বিপিএলের সাত অধিনায়কের সাতকাহন

টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র এক দিন আগে জানা গেল বিপিএলের দশম আসরের সাত দলের অধিনায়কের নাম, ট্রফি উন্মোচনে অবশ্য সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফির বদলে এসেছিলেন সহ-অধিনায়ক মিঠুন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2024, 02:31 PM
Updated : 17 Jan 2024, 02:31 PM

মাঘের শীতের আলসে সকালে ঢাকা সেনানিবাসে দেখা গেল ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা। বিপিএল ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে উপস্থিত টুর্নামেন্টের সাত দলের প্রতিনিধি। আয়োজন মূলত অধিনায়কদের নিয়ে। তবে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে মোহাম্মদ মিঠুনকে চমকে যান অনেকেই। পরে অবশ্য জানা যায়, মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে দলের প্রতিনিধি ছিলেন মিঠুন। অধিনায়ক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মাশরাফির নাম সিলেট জানায় অবশ্য আরও অনেক পরে, বুধবার সন্ধ্যায়। 

তাতে অবশেষে নিশ্চিত হওয়া যায় বিপিএলের সাত অধিনায়কের নাম। টুর্নামেন্ট শুরু হতে তখন বাকি মাঝখানে স্রেফ আর একটি দিন! 

মাশরাফিকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গতবার চমক দেখানো দলটির নেতৃত্বে আবারও দেখা যাবে বিপিএলের সফলতম অধিনায়ককেই। তার মতোই অনিশ্চয়তার নানা পথ পেরিয়ে ফরচুন বরিশালের হয়ে টস করতে দেখা যাবে তামিম ইকবালকে।  

এছাড়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস, খুলনা টাইগার্সের এনামুল হক, রংপুর রাইডার্সে নুরুল হাসান সোহান, দুর্দান্ত ঢাকার মোসাদ্দেক হোসেন ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কত্ব করবেন শুভাগত হোম। লিটন ও এনামুল বিপিএলে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন এই প্রথমবার। 

সিলেট স্ট্রাইকার্স - মাশরাফি বিন মুর্তজা 

দল সূত্রে জানা গেছে, টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ককে একরকম জোর করেই আরও একবার দায়িত্ব দিয়েছে তারা। পায়ের পুরোনো চোট তো সবসময়ই সঙ্গী তার। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবার বিপিএলের আগে পুনর্বাসনেও সময় দিতে পারেননি। বোলিং করার মতো অবস্থাই নেই তার। যে কারণে নেতৃত্বভার নেওয়া তো দূরের কথা, শুরুর বেশ কিছু ম্যাচ খেলতেই চাননি বিপিএলে চারবারের শিরোপাজয়ী এই অধিনায়ক।  

তবে দলের সত্ত্বাধিকারীরা তাকে যে কোনো অবস্থায়ই দলে চান, স্রেফ অধিনায়কত্ব করার জন্য হলেও। শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়া মেনে রাজি হয়েছেন ৪০ বছর বয়সী তারকা পেসার। শুরুর কয়েক ম্যাচে তার বোলিং করতে না পারা একরকম নিশ্চিতই। ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়েও কতটা করতে পারবেন, সেই সংশয় প্রবলভাবেই আছে। দীর্ঘবিরতির পর এখনও অনুশীলনও শুরু করেননি। তবু তার নেতৃত্বগুণ, গত মৌসুমে চমকপ্রদভাবে যেভাবে তার নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেছে দল, সব মিলিয়েই তার ওপর আবার ভরসা রাখা হয়েছে। 

এবারের আসরে তার ডেপুটি হিসেবে থাকবেন মিঠুন। অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর সম্ভাবনাও ছিল। তবে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে নির্ভার হয়ে খেলতে দিতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। 

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সিলেটের যাত্রা।  

তামিম ইকবাল 

চার আসর পর আবার বিপিএলে অধিনায়কত্ব করবেন তামিম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সবশেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেতৃত্ব দেন তিনি। পরের আসরে একই দল খেললেও তিনি দায়িত্ব ছাড়েন ইমরুল কায়েসের হাতে।  

২০১৯ আসরে ঢাকা প্লাটুনে তিনি খেলেন মাশরাফির অধিনায়কত্বে। ২০২২ সালে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকায় তামিমের অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আর গত বছর খুলনা টাইগার্সে তামিমের চাওয়াতেই অধিনায়কত্ব করেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। 

মাশরাফির মতো তামিমও শুরুতে অধিনায়কত্ব নিতে রাজি হননি। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে দায়িত্বে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মালিকপক্ষের চাওয়ার কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে। সব ঠিক থাকলে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে টস করতে দেখা যাবে তামিমকে। 

এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তিনি ক্রিকেটে ফিরবেন চার মাস পর। 

