জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হার, হংকংয়ের কাছে পরাভুত বাংলাদেশ- এমন আরও কিছু অঘটনের সাক্ষী হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
Published : 14 Oct 2022, 08:23 PM
ক্রিকেটের সবচেয়ে অননুমেয় সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় টি-টোয়েন্টিকে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ছোট-বড় দলের পার্থক্য থাকে সামান্যই। মাত্র কয়েকটি ওভার কিংবা বল গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। কখনও কখনও ব্যক্তিগত কোনো পারফরম্যান্স শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য হয়ে ওঠে যথেষ্ট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কিছু সময় এসেছে, যখন ম্যাচের ফল হয়েছে অপ্রত্যাশিত। যার কিছু কিছু চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে ক্রিকেটীয় রূপকথায়।
দেখতে দেখতে চলে এসেছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যার অষ্টম বসছে তাসমান সাগর পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়।
তার আগে ফিরে তাকানো যাক আগের আসরগুলোর আলোচিত কয়েকটি অঘটনের ম্যাচে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের জয়, ২০০৭
অস্ট্রেলিয়ার টানা তৃতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের তখনও পাঁচ মাস পার হয়নি। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেয় রিকি পন্টিংয়ের দল। কিন্তু পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, মাইক হাসি, ব্রেট লিদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেয় জিম্বাবুয়ে। ৪৫ বলে অপরাজিত ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তাদের ৫ উইকেটে জয়ের নায়ক ব্রেন্ডন টেইলর।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওই আসরে ‘বি’ গ্রুপে দুই দলেরই সেটি প্রথম ম্যাচ। কেপ টাউনে শুরু থেকেই অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে জিম্বাবুয়ে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন এল্টন চিগুম্বুরা। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইনিংসের চতুর্থ বলেই বিদায় করেন গিলক্রিস্টকে। নিজের পরের ওভারে এসে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার হেইডেনকে। এরপর পন্টিংকে ফেরাতেও তিনি অবদান রাখেন ক্যাচ নিয়ে। চার ওভারের মধ্যে ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ভুসি সিবান্দার দুর্দান্ত থ্রোয়ে রান আউটে যখন বিদায় নেন হাসি, দশম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৪ উইকেটে ৪৮। সেখান থেকে তারা ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৮ করতে পারে মূলত ব্র্যাড হজের সৌজন্যে। ২২ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। সাইমন্ডসের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপে তখন ব্রেট লিগ, মিচেল জনসনের মতো গতিময় বোলার। তাদের সঙ্গী ন্যাথান ব্রাকেন ও স্টুয়ার্ট ক্লার্ক। জিম্বাবুয়ের জন্য কাজটা তাই সহজ ছিল না।
রান তাড়ায় টেইলরের সঙ্গে ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সুর বেঁধে দেন সিবান্দা। তবে একটা পর্যায়ে ১৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে একাদশ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর হয়ে যায় ৭০/৪। একটু পর নামে ঝুম বৃষ্টি। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে তখনও ৫ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। জিম্বাবুয়ের জন্য শঙ্কা ছিল তাই যথেষ্ট। তবে আধা ঘণ্টা পরই আবার শুরু হয় খেলা। কাটা যায়নি কোনো ওভার।
দলকে এরপর একটু একটু পর এগিয়ে নেন টেইলর ও হ্যামিল্টন মাসাকাদাজা। ৫৩ রানের জুটি যখন ভাঙল মাসাদাকজার (২৮ বলে ২৭) বিদায়ে, তখনও ৯ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ১৬ রান। শেষ ওভারে যেটি দাঁড়ায় ১২ রানে।
ব্রাকেনের প্রথম বলেই অফ স্টাম্পের বাইরে নিচু ফুল টস পেয়ে চার মেরে দেন টেইলর। পরের তিন বলে আসে ৪ রান। শেষ দুই বলে চাই ৪। পঞ্চম বল ব্রাকেন করেন লেগ স্টাম্পে। লেগ বাই থেকে হয়ে যায় বাউন্ডারি। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা ছুটে যায় মাঠে। টেইলর, চিগুম্বুরাকে নিয়ে তারা মাতেন উদযাপনে।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকের পর টেইলরের সেটি ছিল মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ৪টি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৫ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনিই হন ম্যান অব দা ম্যাচ।
