পথ ভিন্ন হলেও রাষ্ট্র সংস্কারই সবার লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

“আওয়ামী লীগের মত ফ্যাসিজম যাতে বাংলাদেশে দাঁড়াতে না পারে, সেই আওয়ামী লীগকে বাতিল করা এবং তাদের ফ্যাসিজমকে বাতিল করা বড় সংস্কার,” বলেন ববি হাজ্জাজ।

রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একমত হওয়া বিষয় নিয়ে জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আলী রীয়াজ বলেন, “আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে যে সমস্ত জায়গায় একমত আছে, তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে। জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতির যে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা- সেই দিকে অগ্রসর হতে পারব।

“আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে হয়তো আলোচনা করব। আমরা বিবেচনা করব- কীভাবে এক জায়গায় আসতে পারি।”

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।

একীভূত সুপারিশের কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “তখন স্পষ্ট করতে পারব- কমিশনগুলোর অবস্থান কী, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করব। তার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটা অগ্রসর হবে।”

ছয় মাসের জন্য গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে মাঝ জুলাইয়ে। কমিশন মনে করছে, মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে প্রাথমিক আলোচনা পর্ব শেষ হবে। এরপর তারা পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবেন।

আলোচনা টেবিলের দুইপাশে হলো হলেও দুই পক্ষ নয় মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা সকলেই একপক্ষ। চেষ্টা করছি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। আমাদের লক্ষ্য এক। কিন্তু পথের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্নতা আছে।

“সেটা দূর করে, যে ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনকে দূর করা গেছে, সেই ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারি এবং অগ্রসর হতে পারি। এখনো ঐক্য আছে, মত ভিন্নতা আছে। সেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করা এবং সংস্কার কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।"

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন। এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে দলটির আট সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

বেশিরভাগ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে এনডিএম একমত জানিয়ে ববি হাজ্জাজ বলেন, “আমরা সংস্কারগুলো বড়ভাবে দেখতে চাই। সংস্কারগুলোর মাধ্যমে জনবান্ধন সরকার ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে।

“আওয়ামী লীগের মত ফ্যাসিজম যাতে বাংলাদেশে দাঁড়াতে না পারে, সেই আওয়ামী লীগকে বাতিল করা এবং তাদের ফ্যাসিজমকে বাতিল করা বড় সংস্কার।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।