চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার তিনশ পেরোলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কেউই পারেননি বড় ইনিংস খেলতে।
Published : 11 Nov 2023, 02:22 PM
শন অ্যাবটের শরীর বরাবর আসা শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় ঠিকঠাক পারলেন না তানজিদ হাসান। ব্যাটের কানায় লেগে গেল ফিরতি ক্যাচ। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা তরুণ ওপেনার ধীর পায়ে ড্রেসিং রুমে ফিরলেন একরাশ হতাশা সঙ্গী করে। তানজিদের মতো একই দশা পরের ব্যাটসম্যানদেরও। তাই তিনশ পেরোলেও শেষ ম্যাচের ব্যাটিংয়ে থাকল বড় ইনিংস না পাওয়ার আক্ষেপ।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩০৬ রান করেছে বাংলাদেশ। চলতি আসরে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সম্ভাবনা ছিল আরও বড় কিছুর। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কেউই দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দলের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের সবাই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক। প্রথম পাঁচজন পেরিয়েছেন ত্রিশের ঘর। কিন্তু তাওহিদ হৃদয় ছাড়া আর কেউ ফিফটি করতে পারেননি। ফলে আরও বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েও তিনশ ছুঁয়েই থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।
অথচ ৩৩ ওভারের মধ্যেই স্রেফ ৩ উইকেটে ২০০ রান করে ফেলে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে খেলতে নামা বাংলাদেশ দল। দারুণ এই ভিতে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে শেষের ১০৫ বলে তারা করে স্রেফ ১০৬ রান। হৃদয়ের ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৯ বলে ৭৪ রান পুরো ইনিংসের সর্বোচ্চ।
ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন তানজিদ, লিটন দাস। শুরুতে কয়েক ওভার সাবধানী ব্যাটিংয়ের পর হাত খুলে মারতে শুরু করেন তারা। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬২ রান পায় বাংলাদেশ। এই সময়ে গড়ে ১ ডিগ্রি সুইংও পাননি অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলার।
দ্বাদশ ওভারে তানজিদের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ৬ চারে ৩৪ বলে ৩৬ রান করেন তানজিদ। দলকে একশ পার করিয়ে উইকেট ছুড়ে আসেন লিটন। অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে আলতো করে খেলা শটে তিনি ধরা পড়েন লং অফে। তানজিদের মতো লিটনও খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। ৪৫ বলে ৫টি চার মারেন তিনি।
দুই ওপেনার ফিরলেও রানের গতি কমতে দেননি শান্ত ও হৃদয়। ওভারপ্রতি ছয়ের কাছাকাছি হারে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। অবস্থা যখন ভালোর দিকে, তখন ঘটে বিপত্তি। ঝুঁকিপূর্ণ দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন ৫৯ বলে ৬ চারে ৪৫ রান করা শান্ত। নিজের ওপর ক্ষুব্ধ শান্ত ফেরেন ড্রেসিং রুমে।
এরপর মাহমুদউল্লাহও করেন দারুণ শুরু। তৃতীয় বলেই অ্যাবটকে দারুণ পুল শটে ছক্কায় তিনি খোলেন রানের খাতা। এরপর মিচেল মার্শের এক ওভারে তিনি মারেন আরও দুটি ছক্কা। তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে রান আউটে।
শর্ট কাভারের দিকে ঠেলেই দ্রুত রানের জন্য ছোটেন হৃদয়। মার্নাস লাবুশেনের দারুণ থ্রোয়ে বিদায়ঘণ্টা বাজে ৩২ রান করা মাহমুদউল্লাহর। চলতি আসরে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনশ পেরোনো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মোট সংগ্রহ ৩২৮ রান।
মাহমুদউল্লাহ ফেরার আগেই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন হৃদয়। ৬১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় এই মাইলফলক পূর্ণ করেন প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা তরুণ ব্যাটসম্যান। খানিক পরেই জ্যাম্পার বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম।
পরে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেও অ্যাবটের ফুল টসে ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানার কাছে ধরা পড়েন হৃদয়। দলকে তিনশ পার করিয়ে ২০ বলে ২৯ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন অ্যাবট ও জ্যাম্পা। চলতি আসরে জ্যাম্পার মোট উইকেট হলো ২২টি। বিশ্বকাপের এক আসরে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের এটিই সর্বোচ্চ শিকার। ২০০৭ সালে ব্র্যাড হগ নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।