লর্ডসে ডাচ রূপকথা, ২০০৯
প্রথমবার ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। একপেশে ম্যাচ হবে বলেই হয়তো ধারণা করেছিল সবাই। তবে রোমাঞ্চের নানা অলিগলি পেরিয়ে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ইংলিশদের হারিয়ে, সবার অনুমান পাল্টে দিয়ে, ৪ উইকেটের স্মরণীয় এক জয় তুলে নেয় ডাচরা। ৩০ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে নায়ক টম ডে গ্রুথ।
ম্যাচের প্রথম ১১ ওভারে লড়াইটা ছিল অবশ্য একপেশেই। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রবি বোপারা ও লুক রাইটের দারুণ ব্যাটিংয়ে এই সময়ে বিনা উইকেটে ১০০ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। এরপরই নেদারল্যান্ডস ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। পরের ৯ ওভারে ইংলিশরা তুলতে পারে কেবল ৬২ রান, উইকেট হারায় ৬টি। ওয়াইজ শাহ, ওয়েন মর্গ্যান, অধিনায়ক পল কলিংউড পারেননি দাবি মেটাতে।
শুরু থেকে অষ্টাদশ ওভার পর্যন্ত খেলে ৪৯ বলে ৮টি চারে ৭১ রান করেন রাইট। ৩৪ বলে ৫ চারে ৪৬ রান করেন বোপারা। আর কেউ ১৫ রানও করতে পারেননি। অবাক করা হলে সত্যি, ইংল্যান্ডের ইনিংসে ছিল না কোনো ছক্কা!
৪ ওভারে ৩৫ রানে দুই ওপেনারের উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডসের সফলতম বোলার রায়ান টেন ডাসকাটে।
রান তাড়ায় ২৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধাক্কা খায় ডাচরা। এরপর শুরু গ্রুথের লড়াই। প্রথম বলেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে চার মেরে শুরু করেন তিনি। ব্রডের পরের ওভারে দুই চারের সঙ্গে মারেন একটি ছক্কা।
তৃতীয় উইকেটে বাস জুইডেরেন্টের সঙ্গে ২৮ বলে ৪৩ ও পঞ্চম উইকেটে পিটার বোরেনের সঙ্গে ২৯ বলে ৫০ রানের দারুণ দুটি জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন গ্রুথ। ত্রয়োদশ ওভারে শেষ হয় তার ৬ চার ও এক ছক্কায় গড়া ৩০ বলে ৪৯ রানের ইনিংস।
শেষ ওভারে ৪ উইকেট হাতে রেখে নেদারল্যান্ডসের দরকার ছিল ৭ রান। তখন ১৪ বলে ১৯ রানে ক্রিজে থাকা ডেসকাটেই ছিলেন মূল ভরসা।
ব্রডের এই ওভারে প্রথম তিন বলে আউটের তিনটি সুযোগ হারায় ইংল্যান্ড। প্রথম দুটিতে দুটি রান আউটের, তৃতীয়টিতে ডেসকাটের ক্যাচ নিতে পারেননি ব্রড।
৩ বলে চাই ৪। চতুর্থ বল এজগার শিফার্লি মিস করলেও বাই থেকে আসে ১ রান। পরের বলে ডেসকাটের সিঙ্গেল। শেষ বলে দরকার ২। ঠিকমতো খেলতে পারেননি শিফার্লি। শুয়ে পড়ে বল ধরে ফেলেন ব্রড। রান আউটের দারুণ সুযোগ, আউট হলে ১ রানে জিতে যাবে ইংল্যান্ড। কিন্তু থ্রোয়ে বল নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে লাগাতে পারেননি ব্রড। উল্টো ওভার থ্রো থেকে আরও এক রান নিয়ে বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে ওঠে ডাচরা।
বিব্রতকর হারে শুরুর পর সেই লর্ডসেই ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অবশ্য ইংল্যান্ডই।
বাংলাদেশকে হারিয়ে হংকংয়ের ইতিহাস, ২০১৪
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। প্রাথমিক পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে ৯ উইকেট ও ৮ উইকেটের দুটি বড় জয়ে উড়ছিল বাংলাদেশ। এই পর্বের শেষ ম্যাচে সেই বাংলাদেশকে মাটিতে নামায় হংকং। আইসিসির সহযোগী দেশটি তুলে নেয় ২ উইকেটের স্মরণীয় এক জয়।
টি-টোয়েন্টিতে সেটিই এখনও পর্যন্ত দল দুটি একমাত্র সাক্ষাৎ। যেকোনো সংস্করণে আগে একবারই দেখা হয়েছিল তাদের। ২০০৪ সালে কলম্বোয় ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে সহজেই জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০ ওভারের লড়াইয়ে বাজিমাত করে হংকং।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস হেরে। প্রথম ওভারেই তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানকে হারিয়ে স্বাগতিকরা খায় বড় ধাক্কা।
শুরুর জোড়া ধাক্কা সামাল দেন এনামুল হক ও সাকিব আল হাসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাদিম আহেমদকে টানা তিনটি চার মারার পর এনামুল বিদায় নেন ২৬ রান করে।
সাকিব ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ১০ ওভার শেষে রান ছিল ৩ উইকেটে ৮০। এরপরই নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় চিত্র। ৫.৫ ওভারে মাত্র ২৩ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৮ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ!
