গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ছাড়লেও খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দেওয়ার কথা বলেছেন ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট
Published : 09 Dec 2022, 05:07 PM
ক্রিকেটের বহুল প্রচলিত একটি কথা, ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।’ এর সমার্থক কথাটিও খুব চলে, ‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস’, অর্থাৎ ক্যাচই ম্যাচ জেতায়। এমনি এমনিতে তো আর এটা প্রতিষ্টিত হয়নি। ক্যাচ ছুটলে ম্যাচও ছুটে যাওয়ার ঘটনা যুগে যুগে আছে অসংখ্য। তবে শেন ম্যাকডারমটের দর্শন এখানে ভাবনা ভিন্ন। প্রচলিত এই বিশ্বাসকে তিনি চ্যালেঞ্জ করছেন না, তবে বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ বইয়ে দিলেন ভিন্ন ভাবনার স্রোত।
ক্যাচ নিলে ম্যাচ জেতা যায়, মানেন তিনি। তবে ক্যাচ ছাড়লেই ম্যাচ ছেড়ে দেওয়া হয় বলে মানতে নারাজ ম্যাকডারমট। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের আগে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের প্রসঙ্গে কয়েক দফায় বেশ জোর দিয়েই কথাটি বললেন তিনি।
তার কথার পক্ষে স্বাক্ষ্য দেবে ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি। সেদিন ভারতের জয়ের জন্য দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। বাংলাদেশের পথে কাঁটা হয়ে উইকেটে ছিলেন রোহিত শর্মা। মাহমুদউল্লাহর করা ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ ছাড়েন ইবাদত হোসেন। দুই বল পর ডিপ স্বয়ার লেগে একই ভুল করেন এনামুল হক।
রোহিতকে দুইবার জীবন দিয়েও ম্যাচের শেষ বলে মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ ইয়র্কারে কোনোমতে জেতে বাংলাদেশ। একটু এদিক-সেদিক হলে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ হারতে হতো স্বাগতিকদের। তবে ক্যাচ ছাড়ার পরও যে সব শেষ হয়ে যায়নি, সেটিই তুলে ধরলেন ম্যাকডারমট।
ম্যাচের পরিস্থিতি, দর্শকদের তুমুল চিৎকার ও পারিপার্শ্বিক সব চাপ মিলিয়েই ওই ক্যাচগুলি পড়েছে বলে মনে করেন ম্যাকডারমট।
"ক্যাচ ছাড়ার পেছনে আসলে সবকিছুই (দর্শক, চাপ, পরিস্থিতি) ছিল। লোকেশ রাহুলও (প্রথম ম্যাচে) ক্যাচ ছেড়েছে। আমরা সবাই ক্যাচ ছাড়ি। (ক্যাচ ছাড়ার) ভয়ের কথা যদি বলা হয়, বল হাওয়ায় ভাসতে থাকা অবস্থায় আমরা ভাবতে থাকি যে ক্যাচ ছাড়লে এর প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে। বল অনেক উঁচুতে ওঠা ক্যাচ অনেক ছুটতে দেখা যায়, কারণ খেলোয়াড়রা ভাবার জন্য বেশি সময় পায়।"
৪১ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের মতে, এসব জায়গায় আসলে কোচদের জন্য কিছু শেখানো কঠিন। শিখে নিতে হয় অভিজ্ঞতা থেকেই। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি শোনালেন ক্যাচ নিয়ে তার দর্শনের কথা।
"বল বাতাসে থাকা অবস্থায় আমরা কী ভাবব, তা শেখানোর কাজটা খুব কঠিন। তবে এটি শেখা সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা যখন ক্যাচ ছাড়ি, এটিও শেখার বড় সুযোগ করে দেয়। যখন খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে আসে, সম্ভব হলে জয় নিয়ে, তখন তাদের দিকে তাকিয়ে আমরা সহজেই বলতে পারি যে ক্যাচ ছাড়লেই ম্যাচ হারা হয় না। এটি সত্য। প্রায় নিয়মিতই হয় এমন। খেলারই অংশ এসব। অবশ্যই আমরা চাই যত কম সম্ভব ক্যাচ ছাড়তে।"
ম্যাকডারমটের এই ভাবনার সারবস্তু হলো, ‘ক্যাচ ছাড়লেই সর্বনাশ’, এই ভয় থেকে ক্রিকেটারদের বের করে আনা। ভয়ের জায়গাটা দূর হলে এবং ভাবনার পরিবর্তন হলে ক্যাচ ছাড়ার হারও কমে আসবে, বিশ্বাস তার।
" বিশ্বব্যাপী দলগুলোর বেশ কিছু ভিডিও আছে আমার কাছে, যেখানে দেখা যাবে ক্যাচ ছাড়ার পরেও ম্যাচ জিতেছে। ক্যাচ অবশ্যই ম্যাচ জেতায়। তবে ক্যাচ ছাড়া মানেই ম্যাচ হারা নয়। এটি প্রমাণিত। এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা বদলাতে হবে। আমরা যত ক্যাচ ছাড়ব, তত ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাব, তত বেশি শিখতে হবে। এ মুহূর্তে ব্যর্থতার পর আমাদের ছেলেদের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য দুর্দান্ত।"
চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যাচ ছেড়েও জেতার ঘটনা দেখা গেলেও, এর বিপরীত উদাহরণ কম নয় বাংলাদেশের। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে খেলা সবশেষ সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে রহমানউল্লাহ গুরবাজের তিনটি ক্যাচ ছাড়ে বাংলাদেশ। সেদিন সেঞ্চুরি করে আফগানদের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন গুরবাজ।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে যাওয়া তিন ম্যাচে মোট ৫টি ক্যাচ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে রাইলি রুশো ও পাকিস্তান ম্যাচে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচও ছিল।