দিবা-রাত্রির ফাইনালে পূর্বাঞ্চলকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখল উত্তরাঞ্চল।
Published : 30 Dec 2023, 07:40 PM
জিততে প্রয়োজন তখন ১ রান। রেজাউর রহমান রাজার স্লোয়ার বাউন্সার লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যেতেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়লেন আকবর আলি। ব্যাটে চুমু এঁকে স্মারক হিসেবে তুলে নিলেন একটি স্টাম্প। ক্রিজে থেকেই দলের দারুণ জয়ের স্বাক্ষী হলেন অধিনায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ৫০ ওভারের সংস্করণে শিরোপা ধরে রাখল উত্তরাঞ্চল।
ফাইনালে শনিবার পূর্বাঞ্চলকে ৪ উইকেটে হারায় উত্তরাঞ্চল। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ম্যাচে ২৭৬ রানের লক্ষ্য ৩৮ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলে তারা।
টুর্নামেন্টের তিন আসরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের টানা দ্বিতীয় শিরোপা এটি। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মধ্যাঞ্চল।
ম্যাচের প্রথম ভাগে দারুণ সেঞ্চুরিতে পূর্বাঞ্চলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেন শাহাদাত হোসেন। তবে আকবর-প্রিতম কুমারদের দারুণ ব্যাটিংয়ের সামনে তা যথেষ্ট হয়নি। দুজনের কার্যকর দুটি ইনিংসে অনায়াসে জয় পায় উত্তরাঞ্চল।
ব্যাটিংয়ের জন্য তুলনামূলক সহায়ক উইকেটে পূর্বাঞ্চলকে তিনশর আগে থামানোর কারিগর নাহিদ রানা। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তরুণ এই পেসার।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফাইনালে ছিলেন না পূর্বাঞ্চলের আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক জাকির হাসান। তার জায়গায় ওপেনিংয়ে নেমে ভালো করতে পারেননি সৈকত আলি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন সৈকত। এক বল পরই তাকে ড্রেসিং রুমের পথ দেখান শহিদুল ইসলাম। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন পারভেজ হোসেন ও মাহমুদুল হাসান জয়।
দুই ওভার প্রেস বক্স প্রান্ত থেকে করার পর সপ্তম ওভারে প্রান্ত বদল করে বোলিংয়ে আসেন রানা। তার হাঁটুর ওপরের উচ্চতার ফুল টসে হকচকিয়ে যান জয়৷ সহজ ক্যাচ দেন শর্ট মিড উইকেটে।
ফের প্রান্ত বদল করে মুমিনুলকেও আউট করেন রানা। ৫৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পূর্বাঞ্চল৷ চতুর্থ উইকেটে হাল ধরেন পারভেজ হোসেন ও শাহাদাত। দুজন মিলে গড়েন ১২২ রানের জুটি।
পঞ্চাশ পেরিয়ে দুই তরুণই এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির পথে। ৩৭তম ওভারে ফের আক্রমণে এসে প্রথম বলেই পারভেজকে আউট করে জুটি ভাঙেন রানা। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৯ বলে ৭৩ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
অধিনায়ক ইরফান শুক্কুরের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৫৯ রান যোগ করেন শাহাদাত। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৬ রান করে রানার চতুর্থ শিকার হন ইরফান।
৪৯তম ওভারের শেষ বলে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শাহাদাত। ইনিংসের শেষ দুই বলে চার-ছক্কা মেরে ১২২ বলে ১১৩ রানে অপরাজিত থাকেন তরুণ ব্যাটসম্যান। ৯ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস।
নিজের শেষ ওভারে নাসুম আহমেদকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট নেন রানা। ১০ ওভারে তার খরচ ৫০ রান।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে উত্তরাঞ্চল। সৈয়দ খালেদ আহমেদের করা প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারেন তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় ওভারে ইফরান হোসেনকে তিন চার মারেন হাবিবুর রহমান।
আগের ম্যাচে ঝড়ো সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া হাবিবুর এদিন অবশ্য বড় করতে পারেননি ইনিংস। চতুর্থ ওভারে রাজার বলে মিড অফে ক্যাচ দেন ১৭ রান করা ওপেনার। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অমিত হাসান ও আবদুল্লাহ আল মামুনও৷
ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪৩ রানে থামেন তানজিদ। ৪৬ বলের ইনিংসে ৫ চার ও ১ ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার। তার বিদায়ে একশর আগে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে উত্তরাঞ্চল।
চাপ সরাতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন প্রিতম। পঞ্চম উইকেটে তাইবুর রহমানের সঙ্গে গড়েন ৮০ বলে ৯০ রানের জুটি৷ যেখানে বেশিরভাগ রান করেন প্রিতমই। নাসুমের বলে তাইবুর বোল্ড হলে নন স্ট্রাইকে স্পষ্ট হতাশা ফুটে ওঠে প্রিতমের শরীরী ভাষায়।
কার্যকর জুটি ভাঙলেও আর চাপ বাড়তে দেননি আকবর ও প্রিতম। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন যোগ করেন ৮০ রান। জয় থেকে ২০ রান দূরে থাকতে আলসে ভঙ্গিতে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন প্রিতম। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৮৬ বলে ৭৬ রান করেন তিনি।
পরে নাহিদুলকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন আকবর। ৫৯ বলে ৬ চার ও ছক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন উত্তরাঞ্চল অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পূর্বাঞ্চল: ৫০ ওভারে ২৭৫/৬ (সৈকত ৪, পারভেজ ৭৩, মাহমুদুল ১৬, মুমিনুল ৮, শাহাদাত ১১৩*, ইরফান ৩৬, নাসুম ৪, নাঈম ৩*; শহিদুল ১০-০-৬৯-১, রানা ১০-১-৫০-৫, নাহিদুল ১০-০-৪৬-০, মামুন ৫-০-২৬-০, রকিবুল ১০-০-৩৮-০, তাইবুর ৫-০-৩৭-০)
উত্তরাঞ্চল: ৪৩.৪ ওভারে ২৭৬/৬ (তানজিদ ৪৩, হাবিবুর ১৭, অমিত ৯, মামুন ৮, প্রিতম ৭৬, তাইবুর ২৪, আকবর ৫৩*, নাহিদুল ১৩* ; খালেদ ৬-০-৪৯-০, ইফরান ৪-০-৩৩-০, রাজা ৯.৪-০-৬৫-১, নাসুম ১০-০-৩৯-২, নাঈম ১০-১-৪৩-১, জয় ১-০-৭-০, মুমিনুল ৩-০-২১-০)
ফল: উত্তরাঞ্চল ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদ রানা