ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের এক আসরে বিশ্বের প্রথম দল হিসেবে টানা ১১ ম্যাচ হারল দুর্দান্ত ঢাকা।
Published : 17 Feb 2024, 09:30 PM
জয়ের জন্য ৬ বলে প্রয়োজন ২২ রান। প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে লড়াই জমানোর আভাস দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু পরে আর পারলেন না চাহিদা মেটাতে। প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা জাগিয়েও আরেকটি পরাজয়ে শেষ হলো দুর্দান্ত ঢাকার এবারের বিপিএল।
নিজ শহরের মাঠে ঢাকাকে ১০ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ পর জয়ে ফিরল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার ১৬০ রানের লক্ষ্যে ঢাকার ইনিংস থামে ১৪৯ রানে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে আসর শুরু করা ঢাকা হারল পরের ১১ ম্যাচের সবকটি। বিশ্বের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই এক আসরে টানা এত বেশি ম্যাচ হারের রেকর্ড নেই আর কোনো দলের।
বিপিএলের এক আসরে ১১ ম্যাচ হারের নজির অবশ্য আগেও আছে। ২০১৯ সালে টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরে ১১ ম্যাচ হেরেছিল সিলেট থান্ডার। বছর পাঁচেক পর সঙ্গী পেল তারা।
ঢাকার বিব্রতকর রেকর্ডের দিন স্বস্তির জয়ে প্লে-অফের দৌড়ে নিজেদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করল চট্টগ্রাম। ১১ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে তাদের অবস্থান। ১০ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঠিক পরেই খুলনা টাইগার্স।
চট্টগ্রামকে লড়াইয়ের সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর তানজিদ হাসান। এক চারের সঙ্গে ছয়টি ছক্কায় ৫১ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছেন তরুণ ওপেনার। তার হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
দল হিসেবে হতাশ করা ঢাকার দুই ক্রিকেটার আপাতত রান ও উইকেটের তালিকার শীর্ষে। ১১ ম্যাচে ৪ ফিফটিসহ ৩৫২ রান করেছেন অ্যালেক্স রস। শেষ ম্যাচেও এই অস্ট্রেলিয়ানের ব্যাট থেকে এসেছে দলের সর্বোচ্চ ৫৫ রান।
শেষ ম্যাচে বল হাতে ২ উইকেট পাওয়া শরিফুল ইসলাম আসর শেষ করেছেন ২২ শিকার নিয়ে। বিপিএলের এক আসরে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডও স্পর্শ করেছেন তিনি।
রান তাড়ায় শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে ঢাকা। তৃতীয় ওভারের শেষ দুই বলে অ্যাডাম রসিং ও সাব্বির হোসেনকে ফেরান শুভাগত হোম। পরের ওভারে রসের উইকেটও পেতে পারতেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ ছাড়েন তানজিদ। ৮ রানে বেঁচে যান রস।
এরপর মোহাম্মদ নাঈম শেখকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন রস। কিন্তু রানের গতি বাড়েনি। ৫১ রানের জুটি গড়তে দুজন খেলেন ৪৬ বল। একাদশ ওভারে নাঈমকে ফেরান শহিদুল। ২৯ রান করতে ৩৫ বল খেলেন বাঁহাতি ওপেনার। শন উইলিয়ামসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এক প্রান্ত আগলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন রস।
শেষ ৪ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। সালাউদ্দিন শাকিলের বলে তিন চার মেরে আশা জাগান মোসাদ্দেক। তবে ওভারের শেষ বলে ধাক্কা খায় ঢাকা। ছক্কার চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন ৪৪ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস খেলা রস।
এরপর চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক ও ইরফান শুক্কুর। ১১ বলে ৩২ রানের সমীকরণে বিলাল খানের বলে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন ইরফান। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২২ রান।
শহিদুলের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে আশা জাগান মোসাদ্দেক। পরে ঘুরে দাঁড়ান শহিদুল। শেষ পাঁচ বলে হজম করেন স্রেফ একটি বাউন্ডারি। চট্টগ্রাম পায় স্বস্তির জয়।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই সৈকত আলির উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসে জশ ব্রাউনকে ফেরান তাসকিন আহমেদ।
ওই ওভারের পর ফ্লাডলাইট বিভ্রাটে মিনিট দশেক বন্ধ থাকে খেলা। পরে শুরুর ধাক্কা সামলে তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন তানজিদ ও ব্রুস। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাসকিনের বলে দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন ব্রুস।
চাতুরাঙ্গা ডি সিলভাকে জোড়া ছক্কায় ওড়ান তানজিদ। অভিষিক্ত এনামুল হকের বলে ওয়াইড লং অফ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ছক্কা মেরে চল্লিশের ঘরে পৌঁছে যান তরুণ ওপেনার।
তানজিদের ৪৭ রানের মাথায় শন উইলিয়ামসের বলে সীমানায় সহজ ক্যাচ ছাড়েন সাব্বির হোসেন। পরের ওভারে ৩৬ বলে চলতি আসরে দ্বিতীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পরে এনামুলকে ছক্কায় উড়িয়ে পঞ্চাশের কাছে পৌঁছান ব্রুস। তবে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক ছুঁতে পারেননি তিনি। ৩৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে তিনটি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা মারেন ব্রুস।
ব্রুসের বিদায়ে ভাঙে ৬৮ বলে ৯৫ রানের জুটি। এরপর সে অর্থে বাড়েনি চট্টগ্রামের রানের গতি।
অষ্টাদশ ওভারে তাসকিনের বলে ফ্লিক করে ছয় ছক্কার শেষটি মারেন তানজিদ। শেষ বলে আরেকটি ছক্কা ওড়ান শুভাগত। পরের ওভারে দুজনকেই ফেরান শরিফুল।
ইনিংসের শেষ বলে শাহাদাত হোসেনের বাউন্ডারিতে ১৫৯ রানে পৌঁছায় চট্টগ্রাম। যা পরে ঢাকাকে থামানোর জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৫৯/৬ (সৈকত ০, তানজিদ ৭০, ব্রাউন ১১, ব্রুস ৪৮, শেফার্ড ৩, শুভাগত ৯, শাহাদাত ৬*, শহিদুল ০*; মোসাদ্দেক ৪-০-২৯-১, শরিফুল ৪-০-১৭-২, তাসকিন ৪-০-৩৮-২, এনামুল ৩-০-৩১-০, চাতুরাঙ্গা ১-০-১৫-০, উইলিয়ামস ৪-০-২৭-১)
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১৪৯/৫ (নাঈম ২৯, রসিংটন ১, সাব্বির ০, রস ৫৫, উইলিয়ামস ৯, মোসাদ্দেক ৩০*, ইরফান ১৪*; শুভাগত ৩-০-১২-২, বিলাল ৪-০-২৪-১, সালাউদ্দিন ৪-০-৩০-১, শেফার্ড ৪-০-৩৩-০, নিহাদউজ্জামান ২-০-১৮-০, শহিদুল ৩-০-৩০-১)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানজিদ হাসান