‘নীরব নায়ক’ মিরাজকে সাকিবের পথেই দেখছেন কোচ

মিরাজ একদিন সাকিবের মতো অলরাউন্ডার হতে পারবেন বলেই বিশ্বাস রাসেল ডমিঙ্গোর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2022, 12:19 PM
Updated : 6 Dec 2022, 12:19 PM

অনুশীলনে পেস বোলিং গ্রুপ নিয়ে কাজ করছিলেন বোলিং অ্যালান ডোনাল্ড। ব্যাটিং অনুশীলন সেরে মেহেদী হাসান মিরাজ যাচ্ছিলেন পাশ দিয়েই। কিছু একটা বললেন তিনি মুস্তাফিজুর রহমানকে। পরক্ষণে দুজন হেসেই খুন! তাদেরকে দেখে সেই হাসির মেলায় যোগ দিলেন অন্য পেসাররাও। শুধু ওই সময়ই নয়, মিরাজকে ঘিরে এই হাসির ফোয়ারা দেখা গেল মঙ্গলবার অনুশীলন সেশন জুড়েই। এই তিনি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কৌতুক করছেন তো আবার খুনসুটিতে মেতে উঠছেন অন্য কারও সঙ্গে। 

এই চিত্র অবশ্য শুধু এই দিনের নয়। বরং নিয়মিতই মিরাজকে দেখা যায় এই চেহারায়। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ের পর তাকে ঘিরে তুমুল আগ্রহের কারণেই হয়তো এখন আলাদা করে চোখে পড়ছে এসব। কিন্তু বরাবরই তিনি ইতিবাচকতায় মোড়ানো দারুণ এক চরিত্র। তার উপস্থিতি মানেই মাঠের ভেতরে-বাইরে হাসি-খুশির আবহ। 

দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও তুলে ধরলেন সেটি, “এই দলের সে দুর্দান্ত এক চরিত্র এবং একসঙ্গে কাজ করার জন্য দারুণ এক ছেলে।” 

তবে ক্রিকেটে ‘ক্যারেকটার’ কিংবা অন্য সবকিছুর আগে জরুরি পারফরম্যান্স। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মিরাজ দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ওয়ানডেতে নিজের জায়গা করে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে বটে। তবে ঠিকই খুঁজে নিয়েছেন আপন পথ। এই সংস্করণেও এখন তিনি অপরিহার্য নাম। তার পারফরম্যান্সে উন্নতি ও ধারাবাহিকতার ছাপ এতটাই যে, পথে থাকলে তাকে একসময় সাকিবের উচ্চতায়ও দেখছেন ডমিঙ্গো। 

শেষ জুটিতে ৫১ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে রোববার ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়ক মিরাজ। ব্যাটিংয়ের আগে বল হাতেও নিজের কাজটা ঠিকঠাক করেন তিনি। দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন, নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন পাওয়ার প্লেতে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামেও আরেকটি স্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১৬ রান তাড়ায় ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনের সঙ্গে অসাধারণ জুটিতে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যান তিনি। 

সেটি মনে করিয়ে দিয়ে ডমিঙ্গো বললেন, এই দলে মিরাজ আড়ালের নায়ক, যার ওপর তার আস্থা অগাধ। 

“আগের ম্যাচের ইনিংসটি ছিল স্পেশাল। যেভাবে সে দলের হাল ধরে রাখে, শেষ দিকে নিজের চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছ ছিল এবং ধীরস্থির ছিল…। এমন নয় এবারই প্রথম সে এমন খেলল। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ৪০ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর দারুণ খেলেছে।” 

“এই দলে সে নীরব নায়কের মতো। সব সংস্করণে সে এত ধারাবাহিক… টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে, যে কোনো জায়গায় ব্যাট করার সামর্থ্য আছে। চাপ সামলাতে পারে খুব ভালোভাবে। বোলিংয়ে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে একটা সময় মনে হয় দুই বা তিনে ছিল, জানি না এখন কোথায় আছে। ওর ওপর সবসময় নির্ভর করা যায়।” 

শুধু ব্যাটিংয়েই যে খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন তিনি, তা নয়। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বোলিংয়েও প্রমাণ মেলে তার হার না মানা মানসিকতা ও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্যের। সেবার প্রথম ওয়ানডেতে প্রথমে ৪ ওভারে ৩৮ রান দিলেও পরে ৬ ওভারে ২৩ রান দিয়ে মহামূল্য ৪ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রাখেন দলের জয়ে। 

গত বছরের মে মাসে আইসিসি ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে উঠে আসেন তিনি। গত জুলাইয়েও ছিলেন তিনে। এখন আছেন সাতে। ব্যাটিং নিয়ে প্রশংসার স্রোতে বোলার মিরাজের প্রবাহও বইয়ে দিলেন ডমিঙ্গো। 

“ও যদি শুরুতে কিছু রান দেয় বা খরুচেও হয়, কঠিন সময়ে ঠিকই দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে পারে। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিগুলোতেই সে নিজেকে বেশি করে মেলে ধরে।” 

বাংলাদেশ কোচ তাকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেন বলেও দাবি করলেন। 

“আমি ওকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করি। লোকে কী ভাবে বা মিডিয়া, তা আমি জানি না। আমি ওকে মূল্য দেই এবং তালিকায় প্রথম নামগুলোর মধ্যেই তাকে রাখি।” 

বাংলাদেশের একজন অলরাউন্ডার যখন ব্যাটে-বলে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে শুরু করেন, সাকিব আল হাসানের প্রসঙ্গও তখন উঠে আসে অবধারিতভাবেই। দলে তার বিকল্প নেই, তার ধারেকাছেও নেই কেউ। তবে তিনি যখন থাকবেন না, একজনকে দায়িত্বটা নিতে হবে। মিরাজ কি পারবেন? 

প্রশ্ন শুনে ডমিঙ্গোর কণ্ঠে আগে ঝরে পড়ল সাকিব-বন্দনা। বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটারকে যতদিন সম্ভব ধরে রাখার তাড়না শোনালেন তিনি। 

“সাকিব অবিশ্বাস্য একজন। কোচ হিসেবে জ্যাক ক্যালিসের শেষ সময়টা আমি দেখেছি। ৮ বছর পরও তারা ঘাটতি পূরণ করতে পারছে না। ৬ ব্যাটসম্যান খেলাবে নাকি ৭ জন, ষষ্ঠ বোলার নাকি বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো হবে, এসব নিয়ে ঝামেলায় থাকে। এই ধরনের ক্রিকেটার তাই বিরল। সে বোলিং ভালো না করলে রান করে পুষিয়ে দেয়। ব্যাটিং ভালো না করলে বল হাতে পারফর্ম করে।” 

“তাদের অভাব পূরণ করা কঠিন। এজন্যই তারা অসাধারণ ও স্পেশাল ক্রিকেটার। যতদিন সম্ভব তাকে ধরে রাখতে হবে আমাদের এবং তরতাজা রাখতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলার তাড়না তার থাকে, অন্তত যতদিন না অন্য কেউ তা করতে পারছে।” 

তবে ভবিষ্যতে তাকিয়ে কোচ বাজি রাখছেন মিরাজের ওপরও। সাকিব জমানার পর মিরাজের হাতেই তিনি দেখছেন অলরাউন্ডারের মশাল। 

“মিরাজই উপযুক্ত কি না… হয়তো! শীর্ষ পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করার সামর্থ্য তার আছে, বল হাতেও ধারাবাহিক হতে পারে। সবদিক থেকেই তাই সে সাকিবের অনুসারী হতে পারে, যদি এভাবে পারফর্ম করতে থাকে।”