বাংলাদেশ ক্রিকেট
সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলে পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
Published : 12 Aug 2024, 02:47 PM
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে লম্বা বিরতির পর বাংলাদেশ দলের সামনে এখন টেস্ট ক্রিকেটের ব্যস্ততা। বছরের শেষ পাঁচ মাসে ৮টি টেস্ট খেলবে তারা। সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এসব ম্যাচে সাকিব আল হাসানের খেলা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। তা দূর করে দিলেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে সাকিব বলেছিলেন, আপাতত পাকিস্তান সফর পর্যন্ত খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এরপরের সিদ্ধান্ত পরে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য নির্বাচকদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরে সবগুলো টেস্ট খেলবেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
পাকিস্তান সফরের দল ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিবকে পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া সব প্রশ্নের উত্তর দেন গাজী আশরাফ।
“আমাদের সামনে যে ৮টি টেস্ট আছে, ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিয়ে শেষ হবে, সবগুলোতে তিনি (সাকিব) খেলার জন্য থাকবেন এবং তিনি নিয়মিতভাবে অনুশীলন সেশনে আসবেন। প্রত্যেক ক্রিকেটার ও সবারই নিরাপত্তার বিষয় থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সেটা তো দেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।”
গত কয়েকদিনের বাস্তবতায় অবশ্য সাকিবের পাকিস্তান সফরের দলে থাকা নিয়েও তৈরি হয় নানান গুঞ্জন। বিশেষ করে পতন হওয়া শেখ হাসিনা সরকারের একজন সংসদ সদস্য হওয়ায় তার দেশে ফেরা এবং ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলা নিয়েও গুঞ্জনের ডালপালা ছড়ায় অনেক।
দল নির্বাচনের সময় নির্বাচক কমিটিকেও ছুঁয়েছে সেসব আলোচনা। তবে সব বিষয় আলাদা রেখে ক্রিকেটার সাকিবের সামর্থ্যে আস্থা রেখেই তাকে দলে নেওয়ার কথা বললেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক।
“সাকিব আল হাসান অবশ্যই বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার। দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা নির্বাচকরাও ভেবেছি, অনেক ইস্যু ছিল। কারণ তিনি ক্রিকেটারের পাশাপাশি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমরা সেটা ভেবেছি।”
“তবে তাকে দলে নেওয়া হয়েছে খেলার মেধার ভিত্তিতে। তার মেধার জায়গাটাকেই আমরা সমুন্নত রেখেছি। প্রত্যেক ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই এটা হয়। সেটা বিবেচনা করেই তিনি দলে আছে। আগামীতেও যদি আমরা নির্বাচক কমিটিতে থাকি, মেধাকেই গুরুত্ব দেব।”
সাকিবের সামর্থ্যের জায়গা নিয়েও অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে ধরা পড়ে তার চোখের সমস্যা। এরপর থেকে স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট ও কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে পেসারদের বিপক্ষে সাকিবের দুর্বলতা ফুটে ওঠে প্রকটভাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তাই প্রশ্ন ওঠে, সাকিবকে শুধু বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা? উত্তরে গাজী আশরাফ জানান, পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবেই দলে সাকিব।
“আমাদের চিকিৎসা বিভাগ থেকে আমরা এমন কোনো বার্তা পাইনি, যেখানে চোখের সমস্যার কারণে তাকে দলভুক্ত করা যাবে না। বিশ্ব যেখানে তাকে সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসেবে স্বীকার করছে, আমিও সেই মতের সঙ্গেই আছি। গত ২৫ বছরের হিসেব করলেও সে থাকবে। (সাকিবকে) শুধু বোলার হিসেবে ধরব, সেই দুঃসাহস আমার নেই।”
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচ খেলতে সোমবার দুপুরে দেশ ছাড়ছে বাংলাদেশ। তবে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না সাকিব। সরাসরি দলের সঙ্গে পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার। রাওয়ালপিন্ডিতে আগামী ২১ অগাস্ট শুরু হবে প্রথম টেস্ট।
এই সিরিজের দলে পরিবর্তন নেই তেমন। আঙুলের চোটে ফেরা মুশফিকুর রহিমকে জায়গা করে দিতে বাদ পড়েছেন শাহাদাত হোসেন। এছাড়া দলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। আপাতত বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে আছেন শাহাদাত।
প্রধান নির্বাচন বলেছেন, ‘এ’ দলের হয়ে ভালো করে আবার জাতীয় দলের বিবেচনায় আসতে পারেন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
“শাহাদাত আমাদের ভাবনায় আছে। তিনি ‘এ’ দলের হয়ে এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন, দুটি দীর্ঘ সংস্করণের ম্যাচে অংশগ্রহণ করছেন। (জাতীয় দলে) মিডল-অর্ডারে এখন জায়গা নেই। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, লিটন কুমার দাসরা আছে। তাই দূর্ভাগ্যবশত... ১৭ জনের দল হলে তাকে হয়তো রাখতে পারতাম। আমার মনে হয়েছে, দলে রাখার চেয়ে তিনি যদি ‘এ’ দলের হয়ে আরও পরিপক্ক হন, তাহলে যেকোনো সময় অন্য ক্রিকেটারের জায়গায় আসতে পারবেন।”
চলতি বছরের বিপিএল চলাকালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন তাসকিন। এবার নিজ থেকেই সাদা পোশাকে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি, জানালেন প্রধান নির্বাচক।
“তাসকিন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন, জাতীয় দলের হয়ে আবার টেস্ট ম্যাচ খেলতে চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা তাকে দলভুক্ত করেছি। এজন্য ১৫ জনের বদলে ১৬ জন নিয়েছি আমরা। তাসকিনকে আমরা পাকিস্তানে ’এ’ দলের যে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচটি, সেখানে ছেড়ে দেব। ওই ম্যাচে ফিটনেস কোন সমস্যা না হলে তিনি হয়তো দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশের বিবেচনায় থাকবেন।”
এসময় আসে তামিম ইকবালের প্রসঙ্গ। গত বছর ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজের পর থেকে জাতীয় দলের বাইরে তিনি। ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার না থাকা নিয়ে তোলপাড় হয় দেশের ক্রিকেটে। এরপর আরও অনেক সিরিজ হলেও কোনোটিতেই দেখা যায়নি তাকে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন বেশ কয়েকবারই বলেছেন, তামিমের সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সেই বৈঠকের কোনো আভাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গাজী আশরাফ নিজেই সরাসরি কথা বলে তামিমের অবস্থান জানার আভাস দিয়েছেন।
“তামিমের ক্ষেত্রে আগে বিষয়টা ছিল, আমরা জানতাম প্রেসিডেন্ট সাহেবের সঙ্গে তামিম ইকবালের একটা বৈঠক হবে। এরপর এই ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা আমাদের কাজটা শুরু করতে পারব। এখন যেহেতু অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে, সেই আলোকে তামিম ইকবালের সঙ্গে কথা বলে অন্তত তার মতামতটা জানার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই।”