডেমিতে ছবি আঁকার ক্লাসের শেষে প্রদর্শনীতে আসা শিক্ষার্থী কামরুল হাসান অনেক রকম নদীর ছবি দেখে অবাক হয়েছেন।
”এতগুলো নদী সামনা সামনি দেখা তো সম্ভব না। এখানে একসাথে অনেক নদীর ছবি পেয়েছি। এটাই আমার ভালো লেগেছে।"
নদী ও নদী তীরের মানুষের জীবন নিয়ে এ প্রদর্শনী আয়োজন করেছে ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ। সহযোগিতায় রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাস।
ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের গবেষক মো. সাকিবুল হক সাকি বলেন, নদীর জীবন ও জীববৈচিত্র নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন। প্রান্তিক নদীগুলোকে মানুষের সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও রয়েছে।
"সাধারণত নদীর ছবি প্রদর্শনীতে পদ্মা, মেঘনার মতো বড় নদীগুলোকেই দেখা যায়। তবে এ প্রদর্শনীতে হরিপুর নদী, যাদুকাটা নদীর মত আপাত অপরিচিত নদীগুলোকেও দেখানো হচ্ছে।"
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, "দেশে নদী শুমারি হয়েছে। যাতে অনেক বিভ্রান্তি থাকলেও সেটি ইতিবাচক। দেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষ ও সরকার মিলে চেষ্টা করলে এটা সম্ভব। এই ধরনের আয়োজন মানুষকে নিয়ে আগ্রহী করবে।"
চট্টগ্রাম নদী রক্ষা আন্দোলনে সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, নদী নিয়ে সব তথ্য সহজে পেতে নদীগুলোর ‘প্রোফাইল’ তৈরি জরুরি।
চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি বাসব শীল নদীর পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন।
চট্টগ্রামের আগে এ প্রদর্শনীর দুই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা ও রাজশাহীতে।