পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর উড়তে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ।
Published : 29 Oct 2022, 06:16 PM
গ্যাবায় বৃহস্পতিবার আইসিসি ডিজিটালের কোনো অনুষ্ঠানের শুটিং করছিলেন পমি এমবাংওয়া। কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরদিনের ম্যাচ নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই এই ধারাভাষ্যকার ও জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার হাসিমুখে বললেন, “জিম্বাবুয়েই সম্ভবত ফেভারিট, আশা করি ওরাই জিতবে…।” মাস ছয়েক আগে এই কথা শুনলে হয়তো অনেকের চোখ কপালে উঠত। এখন এটিকেই মনে হচ্ছে স্বাভাবিক।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাবে এখনও অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে তারা, ১৯ ম্যাচে জয় ১২টি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে যখন প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল, ফেভারিট তখন জিম্বাবুয়েই এবং এতে দ্বিমত করার লোক খুব বেশি হয়তো নেই।
দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরমান্সের কারণেই এই বাস্তবতা। সবশেষ ম্যাচে অসাধারণ দলীয় পারফরম্যান্সে পাকিস্তানকে হারিয়ে স্মরণীয় জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্রিজবেনে এসেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ এখানে এসেছে সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে। জিম্বাবুয়েকে ফেভারিট বলার জন্য যথেষ্ট এটুকুই। তবে স্রেফ এটাই নয়। গত জুলাইয়ে দুই দলের সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তো জয়ী দলের নাম জিম্বাবুয়ে!
ব্রিজবেনে রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় তাই অনেক জায়গায় এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে জিম্বাবুয়ে। বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষের প্রতি সেই সমীহ দেখালেন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামও।
“অবশ্যই ওদের জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। তবে আমরা জিম্বাবুয়েকে সম্মান করি। পাকিস্তানে বিপক্ষে তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করি। ওই ম্যাচের প্রতিটি বল আমরা দেখেছি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা যেভাবে জিতেছে, এটা অবিশ্বাস্য। পুরো কৃতিত্ব ও সম্মান তাদের প্রাপ্য।”
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে নিজেদের রেকর্ড ব্যবধানে। বোলিং আর ব্যাটিংয়ের প্রথম দুই ওভার ছাড়া গোটা ম্যাচে তেমন কোনো লড়াই করতেও পারেনি দল। এমন পরাজয়ের পর মনোবল তলানিতে নেমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। নিজেদের উজ্জীবত করার কাজটিও কঠিন।
শ্রীরাম অবশ্য দাবি করলেন, ওই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে দল চনমনে হয়েই জিম্বাবুয়েকে হারানোর লড়াইয়ে নামবে।
“আমার মনে হয়, দলের মনোবল খুব ভালো এখন। আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি, দক্ষিণ আফ্রিকা সেদিন অনেক বেশিই ভালো খেলেছে, খুব শক্তিশালী ছিল ওরা। রাইলি রুশো তিন নম্বরে নেমে ওদেরকে এমন শক্তি জুগিয়েছে, এই মুহূর্তে যা বিশ্বের সেরা। কুইন্টন ডি কক ও রাইলি রুশোর মতো দারুণ দুজন ক্রিকেটারের ভালো ইনিংসের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। ওই হার থেকে আমরা শিখব।”
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন ছিল না বাংলাদেশ দলের। স্রেফ নুরুল হাসান সোহান ও ইয়াসির আলি চৌধুরি ব্যাটিং অনুশীলন করেন গ্যাবার নেটে। তাদের সঙ্গে ছিলেন কোচিং স্টাফরা। আগের ম্যাচ খেলার ক্লান্তি ও ভ্রমণের পর অনুশীলন করার চেয়ে বিশ্রাম নেওয়া ও শরীরকে রিকভারির সময় দেওয়া বেশি জরুরি মনে করেছে দল। এ দিন অনুশীলন নেই বলেই আগের দিন সিডনিতে থেকে ব্রিজবেন এসে বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি মাঠে গিয়ে উইকেট দেখে আসে গোটা দল।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আগে বেশ কবারই বলেছেন, টুর্নামেন্ট শুরুর পর এখন আর বাড়তি অনুশীলন বা নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। প্রস্তুতি যা নেওয়ার, তাদের মতে তা আগেই নিয়েছেন তারা।
জিম্বাবুয়েও আগের ম্যাচ খেলেছে একই দিনে এবং পার্থ থেকে লম্বা ফ্লাইটে তারা এসেছে ব্রিজবেন। তবে ম্যাচের আগের দিনও গোটা দলকে দেখা গেছে অনুশীলন করতে। ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি গ্যাবায় অনেকটা সময় ধরে ফিল্ডিং অনুশীলনও সেরে নেয় তারা।
অভাবনীয় ও বড় জয়ের পর অনেক সময়ই তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা দলগুলির একটু আত্মতৃপ্তি চলে আসে। কাজ শেষ হয়ে গেছে বলে একটা অনুভূতি খেলা করে, মনোযোগ নড়ে যায়। তবে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন বললেন, এই এক জয়েই তারা তৃপ্ত নন।
বাংলাদেশকে হারাতে পারলে সামনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়টাও তো প্রত্যাশিত। আরভিন তাই স্বপ্ন দেখছেন সেমি-ফাইনালে জায়গা পাওয়ার।
“আমরা জানি, বাংলাদেশ মানসম্পন্ন দল এবং তাদের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই সেরাটা খেলতে হবে আমাদের। ছেলেরা অবশ্যই তেতে আছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর অবশ্যই ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী। তবে আমরাও জানি, খেলাটা কতটা নড়বড়ে এবং কতটা দ্রুত সব বদলে যেতে পারে।”
“আমাদের সুযোগ আছে সেমিতে খেলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হবে, এরপর নেদারল্যান্ডসকে হারাতে হবে। এরপর ভারতের বিপক্ষে খেলা… সঙ্গে অন্য কিছু ম্যাচের ফল মিলিয়ে সুযোগ আসতে পারে আমাদের। তবে আপাতত অত দূর তাকাচ্ছি না আমরা। আপাতত কালকের ম্যাচে ভালো পারফর্ম করতে চাই।”
বাংলাদেশ দলে অন্তত একটি পরিবর্তন একরকম অনুমিতই। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য মেহেদী হাসান মিরাজকে একাদশে নেওয়া হয়েছিল। তার বদলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একাদশে ফিরতে পারেন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি কিংবা গ্যাবার বাউন্সের কথা ভেবে যোগ করা হতে পারে আরেকজন পেসার। প্রতিপক্ষ যেহেতু জিম্বাবুয়ে, মিরাজের বদলে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে নামিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে একাদশে একটি-দুটি পরিবর্তনের চেয়েও বেশি জরুরি সামগ্রিক পারফরম্যান্স ও মানসিকতায় বদল। জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলে অন্তত কাগজে-কলমে বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে এটি। জিম্বাবুয়ে জিতে গেলে বড় এক পদক্ষেপ নেবে সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন পূরণের পথে। ১৩৭ বছরের পুরনো মাঠে এই দুই দলের লড়াইকে ঘিরে হয়তো কুলীনদের আগ্রহ খুব একটা থাকবে না। তবে এই দুই দলের জন্য এটি অনেকটাই ফাইনালের মতো!