চাপের মুখে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে জেতালেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার রিতু মনি।
Published : 13 Apr 2025, 10:42 PM
জয়ের জন্য প্রয়োজন ২ রান। ফ্রি হিট পেয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন রিতু মনি। বল সীমানার ওপারে যেতেই ব্যাট ফেলে, হেলমেট খুলে গর্জন ছুড়লেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। ডাগআউট থেকে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থরা। বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দলকে জেতানোর উচ্ছ্বাস বলে কথা!
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে রোববার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রিতুর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ২৩৫ রানের লক্ষ্য ৮ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে নিগার সুলতানার দল।
ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। এই মাঠেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল তারা।
প্রায় ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি করে রেকর্ড গড়া জয়ের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন রিতু। অপরাজিত ইনিংসে ৬১ বলে ৬৭ রান করেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
নবম উইকেটে নাহিদা আক্তারের সঙ্গে মাত্র ৩৪ বলে ৫৪ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি গড়েন রিতু। এটিও বাংলাদেশের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল জাহানারা আলম ও পান্না ঘোষের ৩৭ রান।
বাছাইয়ে পরপর দুই ম্যাচ জিতে শ্রেয়তর নেট রান রেটের সৌজন্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ২৭১ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা।
গত মাসে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন রিতু। গুলশান ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ৮ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৬১ রান করে জাতীয় দলে জায়গাও ফিরে পান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা এবার জাতীয় দলেও টেনে আনলেন রিতু। আগের ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ের সুযোগ পাননি তিনি। এবার দলের চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে ছয় নম্বরে নেমে খেললেন অনবদ্য ইনিংস। ৬ চারের সঙ্গে ম্যাচের একমাত্র ছক্কাটি মারেন তিনি।
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। ২ রানে ড্রেসিং রুমে ফেরেন দুই ওপেনার। তৃতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আগের ম্যাচে রেকর্ড গড়া নিগার সুলতানা ও শারমিন আক্তার।
২৪ রান করা শারমিনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সোবহানা মোস্তারি। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৬৫ বলে ফিফটি করেন নিগার। সবশেষ চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস।
ফিফটির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। একশর আগে ৫ উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
ষষ্ঠ উইকেটে ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন রিতু। ইনিংসের শুরুতে অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও পান তিনি। ব্যক্তিগত ০ ও ৪ রানে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের ক্যাচ ছেড়ে দেন আইরিশ ফিল্ডাররা।
চমৎকার ব্যাটিং করতে থাকা ফাহিমা হুট করেই বিদায় নেন ২৮ রান করে। পরে জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনাকে নিয়ে আরও ৪০ রান যোগ করেন রিতু। মনে হচ্ছিল, সহজেই ম্যাচটি জিতে যাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু সুমনা ও রাবেয়া দ্রুত ফিরলে আবার বাড়ে চাপ। তবে খেই হারাননি রিতু। অন্য প্রান্তে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন নাহিদা। দুজন মিলে রানের চাহিদা মিটিয়ে খেলতে থাকেন।
ব্যক্তিগত ৪৯ রানে আবার জীবন পান রিতু। তখনও জয় থেকে ২০ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দফায় বেঁচে গিয়ে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে সমীকরণ নাগালে নামিয়ে আনে পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
পরের ওভারে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন রিতু। আর ১৭ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাহিদা।
ম্যাচের টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সারাহ ফোর্বসের উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন গ্যাবি লুইস ও এমি হান্টার। ভালো শুরু পেলেও দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭২ রান যোগ করেন ওরলা প্রেন্ডারগাস্ট ও লরা ডেলানি। ৪১ রান করা প্রেন্ডারগাস্টকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রাবেয়া। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৭৫ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন আইরিশদের সাবেক অধিনায়ক ডেলানি।
শেষ দিকে ১৭ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংসে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান আর্লিন কেলি। তবে সেটি জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রাবেয়া। এছাড়া ফাহিমার শিকার ২ উইকেট।
একই মাঠে মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৫/৮ (সারাহ ৪, লুইস ২৪, হান্টার ৩৩, প্রেন্ডারগাস্ট ৪১, ডেলানি ৬৩, পল ১৯, রেইলি ১০, কেলি ২৪*, ক্যানিং ৪, ম্যাগুয়েইর ৮*; মারুফা ৮-১-৩৩-০, নাহিদা ১০-১-৪৫-০, ফাহিমা ৮-০-৫০-২, সুমনা ১০-০-৪২-১, রাবেয়া ১০-০-৩৯-৩, রিতু ৩-০-১৩-০, সোবহানা ১-০-৭-০)
বাংলাদেশ: ৪৮.৪ ওভারে ২৪০/৮ (ইশমা ২, ফারজানা ০, শারমিন ২৪, নিগার ৫১, সোবহানা ৭, রিতু ৬৭*, ফাহিমা ২৮, সুমনা ১৯, রাবেয়া ৫, নাহিদা ১৮*; প্রেন্ডারগাস্ট ৬-১-১৪-২, ম্যাগুয়েইর ৯-১-৪৩-১, কেলি ১০-১-৫৩-২, ক্যানিং ৭-০-৩৫-১, মারে ৯.৪-০-৬৫-১, ডেলানি ৭-০-২৮-১)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রিতু মনি