প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে সাকিব আল হাসানের মন্তব্যের প্রসঙ্গ উঠতেই প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে জালাল ইউনুসের পাল্টা প্রশ্ন, “সাকিবের আগের স্টেটমেন্ট কী ছিল? একটু মনে করে দেখুন। এখন কি এসব কথা বলা সাজে?” বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের কথায় পরিষ্কার, বিশ্বকাপ ব্যর্থতা নিয়ে অধিনায়কের এই ধরনের কথা বা অজুহাতকে মানতে নারাজ বোর্ড।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে তুমুল। সংবাদমাধ্যম বা বিশ্লেষকরা ময়নাতদন্ত করছে। বিসিবি এখনও অপেক্ষা করছে প্রধান কোচ ও টিম ডিরেক্টরের অফিসিয়াল রিপোর্টের। তারপর তারা নিজেদের করণীয় ঠিক করবে। তবে দলের পারফরম্যান্সে যে বোর্ড চূড়ান্ত হতাশ, সেটি অস্বীকার করছেন না কেউ। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান বিশ্বকাপ চলার সময়ই হতাশার কথা বলেছেন। জালাল ইউনুসও বললেন, দলের এমন পারফরম্যান্সে তারা মুষড়ে পড়েছেন। বিশেষ করে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হার তারা মানতেই পারছে না।
নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে বাজেভাবে হারার পর কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলেছিলেন সাকিব, “আমরা অনেক আন্ডার-প্রিপেয়ার্ড ছিলাম। তবে এখন এই অজুহাতগুলো দিয়ে আসলে খুব বেশি লাভ হবে না। তবে আমরা আন্ডার-প্রিপেয়ার্ড ছিলাম।”
সাকিবের সেই কথার জবাবেই এবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলোচনায় পাল্টা প্রশ্ন করলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
“সাকিবের আগের স্টেটমেন্ট কী ছিল? সেমি-ফাইনাল খেলতে চায় বা বিশ্বকাপ জেতার মতো দল, এসব তো বলেছিল…। তাই না?”
তার কথায় পরিষ্কার, বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলেননি সাকিব, বরং দল নিয়ে উচ্চাশার কথাই শুনিয়েছিলেন। এখন প্রস্তুতির কথা বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছেন বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট ও সংশ্লিষ্টদের। তবে এসব দায় নিতে রাজি নন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান।
“যে যতই বলুক, আমরা কোনো কিছুই তাদেরকে দিতে বাদ রাখিনি। সব ধরনের সাপোর্ট, লজিস্টিক সাপোর্ট, কোচদের যত ধরনের চাহিদা ছিল, সব পূরণ করেছি। এখন যে যেভাবেই বলুক যে প্রস্তুতি ছিল না বা এটা-ওটা ছিল না, আমি তাতে একমত নই। কোনোমতেই একমত নই।”
“টিম ম্যানেজমেন্ট যা চেয়েছে, আমরা পূরণ করেছি। মানসিক প্রস্তুতির জন্য বিশেষজ্ঞ আনা, শারীরিক প্রস্তুতির জন্য জিপিএস ভেস্ট আনা, যা কিছু তারা চেয়েছে, সব দিয়েছি। এখন অন্য কিছু বললে তো হবে না।”
শুধু মাঠের বাইরের বিভিন্ন উদ্যোগই নয়, বিশ্বকাপের জন্য মাঠের ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতিতে যেন কোনো ফাঁক না থাকে, এজন্যই নিজেদের আগের নীতি থেকেও বিসিবি সরে এসেছিল বলে দাবি করলেন জালাল ইউনুস।
“সবাই খেলার মধ্যেই ছিল। এমনকি কোচদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ীই আমরা ক্রিকেটারদের খুব বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে দিতাম না। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে বিদেশের লিগে এক্সপোজারের জন্যই আমরা সবাইকে অনুমতি দিয়েছি, যে যেভাবে চেয়েছে। ওরা কানাডায় খেলেছে, শ্রীলঙ্কায় খেলেছে… যারা চেয়েছে, সবাইকেই দিয়েছি যাতে এই অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে পারে।”
বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার জন্য এবং দলীয় আবহ ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য জালাল ইউনুস বরং পরোক্ষে আঙুল তুললেন সাকিবের দিকেই। তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসর ও ফিরে আসা, এরপর নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে তার বিশ্বকাপ দলে না থাকা এবং বিশ্বকাপ খেলতে রওনা হওয়ার ঠিক আগে টি-স্পোর্টস চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান যেভাবে তামিমকে নিয়ে বিদ্রুপ করেন বা যেভাবে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাতে গোটা দল প্রভাবিত হয়েছে বা দলের মনোযোগ নড়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। জালাল ইউনুসের কথায়ও সেটির ইঙ্গিত।
“যেভাবে আমরা নরম্যালি এগোচ্ছিলাম, সেসব বাধাগ্রস্থ তো হয়েছেই। এগুলো কাম্য ছিল না। প্রত্যাশিত ছিল না..।”
কিন্তু ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান হিসেবে স্রেফ পরোক্ষ মন্তব্যই তো যথেষ্ট নয়। বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের ওই সাক্ষাৎকার নিশ্চিতভাবেই আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু বিসিবি তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন যেহেতু তারা অনুভব করছেন যে ওসবের প্রভাব দলের পারফরম্যান্সে পড়েছে, তাহলে কোনো ব্যবস্থা কি এখন নেওয়া হবে?
এই প্রশ্নে আবার সাবধানী পথ বেছে নিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান, “এই প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে পারব না… বোর্ড সভায় ঠিক হবে।”
বোর্ড সভায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা সময়েই বোঝা যাবে। তবে একটি সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। বোর্ডকে ঠিক করতে হবে নতুন অধিনায়ক।
টি-স্পোর্টসে সেই সাক্ষাৎকারেই সাকিব বলেছিলেন, বিশ্বকাপের পর অধিনায়ক থাকবেন না তিনি। সেক্ষেত্রে নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক ঠিক করতে হবে। তার ক্যারিয়ার এখন যে অবস্থায় আছে, টেস্ট হয়তো তিনি আর খেলবেন না বা খেললেও খুব অনিয়মিত থাকবেন। সেক্ষেত্রে নতুন টেস্ট অধিনায়ক ঠিক করার ব্যাপারও আছে।
জালাল ইউনুস বললেন, শিগগিরই তা জানা যাবে, “নতুন অধিনায়ক ঠিক তো করতে হবেই। সময় আছে, আমরা তাড়াতাড়ি করে ফেলব…।”