চিটাগং কিংসের উসমান খান একা যে রান করলেন, গোটা দুর্বার রাজশাহী দল মিলেও তা স্পর্শ করতে পারল না।
Published : 03 Jan 2025, 05:45 PM
শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন দিন। চারপাশ ঘোলাটে। দুপুরে দুটোর ম্যাচও তাই শুরু হলো ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে। তবে খেলার শুরুর পর আসল আলোর ঝলকানি দেখা গেল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ২২ গজে। বিদ্যুচ্চমকের মতো একেকটি শট খেললেন উসমান খান। রাজশাহীর অবশ্য বোলিং করল একদম যাচ্ছেতাই। সেটিকে কাজে লাগিয়ে চিটাগংয়ের উসমান উপহার দিলেন এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি।
উসমানের সেঞ্চুরিতে চিটাগং কিংস পৌঁছে গেল আসরের সর্বোচ্চ দলীয় রানে। সেই রানের নাগাল পাওয়া তো দূরের কথা, উসমানের রানকেও ছুঁতে পারল না দুর্বার রাজশাহী।
প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া চিটাগং প্রথম জয়ের দেখা পেল রাজশাহীকে ১০৫ রানে হারিয়ে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগং কিংস ২০ ওভারে তোলে ২১৯ রান।
২০২৩ বিপিএলের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে সেঞ্চুরি করা উসমান এবার চট্টগ্রামের আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন ৬২ বলে ১২৩ রানের ইনিংস। রাজশাহী রান তাড়ায় গুটিয়ে যায় স্রেফ ১১৪ রানে।
বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে এর চেয়ে বড় ব্যবধানের জয় আছে কেবল একটিই। সেটিও চিটাগং কিংসের। ২০১৩ আসরে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ১১৯ রানে জিতেছিল তারা
তাসকিন-ঝলকে শুরু
আগের দিন সাত উইকেট শিকার করে ইতিহাস গড়া তাসকিন আহমেদ নতুন দিনে শুরু করেন যেন সেখান থেকেই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট করে দেন তিনি পারভেজ হোসেন ইমনকে। রান করতেই পারেননি আগ্রাসী ওপেনার।
ঝড়ের নাম উসমান
প্রথম দুই ওভারে চিটাগংয়ের রান ছিল সাত। তৃতীয় ওভারে তাসকিনকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে ঝড় তোলার আভাস দেন উসমান। পরের ওভার থেকেই উত্তাল তার ব্যাট। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের টানা চার বলের মধ্যে মারেন তিন চার ও এক ছক্কা। পরের ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি মোহর শেখ অন্তরকে।
ফিফটি করতে তার বল লাগে কেবল ২১টি।
যোগ্য সঙ্গী ক্লার্ক
বিপিএল অভিষেকে শুরুতে একটু সময় নেন গ্রাহাম ক্লার্ক। ৫ ওভারে চিটাগংয়ের রান যখন ৫০, ক্লার্কের রান তখন ৯ বলে ২। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান পেয়ে বসেন শফিউল ইসলামকে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা পেসারের এক ওভারে চারটি চার ও একটি মারেন তিনি।
শতরানের জুটি
শফিউলের ওভারে অমন তাণ্ডবের পরও ক্লার্ক মূলত ছিলেন সহযোগী। ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকেন মূলত উসমান। বাঁহাতি স্পিন, অফ স্পিন, লেগ স্পিন কিংবা পেস- তার সামনে পাত্তা পায়নি কিছুই। দুজনের জুটির শতরান আসে কেবল ৫২ বলেই।
একাদশ ওভারে ক্লার্কের বিদায়ে জুটি থামে ৬৩ বলে ১২০ রানে। বিপিএল অভিষেকে ২৫ বলে ৪০ রান করেন ডারহামের ব্যাটসম্যান।
সঙ্গী এবার মিঠুন
শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে যেরকম ব্যাটিং প্রত্যাশিত, দলকে তেমন কিছুই দেন মোহাম্মদ মিঠুন। চিটাগং অধিনায়কের সঙ্গে উসমানের জুটিতে ৬৩ রান আসে কেবল ৩১ বলেই।
দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ বলে ২৮ করেন মিঠুন।
শঙ্কা ও সেঞ্চুরি