এনামুল হক 

বিপিএলের আগের সবগুলো আসর খেললেও কখনও অধিনায়কত্ব করা হয়নি এনামুলের। খুলনার হয়ে সেই স্বাদ পাওয়ার অপেক্ষায় ৩১ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। আগেরবারের অধিনায়ক ইয়াসির কিংবা অভিজ্ঞ তামিমকে ছেড়ে দেওয়ার পর অনেকটা অনুমেয়ভাবেই দায়িত্ব পেলেন এনামুল। নিলামের আগে সরাসরি চুক্তিতে তাকে দলে নেয় খুলনা। 

গত আসরে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলেন এনামুল। ১৩ ম্যাচে এক ফিফটিতে ২৮০ রান করেন ২৩.৩৩ গড়ে। সব মিলিয়ে বিপিএলে এখন পর্যন্ত ১০৭ ম্যাচে ২২.২১ গড় ও ১১৭.৬৩ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ২ হাজার ৮৮ রান। টুর্নামেন্টে অন্তত ২ হাজার রান করা ৬ ক্রিকেটারের একজন তিনি। 

লিটন কুমার দাস 

গত কয়েক আসর ধরে ঘরের ছেলে হয়ে ওঠা লিটনকে এবার অধিনায়কত্বের গুরুভার দিল কুমিল্লা। গত তিনবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করা ইমরুল কায়েসকে এবারও প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে দলে টেনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তবে এবার আর নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানকে। 

নেতৃত্বে সফল হলেও ইমরুলের নিজের পারফরম্যান্স খুব একটা মেলেনি দলের প্রত্যাশার সঙ্গে। মূলত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ভাবনা অনুসরণ করে এবার তাই অধিনায়কত্বে পরিবর্তন এনেছে তারা। একাদশে ইমরুলের জায়গা নিশ্চিত নয় বলেই পরিবর্তনটা চেয়েছিলেন কোচ, জানিয়েছেন দলের সত্ত্বাধিকারী নাফিসা কামাল। 

বিপিএলে এখন পর্যন্ত কুমিল্লার হয়েই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন লিটন। এই দলের হয়ে ৫৫ ম্যাচে খেলে লিটনের রান ১ হাজার ৩৬। এছাড়া ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রাজশাহী রয়্যালস ও  সিলেট সিক্সার্সের জার্সিতে খেলা লিটন সব মিলিয়ে বিপিএলে ৮১ ম্যাচে ২২.৭৫ গড় ও ১২৬.৯৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১ হাজার ৬৮৪ রান। 

মোসাদ্দেক হোসেন  

কাগজে-কলমের শক্তিতে অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে দুর্দান্ত ঢাকা। এই দলের হয়ে এবার অধিনায়কত্ব করবেন মোসাদ্দেক। খুব বেশি চমক নেই এই সিদ্ধান্তে। স্কোয়াডে তিনি ছাড়া নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ছিলেন হয়তো আর কেবল তাসকিন আহমেদ। তবে চোটপ্রবণ ফাস্ট বোলারের ওপর অনুমেয়ভাবেই বাড়তি দায়িত্ব দিতে চায়নি দল।  

ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই অধিনায়কত্ব করেন মোসাদ্দেক। বিপিএল ছাড়াও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় ক্রিকেট লিগে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও সাফল্য আছে এই অলরাউন্ডারের। ঢাকা লিগে তার নেতৃত্বে সবশেষ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। 

নুরুল হাসান সোহান 

গত আসরেও রংপুরের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। তার পরও এবার তার দায়িত্ব পাওয়া কিছুটা চমকপ্রদ ছিল। এই দলেই যে আছেন সাকিব আল হাসান! 

এবার সরাসরি চুক্তিতে সাকিব আল হাসানকে দলে নেয় রংপুর রাইডার্স। মালিকপক্ষের আশা ছিল, তার কাঁধেই দেওয়া হবে অধিনায়কত্বের ভার। তবে চাপ এড়াতে সেই দায়িত্ব নিতে চান নি সাকিব। চোখের সমস্যায়ও ভুগছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, যেটি মূলত চাপের কারণেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

গত বছর সোহানের নেতৃত্বে তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে রংপুর। ১০ ইনিংসে ২৮.২৮ গড় ও ১২৬.৯২ স্ট্রাইক রেটে ১৯৮ রান করেন অধিনায়ক সোহান। পাশাপাশি উইকেটের পেছনে দ্বিতীয় সর্বাধিক ১০ ডিসমিসাল ছিল তার। 

শুভাগত হোম 

গত বছরের মতো এবারও শুভাগত হোমের ওপর আস্থা রেখেছে চট্টগ্রাম। দেশি বা বিদেশি বড় তারকা তেমন কেউ নেই দলটিতে। গত আসরে সবার নিচে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা চট্টগ্রামের ভাগ্য বদলের অভিযানে সেনাপতির দায়িত্ব তাই শুভাগতকেই দেওয়া হয়েছে। জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগসহ ঘরোয়া আসরগুলোতে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তার আছে। 

গত বিপিএলে চট্টগ্রামের হয়ে ৯ ইনিংসে ২৮.৩৩ গড় ও ১৪৫.২৯ স্ট্রাইক রেটে ১৭০ রান করেন শুভাগত। পাশাপাশি অফ স্পিনে তিনি নেন ৯ উইকেট।