২৭ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন সাকিব। ৩.৩ ওভারে ক্যারিয়ার সেরা ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাদিম আহমেদ। কিছুটা পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদির মতো অ্যাকশনে বোলিং করা লেগ স্পিনার নিজাকত খানের প্রাপ্তি ২১ রানে ৩টি।
বোলিংয়ে ইনিংসের প্রথম বৈধ বলেই ইরফান আহমেদের সহজ ফিরতি ক্যাচ হাতছাড়া করেন বোলার আল-আমিন হোসেন। পরের ওভারে আরেক ওপেনারকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব। তবে ১২ রানে থাকার সময়ে ইরফানের আরেকটি ক্যাচ ফেলেন ফিল্ডার রুবেল হোসেন।
দুই দফা জীবন পেয়ে পঞ্চম ওভারে আব্দুর রাজ্জাককে একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন ইরফান। পরে আল আমিনকে ওড়ান ছক্কায়।
মাঝে সাকিবের একই ওভারে ইরফান (২৮ বলে ৩৪) ও জেমি অ্যাটকিনসনের বিদায়ের পর দ্রুত আরও দুটি উইকেট নিয়ে হংকংকে চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। ১০ ওভার শেষে রান ছিল ৫ উইকেটে ৫১।
সেখান থেকে দারুণ এক ইনিংস খেলে হংকংকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান মুনির দার। ডাবল নিতে গিয়ে কিপার মুশফিকের সঙ্গে সংঘর্ষে একবার আঘাতও পান তিনি। তবু দমে যাননি। ২৪ বলে দরকার যখন ৩৬, সপ্তদশ ওভারে ফরহাদ রেজাকে দুটি চার ও একটি ছক্কায় নেন ১৫ রান।
আবার জমে ওঠে লড়াই। পরের ওভারে কোনো রান না দিয়েই মুনিরের (২৭ বলে ৩৬ ) উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক। শেষের আগের ওভারে স্রেফ ৩ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন সাব্বির।
শেষ ওভারে হংকংয়ের দরকার ছিল ৬ রান, বাংলাদেশের ২ উইকেট। প্রথম বলে এক, পরের দুই বলে দুটি ডাবল নিয়ে স্কোর লেভেল করে ফেলে হংকং। আর চতুর্থ বলে রাজ্জাককে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান হাসিব আমজাদ।
৪ উইকেটের জন্য ম্যাচের সেরা হন নাদিম।
ওই হারের পরও নেপালের চেয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা হয়েই সুপার টেন পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশ।
আবারও নেদারল্যান্ডসে ভূপাতিত ইংল্যান্ড, ২০১৪
২০০৯ আসরে লর্ডসের বিব্রতকর হারের ক্ষত তখনও হয়তো শুকায়নি। ২০১৪ আসরে আবারও নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বসে ইংল্যান্ড। এবার ইংলিশদের স্রেফ গুঁড়িয়ে দেয় ডাচরা। ১৩৩ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে তারা গুটিয়ে দেয় স্রেফ ৮৮ রানে!
