শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ দলে এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ফেরানোর কারণ জানালেন প্রধান নির্বাচক।
Published : 14 Feb 2024, 09:23 AM
দুজন যদিও দেশের ক্রিকেটের দুই প্রজন্মের প্রতিনিধি, তবু একটা জায়গায় দুজনকে রাখা যায় একই বিন্দুতে। সেটি আশাহত হওয়ার গল্প। দুজনই প্রতিভাবান, দুজনকে নিয়েই ছিল অনেক আশা। দুজনের কেউ সেভাবে পারেননি সম্ভাবনার প্রতিদান দিতে। এবার নতুন পথের শুরুতেও একই প্রান্তে আছেন এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দুজনের দিকেই আশাভরে তাকিয়ে নির্বাচকরা ও জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে যে ৬টি পরিবর্তন আনা হয়েছে আগের সিরিজ থেকে, সেখানে টপ অর্ডারে বদল এই দুটি। দলে ফেরানো হয়েছে এনামুল ও নাঈমকে।
দলে আসা-যাওয়ার পালার সঙ্গে অভ্যস্ত দুজনই, কিংবা বলা যায় তাদের আশা-যাওয়া অনেকবারই দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। থিতু হতে পারেননি কেউই।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি করেছিলেন এনামুল। এরপর দেশের হয়ে আরও ১৮ টি-টোয়েন্টি খেলে কোনো ফিফটি করতে পারেননি। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরেন তিনি দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর পর। ফিরে ৭ ইনিংস খেলে একটিতেও ৩০ ছুঁতে পারেননি। তাতেই আবার জায়গা হারিয়েছিলেন।
এই সংস্করণে নাঈমের সাফল্য তুলনায় একটু বেশি। দলে আসা-যাওয়ার পর্বও বেশি তার। ২০১৯ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম সিরিজে ভারতে যে সম্ভাবনার ছাপ তিনি রেখেছিলেন, পরে নানা সময় কেবল কিছু ঝলক দেখিয়েছেন, তা পূর্ণতার পথে এগোতে পারেননি। তার ৩৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ফিফটি ৪টি। সবশেষ ১০ টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি করতে পারেননি।
দেশের হয়ে এই সংস্করণে সবশেষ তাকে দেখা গেছে ২০২২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে। গোটা সিরিজ তাকে সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তার রান ছিল ২, ১৩ ও ৬।
সেই এনামুল ও নাঈমকে এবার কেন ফেরানো হলো শ্রীলঙ্কা সিরিজে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেই ব্যাখ্যা শোনালেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।
“বিপিএলে দুজনই ভালো পারফর্ম করেছে। ওদেরকে দেখে মনে হয়েছে, ভালো টাচে আছে। দুজনেরই অভিজ্ঞতা আছে এই ফরম্যাটে। নাঈম তো ভালো ইনিংস খেলেছে বেশ কিছু। টিম ম্যানেজমেন্টেরও ওদেরকে দেখে ভালো মনে হয়েছে। আশা করি, এবার ওরা ভালো করবে।”
বিপিএলে নাঈমের দল দুর্দান্ত ঢাকা সবার তলানিতে থাকলেও এখনও পর্যন্ত রান সংগ্রহে সবার ওপরে তিনিই। ৯ ইনিংসে ২৬৬ রান করেছেন ১২৭.২৭ স্ট্রাইক রেটে। তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের (১১১.৩০) চেয়ে যা ঢের ভালো।
৮ ইনিংসে ২৩৩ রান করে আপাতত পঞ্চম স্থানে আছেন এনামুল। স্ট্রাইক রেট অবশ্য ১১৭.৬৭। তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটও এরকম ম্রিয়মান (১১৮.১২)। তবে চলতি আসরে বেশ ধারাবাহিক তিনি। টুর্নামেন্টে ৩টি ফিফটি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনিই।
নাঈমের বয়স এখনও কেবল ২৪, অনেক সময় তার সামনে পড়ে আছে। এমনকি ৩১ বছর বয়সী এনামুলের সামনেও আরও অনেক দিন খেলার সুযোগ আছে, যদি পারফর্ম করেন। বারবার হতাশা করার পরও তাদের দিকে আবার আশা নিয়ে তাকিয়ে প্রধান নির্বাচক।
“পারফর্ম যখন করেছে, সুযোগটা তো দিতে হবে। আগে পারফর্ম করেনি, এবার করতে পারে। রনি তালুকদার (বাদ পড়া ওপেনার) খুব একটা ভালো করছিল না। সামনে বিশ্বকাপ, অপশনগুলো দেখার ব্যাপার আছে।”
শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তাইজুল ইসলামের ফেরা। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই ফিরেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তাকে জায়গা দিতে ওয়ানডে দল থেকে ছিটকে গেছেন তরুণ রাকিবুল হাসান, টি-টোয়েন্টি দল থেকে তানভির ইসলাম। দুজনই বাদ পড়েছেন নিউ জিল্যান্ড সফরে কোনো ম্যাচ না খেলেই।
চলতি বিপিএল খুব দারুণ কিছু করেননি তাইজুল। ফরচুন বরিশালের হয়ে ৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন। রান দিয়েছেন অবশ্য ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৮৪।
টেস্ট দলের মূল স্পিনারকে সীমিত ওভারে ফেরানোর পেছনে কন্ডিশনের কথা বললেন প্রধান নির্বাচক।
“নিউ জিল্যান্ডে রাকিবুল ও তানভির ছিল ওখানকার কন্ডিশনের বিবেচনায়। একটু জোরের ওপর বল করে ওরা। দেশের মাটিতে তাইজুল ভালো করবে বলে আমরা মনে করছি, টিম ম্যানেজমেন্টও তাকে চায়। এবারের বিপিএলে খুব ভালো জায়গায় বল করেছে তাইজুল, কন্ট্রোল ভালো ছিল।”
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু ৪ মার্চ, ওয়ানডে সিরিজ শুরু ১৩ মার্চ।