৮৯ থেকে সোহাগ গাজীতে ছক্কা মেরে ৯৫ রানে পৌঁছে যান উসমান। পরের বলে চেষ্টা করেন আরেকটি বড় শটের। ব্যাটে লাগেনি ঠিকমতো, ক্যাচ উঠে যায় ফাইন লেগের দিকে। দুই ফিল্ডার শফিউল ইসলাম ও সাব্বির হোসেনের সংঘর্ষে জীবন পেয়ে যান উসমান। পরে আর ছক্কার চেষ্টা না করে ওই ওভারেই শতরান পূরণ করেন তিনি ৪৮ বল খেলে।
সেঞ্চুরির পর দুটি ছক্কা মারেন তিনি মোহর শেখকে। শেষ পর্যন্ত শেষের আগের ওভারে তার ইনিংস শেষ করেন তাসকিন।
ইনিংসের শেষ দুই বলে শফিউলকে চার ও ছক্কা মেরে শেষ করেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হায়দার আলি।
তাসকিনের আলোর নিচে অন্যদের আঁধার
রাজশাহীর বোলিং আক্রমণ যেমন স্রেফ এক পায়ের ঘোড়া! টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করে চলেছেন এই পেসার। প্রতিপক্ষের এমন বিশাল স্কোরের দিনও ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দিয়ে তার উইকেট দুটি। আসরের তিন ম্যাচে তার শিকার ১২টি।
একজনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের এই দলে অন্যদের অবস্থা অতি সাধারণ। এ দিনই যেমন, প্রতি ওভারেই শর্ট বল, হাফ ভলি বল, একাধিক আলগা বল করে উসমান ও অন্য ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে দিয়েছেন রাজশাহীর বোলাররা। কোনো ধরনের চাপই তারা তৈরি করতে পারেননি। টানা দুই-তিনটি ডেলিভারি টানা ভালো লাইন-লেংথে রাখতে পারেননি কেউই।
শেয়ানে শেয়ানে শুরু রান তাড়া
রাজশাহীর রান তাড়ার শুরুটায় ছিল ম্যাচ জমে ওঠার ইঙ্গিত। শুরুতে যেমন দ্রুত রানও উঠেছে, তেমনি উইকেটও পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে।
প্রথম ওভারে শরিফুল ইসলামকে দুটি চার মেরে ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যান সাব্বির হোসেন। তিনে নামা এনামুল হক অবশ্য ভালো করতে পারেননি (৯ বলে ৮)। তবে মোহাম্মদ হারিসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানের চাকা ঘুরতে থাকে দ্রুতই। ৫ ওভারে ৫০ পেরিয়ে যায় রাজশাহী।
মোহাম্মদ ওয়াসিম আক্রমণে এসেই স্বস্তি দেন চিটাগংকে। তার প্রথম বলেই বিদায় নেন হারিস (১৫ বলে ৩২)। কিছুদিন আগে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে ভালো করা আকবর আলি আউট হয়ে যান একটু ঝলক দেখিয়ে (৮ বলে ১৯)।
উল্টোযাত্রা
আকবরের বিদায়ের পরও লড়াইয়ে ছিল রাজশাহী। ১০ ওভারে তাদের রান ছিল ৯৪। এরপরই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংস। ২০ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে তারা শেষ ৬ উইকেট।
চিটাগংয়ের দুই স্পিনার আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলামের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে রাজশাহীর ব্যাটিং। অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার সানি এবারের বিপিএলে প্রথম খেলতে নেমেই উইকেট নেন তিনটি। প্রথম স্পিনার হিসেবে এবারের বিপিএলে মেডেন ওভারও নেন তিনি। ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় আলিসেরও প্রাপ্তি তিন উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ২১৯/৫ (পারভেজ ০, উসমান ১২৩, ক্লার্ক ৪০, মিঠুন ২৮, শামীম ২, হায়দার ১৯*, ওয়াসিম ৪*; তাসকিন ৪-০-২২-২, সোহাগ ৩-০-২৮-১, মুরাদ ৪-০-৪৫-০, মোহর ২-০-২৯-০, শফিউল ৩-০-৪৬-১, বার্ল ৩-০-৩৭-০, সাব্বির ১-০-১১-০)।
দুর্বার রাজশাহী: ১৭.১ ওভারে ১১৪ (হারিস ৩২, সাব্বির ৮, এনামুল ৮, ইয়াসির ১৬, আকবর ১৮, বার্ল ১০, সোহাগ ১১, তাসকিন ১, শফিউল ১, মুরাদ ৫*, মোহর ০*; শরিফুল ৩-০-২৫-২, সানি ৪-১-২৩-৩, আলিস ৪-০-১৭-৩, ওয়াসিম ৩.১-০-২৪-২, খালেদ ৩-০-২৩-০)।
ফল: চিটাগং কিংস রানে ১০৫ জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: উসমান খান।