ভারতের অন্যান্য ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত ফর্ম আইপিএলেও বয়ে আনলেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
Published : 14 Apr 2025, 12:33 AM
আসরে দলের প্রথম চার ম্যাচে খেলার সুযোগ মেলেনি। অবশেষে সেই সুযোগ পেয়ে কী দারুণভাবেই না কাজে লাগালেন কারুন নায়ার। প্রায় তিন বছর পর আইপিএলে খেলতে নেমে বিস্ফোরক ইনিংস উপহার দিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান।
দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে রোববার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় ৪০ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন কারুন। ৫ ছক্কা ও ১২ চারে গড়া ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের ইনিংসটি।
এই ম্যাচের আগে কারুন সবশেষ আইপিএলে খেলেছিলেন ২০২২ সালের মে মাসে, রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে কলকাতার নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে করেছিলেন ১৩ বলে ১৩ রান।
ওই মৌসুমে ব্যাটের ধার কমে তার কর্নাটাকা রাজ্য দলে জায়গা হারানো, ভারতীয় ক্রিকেটে আরেকটি ম্যাচ খেলার আকুতি, কর্নাটাকা থেকে বিদার্ভায় পাড়ি জমানো এবং দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো, এসব গল্প এখন অনেকেরই জানা।
লম্বা সময় পর ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ফিরেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন তিনি।
দিল্লি আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে এদিন ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলে জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বিদায়ের পর ‘ইমপ্যাক্ট’ বদলি হিসেবে উইকেটে যান কারুন। প্রথম তিন বলে এক রানের পর টানা দুটি চার মেরে ডানা মেলে দেন তিনি। দারুণ সব শটের পসরা মেলে ধরে এগিয়ে নেন ইনিংস।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিনি ঝড় বইয়ে দেন পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর ওপর দিয়ে, দুটি ছক্কার সঙ্গে চার মারেন একটি। ফিফটি পূর্ণ করেন স্রেফ ২২ বলে। ২০১৮ সালের পর আইপিএলে তার প্রথম ফিফটি এটি।
ওই ওভারে মোট ১৮ রান নেন কারুন, আইপিএলে বুমরাহর এক ওভারে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানের যা সর্বোচ্চ।
আগ্রাসী ব্যাটিং অব্যাহত রেখে দ্বিতীয় উইকেটে আবিশেক পোরেলের সঙ্গে ৬১ বলে ১১৯ রানের জুটি গড়েন কারুন। পোরেলের বিদায়ের পর তিনি এগিয়ে যান শতকের দিকে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে থামতে হয় তাকে।
আইপিএলে ১০ আসরে অংশ নিয়ে ৭৭ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ইনিংস এই ৮৯। ২০১৬ আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৩ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা কারুন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন গত কয়েক মাস ধরেই। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারতের আরেক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে বিদার্ভার হয়ে ২৫৫ রান করেন ১৭৭.০৮ স্ট্রাইক রেটে। ছয় ইনিংসের তিনটিতেই করেন ফিফটি।
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দেশটির ৫০ ওভারের ম্যাচের টুর্নামেন্ট ভিজায় হাজারে ট্রফিতে রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দেন তিনি। ফাইনালের আগে ৭ ইনিংসে ৫ সেঞ্চুরি ও ১টি ফিফটিতে তার রান ছিল ৭৫২। স্রেফ একটি ইনিংসে আউট হওয়ায় তার গড়ও ছিল ৭৫২।
ফাইনালে ২৭ রানে আউট হওয়ায় গড় নেমে আসে ৩৮৯.৫০। ১২৪.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৭৭৯ রান করে ‘ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট’ হন তিনিই। এই পরিক্রমায় লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আউট না হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্বরেকর্ড, টানা চার ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তিও গড়েন তিনি।
বিস্ময়কর ওই পথচলায় তাকে আবার জাতীয় দলে ফেরানোর ডাকও ওঠে ওই সময়। সেই সুযোগ যদিও পাননি। তবে তার ব্যাটে রানের জোয়ার থামেনি। প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা রাঞ্জি ট্রফিতে বিদার্ভার শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি ১৬ ইনিংসে চার সেঞ্চুরিতে ৮৬৩ রান করে। চার সেঞ্চুরির তিনটিই করেন শেষ পাঁচ ম্যাচে। ফাইনালে দুই ইনিংস খেলেন ৮৬ ও ১৩৫ রানের ইনিংস।
ওই ফাইনালের পর এই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামলেন কারুন। আইপিএলে ফেরার উপলক্ষটা রাঙিয়ে রাখলেন দুর্দান্ত ইনিংস খেলে।
তার দল যদিও শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ১২ রানে। টানা তিন বলে শেষ তিন উইকেট হারিয়েছে তারা, তিন জনই রান আউট!