এই নিয়ে এ বছর সাতবার ব্যাটিং তাণ্ডবে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারের মধ্যেই ফিফটি করে ফেললেন ট্রাভিস হেড, ইংল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 12 Sep 2024, 10:16 AM
ইনিংসের পরিষ্কার দুটি ভাগ। প্রথম ৫.৫ ওভারে রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৬। কারণ ট্রাভিস হেড নামের এক ব্যাটসম্যান যে তখন ব্যাটকে মুগুর বানিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এরপর তার বিদায়। পরের ১৩.৪ ওভারে ৯৩ রান তুলতেই নেই ১০ উইকেট!
জিততে তবু সমস্যা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ২০০ রানের সম্ভাবনা জাগিয়ে ১৮০ রানও করতে পারেনি তারা। কিন্তু বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে সেই স্কোরই যথেষ্ট হয়েছে জয়ের জন্য। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ইংল্যান্ডকে ২৮ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেছেন হেডরা।
সাউথ্যাম্পটনে বুধবার ট্রাভিস হেড ও ম্যাথু শর্টের উদ্বোধনী জুটির টর্নেডোর পর খেই হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ১৭৯ রানে।
২৩ বলে ৫৯ রানের ইনিংসের পথে হেড ফিফটি করেন ১৯ বলে। এই বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই নিয়ে সাতবার পাওয়ার প্লের ভেতরেই পঞ্চাশে পৌঁছে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
তার ইনিংসে চার ৮টি, ছক্কা চারটি। মানে ৫৯ রানের ৫৬ এসেছে বাউন্ডারি থেকেই।
রান তাড়ায় ইংল্যান্ড সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। চোট পাওয়া অধিনায়ক জস বাটলারকে ছাড়া ও তিন অভিষিক্ত নিয়ে খেলতে নামা দলটি গুটিয়ে গেছে ১৫১ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ঝড়ের শুরুটা করেন ম্যাথু শর্ট। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে তিন ম্যাচের দুটিতে শূন্য রানে আউট হওয়া তরুণ ওপেনার জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বদলে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগান শর্ট। দ্বিতীয় ওভারে রিস টপলিকে টানা দুটি ছক্কায় ওড়ান তিনি পুল শটে।
এরপর হেড আবির্ভুত হন তার চেনা চেহারায়। জফ্রা আর্চারের চার বলের মধ্যে তিনটি বাউন্ডারির পর স্যাম কারানকে তিনি স্রেফ গুঁড়িয়ে দেন। বাঁহাতি পেসারের এক ওভারে ৩০ রান নেন তিনি তিনটি করে ছক্কা ও চারে।
ষষ্ট ওভারে সাকিব মাহমুদকে ছক্কা মেরে হেড পৌঁছে যান পঞ্চাশে। ওই ওভারে আরও দুটি বাউন্ডারি মেরে ওভারের শেষ বলে শেষ হয় তার আগ্রাসন।
৬ ওভারে দলের রাত তখন ৮৬।
পরের ওভারে আক্রমণে আসা আদিল রাশিদ দ্রুত ফিরিয়ে দেন তিনে নামা অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মিচেল মার্শকে।
শর্ট তখনও ক্রিজে। ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ১১৮। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোন ও রাশিদের জোড়া স্পিন আক্রমণে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। দুজন মিলে সাত ওভারে ৪৫ রান দিয়ে উইকেট নেন চারটি।
চারে নামা জশ ইংলিস অনেকটা সময় এক প্রান্তে কাটিয়ে ২৭ বলে করেন ৩৭। পরের সাত ব্যাটসম্যানের কেউ ১৫ রান পর্যন্ত যেতে পারেননি।
লিভিংস্টোনকে ছক্কা মারার পরের বলে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় আউট হন মার্কাস স্টয়নিস। আগ্রাসী টিম ডেভিড এলবিডব্লিউ হন প্রথম বলেই।
১৫ ওভারের পর কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ানরা।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে উইল জ্যাকসকে হারায় ইংল্যান্ড। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফিল সল্ট ও অভিষিক্ত জর্ডান কক্স পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের সামনে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তারা। পাওয়ার প্লের মধ্যেই বিদায় নেন দুজন। চারটি চারে ১২ বলে ২০ করেন সল্ট, ১২ বলে ১৭ কক্স।
এমনিতে ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করলেও এ দিন চারে নেমে খেলছিলেন ভালোই। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানরা কেউ সুবিধা করতে পারেননি। অ্যাডাম জ্যাম্পা ও শট অ্যাবট চেপে ধরেন ইংলিশদের।
চোটের কারণে বোলিং করতে না পারলেও স্রেফ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে নামা জেমি ওভারটন ফেরেন ১৫ রানে। ২৭ বলে ৩৭ রান করা লিভিংস্টোন যখন স্টাম্পে টেনে আনেন জশ হেইজেলউডের ডেলিভারি, ইংল্যান্ডের সম্ভাবনাও একরকম শেষ হয়ে যায়।
জয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একটু অস্বস্তি, সাইড স্ট্রেইন নিয়ে বোলিং শেষ করতে পারেননি পেসার জেভিয়ার বার্টলেট। তার 'কাভার' হিসেবে ওয়ানডে সিরিজের জন্য দলে ডাক পেয়েছেন বাঁহাতি পেসার বেন ডোয়ার্শিস।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ কার্ডিফে শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ১৯.৩ ওভারে ১৭৯ (শর্ট ৪১, হেড ৫৯, মার্শ ২, ইংলিস ৩৭, স্টয়নিস ১০, ডেভিড ০, গ্রিন ১৩, অ্যাবট ৪, বার্টলেট ০, জ্যাম্পা ৫, হেইজেলউড ২*; আর্চার ৩.৩-০-৩১-২, টপলি ১-০-১৫-০, সাকিব ৩-০-২১-২, কারান ২-০-৩৫-১, রাশিদ ৪-০-২৩-১, বেথেল ৩-০-২৮-০, লিভিংস্টোন ৩-০-২২-৩)।
ইংল্যান্ড: ১৯.২ ওভারে ১৫১ (সল্ট ২০, জ্যাকস ৬, কক্স ১৭, লিভিংস্টোন ৩৭, বেথেল ২, কারান ১৮, ওভারটন ১৫, আর্চার ৪, রাশিদ ৭, সাকিব ১২, টপলি ১*; বার্টলেট ৩.৪-০-২৬-১, হেইজেলউড ৪-০-৩২-২, অ্যাবট ৩.২-০-২৮-৩, গ্রিন ১.২-০-১৪-১, জ্যাম্পা ৪-০-২০-২, স্টয়নিস ৩-০-৩০-১)।
ফল: অস্টেলিয়া ২৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রাভিস হেড।