ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার পথে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ছিলেন লুক জঙ্গুয়ের আদর্শ।
Published : 17 Jan 2024, 03:18 PM
যাকে আদর্শ মেনে বেড়ে ওঠা, সেই ক্রিকেটারের বিপক্ষে জয় সবসময়ই অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম দেয়। লুক জঙ্গুয়েও এখন ভাসছেন আবেগের ভেলায়। শৈশবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ছবি ছিল তার ওয়ালপেপার, এমনকি ফেইসবুক প্রোফাইল পিকচার হিসেবেও। লঙ্কান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকেই তুলাধুনা করে জিম্বাবুয়েকে জঙ্গুয়ে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়। তার জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
কলম্বোতে মঙ্গলবার রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ ওভারে জঙ্গুয়ের বীরত্বেই শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে হারায় জিম্বাবুয়ে। ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় সফরকারীরা।
উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচটিতে শেষ ৬ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। যা অসম্ভব না হলেও সহজ ছিল না। ওভারটি যখন করতে এলেন অভিজ্ঞ ম্যাথিউস, স্বাভাবিকভাবেই নানা ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল জঙ্গুয়ের মনে। শৈশবের ‘হিরো’কে প্রথম বলে ছক্কা মেরে সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন তিনি। পরের দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে জিম্বাবুয়েকে জয়ের কাছে নিয়ে যান জঙ্গুয়ে।
ম্যাথিউসের ওই ওভারে একবার জীবনও পান এই অলরাউন্ডার। চতুর্থ বলে তার ক্যাচ ধরতে পারেননি মাহিশ থিকশানা। শেষ ২ বলে ২ রানের প্রয়োজনে ছক্কা মেরে জিম্বাবুয়েকে স্মরণীয় জয় এনে দেন ক্লাইভ মাদান্ডে।
চলতি সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর একেবারে শেষ দিকে ফল আসা তৃতীয় ম্যাচ এটি; যেখানে প্রথমবার জয়ী দলের বেশে মাঠ ছাড়তে পারে জিম্বাবুয়ে। যার পুরো কৃতিত্বই দুটি করে ছক্কা-চারে ২৫ রান করা জঙ্গুয়ের। ম্যাচ সেরা হন তিনিই।
ম্যাচ শেষে ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বললেন, এই জয় তার জন্য বিশেষ এক পাওয়া। কারণটাও খোলাসা করলেন তিনি।
“গত কয়েক মাস ধরে আমি এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম যেখানে দেশকে জেতাতে পারতাম, এমননি ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজির দলকেও, কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি। খুব কাছে গিয়েও দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারা, বিশেষ করে অ্যাঞ্জেলোর (ম্যাথিউস) বিপক্ষে যাকে আদর্শ মেনে বড় হয়েছি, এই জয় তাই আরও বেশি আনন্দের। বিশেষ কিছু।”
“যখন ছোট ছিলাম, তিনি আমার ওয়ালপেপার ছিলেন। তখন তিনি গ্রে-নিকোলসের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। আমি তখন তরুণ ছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি আমার ফেইসবুকের প্রোফাইল পিকচার ছিলেন। আজকে আমার মধ্যে অনেক কিছু ঘটছে। অনেক আবেগ কাজ করছে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।”
রান তাড়ায় ১৭তম ওভারে ক্রিজে যান জঙ্গুয়ে। তখনও জয় থেকে বেশ দূরেই ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু তাড়াহুড়া করতে চাননি এই অলরাউন্ডার। খেলতে চেয়েছিলেন শেষ ওভার পর্যন্ত। আর সেই পরিকল্পনাই কাজে দিয়েছে বলে জানালেন তিনি।
“আমি জানতাম তাদের একটি ওভার অন্য কাউকে দিয়ে করাতে হবে, কারণ চামিরা ও মাদুশাঙ্কার ওভার শেষ হয়ে গিয়েছে। মনস্থির করি, তাদের বিপক্ষে কোনো ঝুঁকি নেব না। শেষ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং নিজেকে সেরা সুযোগটি দেব।”
“সত্যি বলতে, আমার মনে হয় (এক ওভারে) ২০ রান অনেক। পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হয়ে ওঠে-শ্রীলঙ্কা ২৫ রানে (আসলে ২৭) ৪ উইকেট হারায়, আমাদের চাওয়া ছিল তাদের ১৪০ রানের মধ্যে আটকে রাখা। কিন্তু যখন শেষ দিকে আমরা বোলিং করি…আমাদের মনে হয়, উইকেটে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে। খুব ভালোভাবে বল ব্যাটে আসতে শুরু করেছে। আমরা জানতাম, উইকেট ধরে রাখতে হবে, দলকে জেতাতে হলে জুটি গড়ার চেষ্টা করতে হবে।”
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগামী বৃহস্পতিবার মাঠের লড়াইয়ে নামবে দুই দল।