ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক ইনিংসে আফগানিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিলেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। পরে বোলাররাও লড়াই করল বটে, কিন্তু পেরে উঠল না। রাসি ফন ডার ডাসেনের দায়িত্বশীল ইনিংসে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে দুই দলের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫ উইকেটে। আহমেদাবাদে শুক্রবার ২৪৫ রানের লক্ষ্য ১৫ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা।
পয়েন্ট টেবিলে নিউ জিল্যান্ডকে টপকে সেমি-ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখতে এই ম্যাচে আফগানিস্তানকে জিততে হতো ৪৩৮ রানে, যা ছিল একরকম অসম্ভব। আফগানদের ব্যাটিং ইনিংসের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষটা ভালো না হলেও পুরো আসরটা আফগানিস্তানের কেটেছে স্বপ্নের মতো। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম দুই আসরে ১৫ ম্যাচে যেখানে জয় ছিল মাত্র একটি, সেখানে এবার ৯ ম্যাচে জিতেছে চারটি। সবগুলিই ৫ ম্যাচের মধ্যে।
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও ভারতের বিপক্ষে হারে শুরুর পর অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে দেয় আফগানরা।
রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও স্মরণীয় এক জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক ইনিংসের কাছে হেরে যায় মুজিব-রাশিদরা।
১০ দলের মধ্যে সম্ভবত ছয় নম্বরে থেকে আসর শেষ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। শীর্ষ আট দল খেলবে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
আগেই সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম রাউন্ড শেষ করল ৯ ম্যাচের ৭টি জিতে। শেষ চারে তারা খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের নায়ক ফন ডাসেন। ৯৫ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ৭৬ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন তিনি। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।
আফগানিস্তানকে এ দিন বলতে গেলে একাই টানেন ওমারজাই। প্রথম ওয়ানডে শতকের সম্ভাবনা জাগিয়ে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১০৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি। আর কেউ ত্রিশও ছুঁতে পারেনি।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। স্কোর ৪১ রেখে ফেরেন দুজনই।
রেহমাত শাহ, হাশমাতউল্লাহ শাহিদিরাও এ দিন ভালো করতে পারেননি। ১১৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অল্পে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল তারা। সেখান থেকে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান ওমারজাই।
৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার পেসার জেরল্ড কুটসিয়া।
লক্ষ্য তাড়ায় ৬৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সুর বেঁধে দেন কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা। এরপর দ্রুতই বিদায় নেন দুজন। ডি কক ৪৭ বলে করেন ৪১ রান।
এইডেন মার্করাম ও হাইনরিখ ক্লসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ডেভিড মিলারের সঙ্গে ৪৩ ও আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটিতে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় নিয়ে যান ফন ডাসেন।
নাভিন-উল-হাককে ছক্কা-চার-ছক্কায় ম্যাচের ইতি টেনে দেওয়া ফেলুকওয়ায়ো অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৩৯ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৪ (গুরবাজ ২৫, ইব্রাহিম ১৫, রেহমাত ২৬, শাহিদি ২, ওমারজাই ৯৭*, ইকরাম ১২, নাবি ২, রাশিদ ১৪, নুর ২৬, মুজিব ৮, নাভিন ২; রাবাদা ১০-০-৪০-০, এনগিডি ৮.৩-০-৬৯-২, মার্করাম ৪.৩-০-২৫-০, কুটসিয়া ১০-১-৪৪-৪, মহারাজ ১০-১-২৫-২, ফেলুকওয়ায়ো ৭-০-৩৬-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৭.৩ ওভারে ২৪৭/৫ (ডি কক ৪১, বাভুমা ২৩, ফন ডাসেন ৭৬*, মার্করাম ২৫, ক্লসেন ১০, মিলার ২৪, ফেলুকওয়ায়ো ৩৯*; মুজিব ১০-০-৫১-১, নাভিন ৬.৩-০-৫২-০, নাবি ১০-১-৩৫-২, ওমারজাই ১-০-৮-০, রাশিদ ১০-১-৩৭-২, নুর ৯-০-৪৯-০, রেহমাত ১-০-১২-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাসি ফন ডার ডাসেন