আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়া ক্রিকেটার শোনালেন ওই সময়ের গল্প।
Published : 15 Jul 2023, 08:01 PM
সিলেটে শনিবার অনুশীলন ছিল না বাংলাদেশ দলের। শরিফুল ইসলাম ও আরও কয়েকজন গিয়েছিলেন রাতারগুলে ঘুরতে। সেই ছবি সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করে এই বাঁহাতি পেসার লিখেছেন, ‘প্রশান্তি।’ প্রকৃতির এতটা কাছাকাছি গেলে অনুভূতি এমনই থাকে। তবে শুধু এই কারণেই নয়, শরিফুলের মনে প্রশান্তির ছায়া থাকার কথা আগের রাতের ম্যাচটির কারণেও।
যে ম্যাচে বাংলাদেশের শেষ সময়ের নায়ক তিনি। তার মূল কাজ যদিও বোলিং। সেখানে তিনি এই ম্যাচে খুব একটা সফল হতে পারেননি। তবে পরে ব্যাট হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন স্রেফ একটি বল খেলেই। তার হাত ধরেই এসেছে দলের জয়ের মুহূর্তুটি। তার শটেই দূর হয়েছে অভাবনীয় হারের শঙ্কা।
সেই শঙ্কার দোলাচলের আগে স্বস্তির দোলাই ছিল। ৫ বলে যখন প্রয়োজন ২ রান, উইকেট বাকি ৫টি। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যানের তখন আর কাজ কী! প্যাড খুলে নিশ্চিন্ত মনে জয়ের অপেক্ষায় ছিলেন শরিফুল। ভাবনার সীমানায় ছিল না, একটু পর প্রবল চাপকে সঙ্গী করে তাকেই নেমে যেতে হবে দলকে জেতানোর গুরু দায়িত্ব নিয়ে! শেষ পর্যন্ত চাপকে জয় করেই দলকে জিতিয়ে দেন তিনি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ৬ রান। করিম জানাতের প্রথম বলই বাউন্ডারিতে পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজ। তখন তখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেই সময়টাই নাটকীয়ভাবে দূরে যেতে থাকে। টানা তিন বলে আলগা শটে উইকেট বিলিয়ে দেন একে একে মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।
করিম জানাতের হ্যাটট্রিকে যখন আনন্দে ভঅসছেন আফগানরা, বাংলাদেশ তখন শঙ্কায় অবিশ্বাস্য এক হারের। শরিফুল নেমে অবশ্য সব ভয়কে জয় করে নেন। প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের ঠিকানায়।
ম্যাচের পরদিন পেছন ফিরে তাকিয়ে সেই শেষ সময়ের গল্প শোনালেন শরিফুল।
“১ ওভারে যখন ৬ রান লাগে, এরপর মিরাজ ভাই চার মারে প্রথম বলেই, আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম যে আমরা জিতে যাব। আমি, মুস্তাফিজ ভাই, নাসুম ভাই ভেতরে রিল্যাক্স… প্যাডও খুলে ফেলেছিলাম। দেখলাম যে মিরাজ ভাই আউট হয়ে গেল। তার পর আস্তে আস্তে প্যাড পরতে লাগলাম। তাসকিন ভাই নামলেন। আমি নিচে গেলাম।”
“নাসুম ভাই নামলেন। উনিও আউট হয়ে গেলেন। আমি যখন যাচ্ছিলাম, কোচ আমাকে বললেন, ‘তুমি পারবা, স্রেফ ব্যাটে বলে সংযোগ করবে, তাহলে সহজ হয়ে যাবে।’ আমি মাঠে নামার পর হৃদয় বলছিল যে, ‘এটা কোনো বিষয় নয়, কোনো চাপও না। ২ বলে ২ রান হবেই। তুমিই পারবা। আর ব্যাটে না লাগলেও দৌড় দেবে।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, তুমি বিশ্বাস রাখো, আমি পারব।’ পরে তো আল্লাহর রহমতে হয়ে গেছে।”
৩২ বলে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে বাংলাদেশকে জয়ের কাছে নিয়ে যান তাওহিদ হৃদয়। ম্যাচ সেরাও হন তিনিই। তবে শেষ ওভারে তিনি স্রেফ দর্শক হয়েই ছিলেন। স্ট্রাইকই যে পাচ্ছিলেন না! তবে এক প্রান্তে হৃদয় ছিলেন বলেই জয়ের বিশ্বাসটা তীব্র ছিল শরিফুলের।
“হৃদয় তখন সেট ব্যাটসম্যান ছিল… ওর সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপসহ। অনেক দিন একসঙ্গে থেকেছি, অনেক ম্যাচ খেলেছি। ওর ওপর আমার বিশ্বাস ছিল, যদি আমি ব্যাটে নাও লাগাতে পারি, ও যদি স্ট্রাইক পেত, শেষ করত খেলা। ওটাই বড় বিশ্বাস ছিল।”
২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য পরের বছরই পা রাখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ছাপও রাখেন দ্রুতই। তবে চোট ও অসুস্থতা আর ফর্মহীনতা মিলিয়ে দলে আসা-যাওয়াও চলতে থাকে। সেই সময়টা পেছনে ফেলে এখন আবার ছুটছেন তিনি নতুন উদ্যমে।
হতাশার সময়টায় পাশে থাকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন সতীর্থ তাসকিন আহমেদের প্রতি। বোলিং, ফিটনেস, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি কাজ করা, সবকিছুতেই তাসকিনতে পাশে পান বলে জানালেন ২২ বছর বয়সী এই পেসার।
“আন্তর্জাতিক যখন শুরু করেছি, বেশ ভালো শুরু হয়েছিল তখন। এরপর ইনজুরির কারণে অফ ফর্মে গেছি। এরপর আবার ইনজুরি থেকে ফিরে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছি। পরে হাথু স্যার এলেন। তিনি আমাকে কিছু কাজ দিলেন। এর মধ্যে তাসকিন ভাইও আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। উনি বলেছেন যে খারাপ সময় গেলে কী করতে হয়। সবসময়ই বলেন যে, কোন জিনিসটা খেলে শরীরের জন্য ভালো। এমনকি একসঙ্গে জিমে গেলে, সুইমিংয়ে গেলে, সবসময় ইতিবাচক কথা বলেন।”
“আমরা পেস বোলাররা সবাই নেটে ব্যাটিং করছি। বিশেষ করে তাসকিন ভাই এখন ভালো ব্যাটিং করছেন। উনি একসময় আমাদের মতোই ছিলেন। এখন প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের মতোই ব্যাট করেন। আমরাও তাতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। নেটে ব্যাটসম্যানদের মতোই সুযোগ পাচ্ছি ব্যাটিং করার। ওটাই কাজে লাগাচ্ছি। যে অনুশীলনই করছি, মনোযোগ দিয়ে করছি। যেন ম্যাচ পরিস্থিতিতে কিছু একটা করতে পারি দলের জন্য।”