‘ব্র্যাডম্যানের চেয়ে কম নয় বাবর’

পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ককে নিয়ে চমকপ্রদ মন্তব্য করলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 05:01 AM
Updated : 6 May 2023, 05:01 AM

স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনায় আসা মানেও কোনো ক্রিকেটারের জন্য এর চেয়ে বড় স্বীকৃতি আর হয় না। সেখানে বাবর আজমকে স্রেফ তুলনাই করা হচ্ছে না, তাকে একই কাতারে রাখছেন রমিজ রাজা। পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ককে নিয়ে চোখ কপালে ওঠার মতো এমন মন্তব্যই করলেন সাবেক অধিনায়ক। রমিজের মতে, ব্র্যাডম্যানের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন বাবর।

ব্র্যাডম্যানকে মনে করা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। যে কোনো ক্রীড়ায় সর্বকালের সেরা নিয়ে সবসময় বিতর্কের অবকাশ থাকলেও ক্রিকেটে এই একটি জায়গায় সংশয় খুব একটা নেই। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্র্যাডম্যান মোটামুটি স্বীকৃত।

গত শতাব্দীর বিশ দশকের শেষভাগ থেকে চল্লিশ দশকের শেষভাগ পর্যন্ত যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন এই ব্র্যাডম্যান, যে ধারাবাহিকতা, দাপট আর ব্যাটসম্যানশিপের ছাপ রেখেছেন, তা ক্রিকেটে রূপকথা হয়ে আছে, এখনও বিস্ময় জাগায় সেসব। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়, ৫২ টেস্টে ২৯ সেঞ্চুরি এবং আরও কিছু রেকর্ড কখনও কেউ ভাঙতে পারবে না বলেও মেনে নিয়েছেন মোটামুটি সবাই।

যখন বলা হচ্ছে, সেই ব্র্যাডম্যানের চেয়ে কম নন বাবর, তখন তো কৌতূহল চূড়ায় উঠতে বাধ্যই।

রমিজ অবশ্য বলছেন বাবরের সীমিত ওভারের পারফরম্যান্সের কথা। ব্র্যাডম্যান খেলা ছেড়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মেরও প্রায় দুই যুগ আগে। তার টেস্ট পারফরম্যান্সের সঙ্গেই বাবরের ওয়ানডে ধারাবাহিকতার তুলনা করছেন রমিজ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ কিছু রেকর্ড এর মধ্যেই নিজের করে নিয়েছেন বাবর। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে যেমন আরেকটি রেকর্ড তিনি গড়েছেন। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার পূর্ণ করেছেন তিনি একশর কম ইনিংস খেলে। ইনিংসটিকে পরে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। ওয়ানডেতে তার ১৮ সেঞ্চুরি হয়ে গেল স্রেফ ৯৭ ম্যাচেই। এই ধারাবাহিকতাও আসলে অবিশ্বাস্যই।

ম্যাচের পর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রমিজ বললেন বাবরের এই ধারাবাহিকতার কথাই। আলোচনা শুরুই করলেন তিনি ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে বাবরের এই চমকপ্রদ তুলনা দিয়ে।

“ডন ব্র্যাডম্যানের চেয়ে কম নয় বাবর আজম। সাদা বলের ক্রিকেটে তো পরিসংখ্যান ও সৌন্দর্যের দিক থেকে দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড় হয়েই গেছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ সংস্করণে এতটা ধারাবাহিকতা…আগে কখনও কাউকে এমন অর্জন করতে দেখিনি আমি।”

বাবর কেন এতটা ধারাবাহিক, সেই ব্যাখ্যাও করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান রমিজ।

“এটির (ধারাবাহিকতা) ভিত্তি হলো তার যে টেকনিক, যে টেম্পারমেন্ট… যেভাবে সে গ্রাউন্ড শট খেলে ও মাঠে ফাঁক খুঁজে বের করে, যেভাবে লম্বা ইনিংস খেলে… তার কোনো টেকনিক্যাল ইস্যু নেই, ঘাসের পিচ হোক বা করাচির মতো পিচ, যেখানে বোলারদের ধুঁকতে হয়, তাকে কোথাও কেউ আটকাতে পারে না।”

“সে খুব স্বচ্ছ ব্যাটিং করে। খুবই আঁটসাঁট ডিফেন্স তার। সবচেয়ে বড় কথা, সে ব্যাটিংকে শ্রদ্ধা করে, কোনো কিছু প্রাপ্য ধরে নেয় না। এমন নয় যে গত ১৫ ম্যাচে রান করছে বলে ১৬তম ম্যাচে ঝুঁকি নিয়ে খেলবে বা ভিন্ন কিছু করবে। সে একই ঘরানায় প্রতি ম্যাচ খেলে। প্রথম ২-৩ ওভারে সতর্কভাবে সে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে, পিচ পড়ার চেষ্টা করে। এরপর ছন্দ গড়ে তোলে।”

পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার রমিজের মতে, নিজেকে ভেঙে-গড়ে আরও পোক্ত করে এগিয়ে চলেছেন বাবর।

“তার স্ট্রাইক রেটও ক্রমে বেড়ে চলেছে, কারণ আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। দেখুন, সে সাদা বলের ক্রিকেটে সহজাত ব্যাটসম্যান ছিল না। সমস্যা ছিল। কিন্তু গত ১-২ বছরে সে যেভাবে উন্নতি করেছে, নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, নিজের রেঞ্জ যেভাবে বাড়িয়ে নিয়েছে, এটা চোখধাঁধানো। তার ধারাবাহিকতা অসাধারণ।”

দ্রুততম ৫ হাজার রানের রেকর্ডে বাবর পেছনে ফেলেন হাশিম আমলা (১০১ ইনিংস), ভিভ রিচার্ডস (১১৪ ইনিংস), বিরাট কোহলির (১১৪ ইনিংস) মতো ব্যাটসম্যানদের। রমিজ আলাদা করে বললেন রিচার্ডসের কথা, যাকে অনেকেই মনে করেন ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান।

“দ্রুততম ৫ হাজার রান সে করেছে এবং বড় বড় নায়কদের সে পেছনে ফেলেছে। এটা অনেক বড় অর্জন। ভিভ রিচার্ডসকে টপকে যাওয়া অনেক বড় অর্জন। কারণ, আমাদের জমানায় এবং এমনকি এখনও, বিরাট কোহলির প্রিয় ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস, ইমরান খানেরও প্রিয় ছিল ভিভ রিচার্ডস.... নিজের সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল ভিভ। কিন্তু বাবর আজম অবিশ্বাস্যভাবে রেকর্ড গড়ে যাচ্ছে।”

রেকর্ড গড়ার ম্যাচে সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানকে বড় জয় এনে দিয়েছেন বাবর। এই জয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছে পাকিস্তান। সেই কৃতিত্ব বাবরকেই দিলেন রমিজ।

“তিন সংস্করণে দুনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান সে প্রায় হয়েই গেছে। এবং তার কারণেই পাকিস্তান এখন ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হয়ে গেছে। পাকিস্তানকে অনেক অভিনন্দন, বাবর আজমকে শুভেচ্ছা।”

“এখান থেকে এটাই বোঝা যায় যে, আপনি যদি নিজের মানসিকতা ঠিক রাখেন এবং দল এককাট্টা হয়ে খেলে, তাহলে আর কোনো সমস্যা হয় না। বাইরে থেকে যতই সমালোচনা হোক, যদি কেউ নিজেদের বৃত্তে থাকে এবং সেখানে কেবল গ্রেটনেস নিয়েই আলোচনা হয়, তাহলে আকাশই ছোঁয়া যায়।”

পাকিস্তানের ক্রিকেটে যদিও বাবরের সমালোচকের অভাব নেই। বিশেষ করে তার নেতৃত্ব নিয়ে সাবেক ক্রিকেটারদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন প্রায়ই। কিন্তু রমিজের মতে, বাবরের নেতৃত্বের কারণেই পাকিস্তান নতুন উচ্চতা ছুঁতে পারছে।

“পাকিস্তানের নেতৃত্বে বাবর আজম পরিবেশই এমন রেখেছে, তার লক্ষ্য এতটা পরিষ্কার যে… হ্যাঁ, স্কিল কখনও ওপর-নিচ হতে পারে, কিন্তু দলের সবাই খেলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য। এটা দারুণ তরতাজা ব্যাপার। কারণ এমন দুটি দলের অংশ ছিলাম, যেখানে গ্রেটনেস অর্জন করার জন্য অনেক কষ্ট করে আবহ তৈরি করা হয়েছিল এবং তা ধ্বংস হতেও দেখেছি। এভাবে প্রতিভা শেষ হয়ে যেতেও দেখেছি।”

“গ্রেটনেস অর্জন করার আবহ ঠিক না করতে পারলে যত ভালো খেলোয়াড়ই থাকুক না কেন, ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। এই দলটা থিতু, বাবর আজমকে তারা সম্মান করে। শুধু এই দল নয়, গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তাকে সম্মান দেয়। তার জন্য আমার মতো ক্রিকেটারদেরও সম্মান মেলে।”