সেই নেদারল্যান্ডস, টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে যারা হেরেছিল জিম্বাবুয়ের কাছে, সুপার টেন পর্বে কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অল আউট হয়েছিল স্রেফ ৩৯ রানে (তখন টি-টোয়েন্টির সর্বনিম্ন স্কোর), তারাই নিজেদের শেষ ম্যাচে ইংলিশদের নাস্তানাবুদ করে তুলে নেয় ৪৫ রানের বড় জয়।
চট্টগ্রামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে স্টেফান মাইবার্গের ৩১ বলে ৩৯ ও ওয়েসলি বারেসির ৪৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৩৩ রান করে নেদারল্যান্ডস। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা দুজন ৪৪ বলে যোগ করেন ৫০ রান।
প্রথম ১১ ওভারে নেদারল্যান্ডসের রান ছিল ৮৪। পরের ৯ ওভারে তারা তুলতে পারে মাত্র ৪৯ রান। তবে সেই পুঁজিই যথেষ্ট করে তোলেন তাদের বোলাররা।
রান তাড়ায় ইংল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় ১৮ রানে। এরপর চলতেই থাকে সেই ধারা। ১৭.৪ ওভারেই তারা থমকে যায় ৮৮ রানে। এই সংস্করণে যা এখনও যৌথভাবে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, আর সহযোগী কোনো দেশের বিপক্ষে পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের তখনকার সর্বনিম্ন।
ওয়েন মর্গ্যান, জস বাটলার, মইন আলি টিকতেই পারেননি। দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল তিন জন। সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন রবি বোপারা।
ইংলিশদের ইনিংসে বাউন্ডারি বলতে ছিল কেবল ৪টি চার!
নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন নেদারল্যান্ডসের প্রায় সবাই। ৩.৪ ওভারে মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন পেসার মুদাসসর বুখারি। আরেক পেসার লোগান ফন বিকের প্রাপ্তিও ৩টি, ২ ওভারে ৯ রান দিয়ে।
মজার ব্যাপার, এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইংল্যান্ড দুই ম্যাচ খেলে দুটিই হেরেছে, দুটিই বিশ্বকাপে!
আফগান স্পিনে কাবু উইন্ডিজ, ২০১৬
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিখ্যাত হয়ে আছে ফাইনালে শেষ ওভারে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের টানা চার ছক্কার জন্য। তার ওই শেষের ঝড়ে প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ২০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই আসরেই তারা বড় অঘটনের শিকার হয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে। আসরে সেটিই ছিল তাদের একমাত্র হার।
সুপার টুয়েলভে সেটি ছিল দুই দলের শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচের আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেমন সেমি-ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত হয়েছিল, আফগানিস্তানের সেরা চারের আশাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচটি ছিল তাই ‘ডেড রাবার।’
ওই ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কখনও খেলা হয়নি আফগানিস্তানের। নাগপুরে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানরা ৭ উইকেট হারিয়ে করতে পারে কেবল ১২৩ রান। পরে সেটিই জয়ের জন্য যথেষ্ট করে তোলেন তাদের বোলাররা, বিশেষ করে তিন স্পিনার আমির হামজা, মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান।
আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর আফগান (তখন তার নাম ছিল আসগর স্টানিকজাই) নতুন বল তুলে দেন বাঁহাতি স্পিনার হামজার হাতে। প্রথম ওভারে তিনি দেন স্রেফ ১ রান। নিজের পরের ওভারে আবারও ১ রান দিয়ে তুলে নেন এভিন লুইসের উইকেট।
জনসন চার্লস, মারলন স্যামুয়েলসরাও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। দলকে টানছিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। তার ২৯ বলে ২৮ রানের ইনিংস থামান নবি।
শেষ পাঁচ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৪০ রান। হাতে উইকেট ছিল ৬টি। আন্দ্রে রাসেল তখনও উইকেটে থাকলেও তিনি সপ্তদশ ওভারে রান আউটে বিদায় নেন ৭ রান করে।
শেষের আগের ওভারে ড্যারেন স্যামি আউট হলেও ব্র্যাথওয়েটের দুই ছক্কায় ওই ওভারে আসে ১৫ রান। শেষ ওভারে চাই ১০। দারুণ বোলিংয়ে নবি দেন স্রেফ ৩ রান। প্রথম দুটি বল ডট করার পর এই অফ স্পিনার ফিরিয়ে দেন ব্র্যাথওয়েটকে। আর পেরে ওঠেনি ক্যারিবিয়ানরা।
৬ রানের জয়ে উৎসবে মাতে আফগানিস্তান।
শেষ পাঁচ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা নিতে পারে মাত্র ৩৩ রান। যেখানে শেষ ৫ ওভারে আফগানিস্তান তুলেছিল ৪৭। ৪০ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন নাজিবউল্লাহ জাদরান।
বোলিংয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে বড় অবদান রাখেন হামজা। রশিদ ও নবি দুজনই ৪ ওভারে সমান ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি করে উইকেট।
শীর্ষ আট দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সেটিই ছিল আফগানিস্তানের প্রথম জয়।