ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা
শেষ টেস্টে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ১২৫ রানে, হাতে আছে ৯ উইকেট।
Published : 09 Sep 2024, 12:58 AM
সকালটা শ্রীলঙ্কার জন্য ছিল হতাশাময়। তবে দিন শেষে নিশ্চয় তাদের মুখে চওড়া হাসি। ওভাল টেস্টে আরেকটি স্বপ্নময় দিন কাটাল লঙ্কানরা। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দারুণ এক জয়ের দুয়ারে নিসাঙ্কা-ধানাঞ্জয়ারা।
সিরিজের তৃতীয় টেস্ট জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ১২৫ রান। হাতে উইকেট আছে ৯টি।
শেষ ইনিংসে ২১৯ রানের লক্ষ্যে পাথুম নিসাঙ্কার আগ্রাসী ফিফটিতে তৃতীয় দিন শেষে সফরকারীদের রান ১ উইকেটে ৯৪।
আলোকস্বল্পতায় টানা তৃতীয় দিন খেলা শেষ হয়েছে আগেভাগে। এদিন আকাশ ছিল কখনও মেঘলা, কখনও হয়েছে বৃষ্টি, আবার কখনও দেখা গেছে ঝলমলে রোদ।
সহায়ক কন্ডিশনে দারুণ বোলিং করেন শ্রীলঙ্কার চার পেসার। তাতে পুড়ে অঙ্গার হয় ইংলিশ ব্যাটিং। একটা পর্যায়ে ৭ উইকেটে ৮২ থেকে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৫৬ রানে। জেমি স্মিথ একাই করেন ৬৭। প্রথম ইনিংসে ৬২ রানের লিড থাকায় কোনোমতে শ্রীলঙ্কাকে দুইশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিতে পারে তারা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন স্কোর এটি। এই ওভালেই ১৯৯৮ সালে ১৮১ ছিল আগের সর্বনিম্ন।
ওই ম্যাচ ১০ উইকেটে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তারপর এই প্রথম ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলছে তারা। আরেকটি স্মরণীয় জয়ের হাতছানি তাদের সামনে।
দ্বিতীয় ইনিংসে লাহিরু কুমারা ও ভিশ্ব ফার্নান্দো মিলে ভাগ করে নেন ৭ উইকেট। কুমারার প্রাপ্তি ২১ রানে ৪টি।
ব্যাটিংয়ে দিনের শুরুটা শ্রীলঙ্কার জন্যও ভালো ছিল না। তৃতীয় দিনের ৫ উইকেটে ২১১ রান নিয়ে রোববারের খেলা শুরু করে ২৬৩ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের প্রথম ইনিংস। ৪৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা।
আগের দিন ৬৪ রানে অপরাজিত ধানাঞ্জয়া ডি সিলভাকে (৬৯) দিনের শুরুতেই শর্ট বলে বিদায় করে দেন অভিষিক্ত জশ হাল। ৫৪ রান নিয়ে ব্যাটিং শুরু করা কামিন্দু মেন্ডিস যোগ করতে পারেন আর ১০ রান। ক্রিস ওকসের দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। এরপর বাকিরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
৩টি করে উইকেট নেন হাল ও অলি স্টোন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বাজে শট খেলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বেন ডাকেট। প্রথম ইনিংসে দেড়শ করা অলিভার পোপ এবার থামেন ডাকেটের মতোই ৭ রানে। লাহিরু কুমারার বল স্টাম্পে টেনে আনেন ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা ড্যান লরেন্স দারুণ কয়েকটি বাউন্ডারি মারেন বটে, তবে যথারীতি ইনিংস টেনে নিতে পারেননি (৩৫)। কুমারার বলেই কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি।
লর্ডসে জোড়া সেঞ্চুরি করা জো রুট এবার ব্যর্থ দুই ইনিংসেই। নিজের পরপর দুই ওভারে রুট ও হ্যারি ব্রুককে এলবিডব্লিউ করে দেন ভিশ্ব। ক্রিস ওকস ও গাস অ্যাটকিনসনও টিকতে পারেননি।
একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ৬৬ রানে থাকা ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৮২! আগের দিন প্রথম ইনিংসে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল তারা ৬৪ রানে।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন স্মিথ। অষ্টম উইকেটে স্টোনের সঙ্গে গড়েন ৫৮ রানের জুটি, যেখানে স্মিথ একাই করেন ১৯ বলে ৫২।
স্মিথকে থামিয়ে জুটি ভাঙেন ভিশ্ব। কিপার-ব্যাটসম্যানের ৫০ বলে ৬৭ রানের ইনিংস গড়া ১০ চার ও এক ছক্কায়। এরপর দ্রুত বাকি দুই উইকেট নিয়ে ইংলিশদের গুটিয়ে দেয় লঙ্কানরা।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে দুটি চার মেরে শুরু করেন নিসাঙ্কা। তবে দিমুথ কারুনারাত্নে এবারও যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ওকসকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। এদিন ৮ রান করার পথেই শ্রীলঙ্কার চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাবেক অধিনায়ক।
এরপর কুসাল মেন্ডিসকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন নিসাঙ্কা। ফিফটি করেন তিনি ৪২ বলে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করেছিলেন ৪০ বলে।
৪৪ বলে ৭ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত আছেন নিসাঙ্কা। ২৫ বলে ৬ চারে ৩০ রানে খেলছেন মেন্ডিস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৫
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬১.২ ওভারে ২৬৩ (আগের দিন ২১১/৫) (ধানাঞ্জয়া ৬৯, কামিন্দু মেন্ডিস ৬৪, রাত্নায়েকে ৭, ভিশ্ব ০, কুমারা ৫*, আসিথা ১১; ওকস ১৩-৫-৪২-২, অ্যাটকিনসন ৯-১-৪৬-০, হাল ১১-০-৫৩-৩, স্টোন ৯-৩-৩৫-৩, বাশির ১১.২-০-৩৭-১, লরেন্স ৬-০-২৯-০, রুট ২-০-১১-০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩৪ ওভারে ১৫৬ (ডাকেট ৭, লরেন্স ৩৫, পোপ ৭, রুট ১২, ব্রুক ৩, স্মিথ ৬৭, ওকস ০, অ্যাটকিনসন ১, স্টোন ১০, হাল ৭*, বাশির ৪; আসিথা ১২-২-৪৯-২, রাত্নায়েকে ৭-০-৪৩-১, কুমারা ৭-১-২১-৪, ভিশ্ব ৮-১-৪০-৩)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২১৯) ১৫ ওভারে ৯৪/১ (নিসাঙ্কা ৫৩*, কারুনারাত্নে ৮, কুসাল মেন্ডিস ৩০*; ওকস ৬-০-৩২-১, অ্যাটকিনসন ৪-০-২৪-০, হাল ৩-০-২৫-০, স্টোন ১-০-৫-০, বাশির ১-০-৭-০)