শততম ওয়ানডেতে শামির রেকর্ড রাঙা ৭ উইকেট

মাইলফলক ছোঁয়ার উপলক্ষটা রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে রাঙালেন ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় পেসার।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2023, 06:32 PM
Updated : 15 Nov 2023, 06:32 PM

বল হাতে নিয়ে ম্যাচে নিজের প্রথম বলে উইকেট! দুর্দান্ত শুরুর সেই ধারা ধরে রেখে, রান বন্যার ম্যাচেও উইকেট শিকারের উৎসবে মেতে উঠলেন মোহাম্মদ শামি। ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় পেসার শততম ওয়ানডে খেলার উপলক্ষটা রাঙালেন রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে, অসংখ্য রেকর্ড-কীর্তিতে নাম লিখিয়ে।

বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে দুই দল মিলিয়ে রান হয়েছে মোট ৭২৪। শতক করেছেন তিন জন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতকের ‘ফিফটি’ করে ভিরাট কোহলি গড়েছেন ইতিহাস। তবে, সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচের সেরা শামি।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ৭০ রানে জয়ের ম্যাচে শামি ৭ উইকেট নিয়েছেন ৫৭ রান দিয়ে।

বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে ৭ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।

এই সংস্করণে ভারতের আগের সেরা বোলিং ছিল স্টুয়ার্ট বিনির ৪ রানে ৬ উইকেট, ২০১৪ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

বিশ্বকাপে ভারতের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এতদিন ছিল আশিস নেহরার। ২০০৩ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই পেসার ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ২৩ রান দিয়ে।

পঞ্চম বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৭ উইকেট পেলেন শামি। তবে একটি জায়গায় তিনি ছাপিয়ে গেছেন আগের চার জনকে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এই স্বাদ পাওয়া প্রথম বোলার যে তিনিই।

নকআউট পর্বে আগের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার গ্যারি গিলমোরের। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার।

শামির অর্জন আছে আরও। প্রথম বোলার হিসেবে এক বিশ্বকাপে তিনবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি। সব মিলিয়ে বিশ্ব মঞ্চে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি চারবার। এটিও কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। তিনি ছাড়িয়ে গেলেন তিনবার এই স্বাদ পাওয়া অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ককে।

অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা শামির এবারের বিশ্বকাপে মোট শিকার এখন পর্যন্ত ২৩টি। ভারতের বোলারদের মধ্যে এক আসরে রেকর্ড এটি। ২০১১ সালে দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে আরেক পেসার জাহির খান নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।

এক বিশ্বকাপে শামির চেয়ে বেশি উইকেট আছে স্রেফ দুজনের। ২০০৭ আসরে গ্লেন ম্যাকগ্রা ২৬টি ও ২০১৯ আসরে স্টার্ক নিয়েছিলেন ২৭ উইকেট।

অবিশ্বাস্যভাবে শামির এই ২৩ উইকেট হয়ে গেল স্রেফ ৬ ম্যাচ খেলেই!

দলের প্রথম চার ম্যাচে বেঞ্চে কাটানোর পর প্রথমবার সুযোগ পেয়েই নিজেকে মেলে ধরেন তিনি দারুণভাবে। এই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই ওই ম্যাচে ৫ উইকেট নেন ৫৪ রান দিয়ে। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ শিকার ধরেন ২২ রান দিয়ে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্রেফ ১৮ রানে নেন ৫ উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ উইকেট পান ১৮ রানে। প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই কেবল কোনো উইকেট তিনি পাননি। এরপর তো সেমি-ফাইনালের এই আগুনে বোলিং।

এ দিন ষষ্ঠ ওভারে বল হাতে পেয়েই ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে ৩০ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন শামি। নিজের পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকেও।

কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেলের তৃতীয় উইকেট জুটি ভারতের গলার কাঁটা হয়ে যায় একটা সময়। এর মধ্যে আবার উইলিয়ামসনের ক্যাচও ফেলেন শামি। পরে অবশ্য বল হাতে তিনিই ১৮১ রানের বিস্ফোরক জুটি ভেঙে ভারত শিবিরে ফেরান স্বস্তি।

ওই ওভারে তিন বলের মধ্যে উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে জোড়া ধাক্কা দেন শামি। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কিউইরা।

নিউ জিল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই শামির শিকার। সেঞ্চুরিয়ান মিচেলকে ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। আর ৪৯তম ওভারে টিম সাউদি ও লকি ফার্গুসনের উইকেট নিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেওয়ার পাশাপাশি উঠে যান নতুন উচ্চতায়।